কতটা দুর্যোগ হলে তারা এটাকে দুর্যোগ বলবে?
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ
হাওর অঞ্চলে যে ক্ষতি হয়েছে তা আসলে টাকার অংক দিয়ে বোঝানো যাবে না। এই ক্ষতিটা হবে খাদ্য সরবরাহ, খাদ্য নিরাপত্তা, খাদ্যের দাম এবং ওইখানকার কৃষকদের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবে, ঋণগ্রস্ততা বাড়বেÑ সব মিলিয়ে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ফসলের ক্ষতির চাইতে অনেকগুন বেশি চাপ পড়বে জাতীয় অর্থনীতি এবং কৃষকদের জীবন-জীবিকায়। দুর্গত এলাকা ঘোষণা করলে সরকারের ভূমিকার কি পরিবর্তন হবে আমি জানি না। মূল কথা হচ্ছেÑ ওই অঞ্চলটা যে একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছে, সেটা সরকারকে স্বীকার করতে হবে। স্বীকার করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরকারের মধ্যে সবসময় একটা অস্বীকৃতির রোগ আছে। বাস্তবতা অস্বীকার করার একটা প্রবণতা আছে, এটাকে রোগই বলতে পারি। যেটা বাস্তব ঘটছে সেটাকে অস্বীকার করার কারণেই সমস্যাগুলো আরও বাড়ে। তার চেয়ে যে ক্ষতি হয়েছে সেগুলো স্বীকার করে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করাটাই দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
কতটা দুর্যোগ হলে তারা (দুর্যোগ মন্ত্রণালয়) এটাকে দুর্যোগ বলবে? দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের কাজই হলো এই যে, সমস্যাটা তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলা করা, স্বীকার করা। স্বীকার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তাদের দায়িত্বের অবহেলার কারণেই বর্তমান সমস্যার জন্য অনেকখানি দায়ী। সেখানে যে অবকাঠামো ছিল সেটা ঠিকমতো কাজ করেনি, প্রয়োজনীয় পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। এসব কারণেই সমস্যাটা বেড়েছে। এই ব্যাপারটা স্বীকার না করার পরিণতি হবে, মানুষের দুর্ভোগ এবং জাতীয় সম্পদের যে ক্ষতি হয়েছে সেটা আরও বাড়বে। দুর্নীতি একটা বড় ধরনের অর্থনৈতিক তৎপরতায় পরিণত হয়েছে। দুর্নীতিটাই এখন প্রধান অর্থনৈতিক তৎপরতা। সেটা তো আগে বোঝা যায় না, কাজের ফলাফল এলেই তা বোঝা যায়। সেতু যখন ভেঙে পড়ে তখন বোঝা যায়, রাস্তা যখন ভেঙে পড়ে তখন বোঝা যায়।
দুর্নীতিকে মোকাবিলা করার জন্য যে ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া দরকার, একটা জায়গায় কতটা খরচ হলো সেটার তদারকি করা, যাদের কাজ দেওয়া হয় তারা কতটুকু কাজ করল সেগুলোর মধ্যেই প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা আছে। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি আছে এবং কমিশন ভোগীদের আধিপত্য আছে। সেই জায়গাগুলো ঠিক না করলে এ রকম ফলাফল বারবার দেখা দিবে। এতে লাভ হয় কিছু লোকের কিন্তু ক্ষতি হয় পুরো দেশের।
পরিচিতি: অর্থনীতিবিদ
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি/সম্পাদনা: আশিক রহমান