ইউরেনিয়াম বিষয়ে আমার ছোট অস্বস্তি আছে
ফিরোজ আহমেদ
ইউরেনিয়াম দূষণ ঘটেনি, সরকারি সংস্থার এই দাবিতে সত্যিই কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছি, কিন্তু পুরোটা হইনি। কারণটা শেষে বলছি, আগে বলি বিপদাপন্ন হবার মাত্রায় ইউরেনিয়াম না থাকলেও আর যা নিশ্চিতভাবেই ঘটেছে, সেগুলো বিষয়ে।
কালকের টকশোতে ভূ-তত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরুল ইমাম যা বললেন, তার একটা দিক হলোÑ মেঘালয়ে ইউরেনিয়াম খনি আছে। সেগুলো উত্তোলনের জন্য নানান খোড়াখুড়ি চলছে। এই খুড়ে রাখা (উন্মুক্ত খনি) গর্তগুলো থেকে দূষণে মেঘালয় আক্রান্ত হয়েছে আগেই, সেখানে এই নিয়ে রীতিমতো জনবিক্ষোভ আছে। আমাদের এই নিয়ে সঙ্গতকারণেই উদ্বিগ্ন হবার প্রয়োজন আছে, কেননা ইউরেনিয়াম খনি যদি পুরোদমে কাজ শুরু হয়, তার পরিণাম আমাদের জন্য ভয়াবহ হতে পারে। ভারতের উড়িষ্যাতেই একটি বিশাল নদী দূষিত হয়েছে ইউরেনিয়ামের কারণে। তিনি আরও বললেন আসাম ও মেঘালয়ের কয়লাখনিগুলো দূষণের কথাও। এই দূষণের ফলে আমাদের নদী দিয়ে কয়লাজাত বর্জ্যগুলো বিপুল পরিমাণে আসছে।
ম ইনামূল হক জানালেন, এমনিতেই হাওর বিরাট পরিমাণ লুটপাট আর অব্যবস্থপনার কারণে হুমকির শিকার। কিন্তু এই কয়লার দূষণেও হাওরে মাছের উৎপাদন বিরাট পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। উল্লেখ্য যে, তিনি হাওর উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক। অধ্যাপক আবদুস সালাম একজন রসায়নবিদ এবং দূষণ বিশেষজ্ঞ। তিনি জানালেন, ইউরেনিয়াম আর কয়লাখনি থেকে বিপুল পরিমাণে সালফার, পারদ আর ইউরেনিয়াম নির্গত হয়। এই পারদও খুব ভয়াবহ ভূমিকা রাখতে পারে।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন যে বিষয়টাতে গুরুত্ব দিলেন, সেটা হলো আমরা আমাদের সীমান্তে কী ঘটছে তা মাত্র জানছি কেন? এটা তো রাষ্ট্রনীতির অংশ হবার কথা ছিল। কী কী দূষণ সেখান থেকে আসছে, তার প্রভাব কী, সেই বিষয়ে আমরা কেন কোনো সমন্বিত ব্যবস্থা নিচ্ছি না। পারদ হোক, ইউরেনিয়াম হোক, ধান পচে গ্যাস হোক, এগুলোর বিষয়ে আমাদের কোনো সমন্বিত ব্যবস্থা কেন নেই, যেখানে উপযুক্ত জনবলের অভাব নেই, এমনকি বিশেষজ্ঞরা যেখানে স্বেচ্ছাসেবা দিতেও রাজি আছেন।
ইউরেনিয়াম বিষয়ে আমার ছোট অস্বস্তি আছে। সেটা হলো, ভারত পাঞ্জাবের মতো প্রভাবশালী রাজ্যে এর ভয়াবহ প্রভাব দশকের পর দশক ধরে লুকিয়ে এসেছে, গোপন করেছে, অস্বীকার করেছে। যে অজস্র শিশু এর কারণে বিকলাঙ্গ আর প্রতিবন্ধী হয়েছে, তাদের চিকিৎসসেবা দেওয়া চিকিৎসকদের হুমকি দিয়েছে। এগুলো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসেছে, গার্ডিয়ানেও। ফলে রাষ্ট্রের প্রতি ষৌল আনা বিশ্বাস আনার সুযোগ নেই।
লেখক: কেন্দ্রীয় সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন