বিকজ হাওর ইস নট দ্যাট সেক্সি
যায়নুদ্দিন সানী
সো? কেমন আছেন? খবরের বেশ আকাল চলছে, তাই না? আসলে রাজনীতিতে উত্তাপ না থাকলে খবর হয় না। ওদিকে হাসান মাহমুদ সাহেবও অনেকদিন তেমন কিছু বলছেন না। বিএনপি তো ‘আল্লাহ্ ভরসা’ মোডে। জামায়াত নিয়ে কিছু বলছি না, সম্ভবত পোড়ামাটি নীতিতে চলছে। বামদের নিয়ে? বলতে আপত্তি নেই, বাট কোনটাকে নিয়ে বলব? সাকি? ইনু? মেনন? না সিপিবি? আরও আছে? সাম্যবাদী, ফাম্যবাদী এসব? মাফ চাই। সবার খবর সম্ভবত গুগলও রাখে না। তার চেয়েও বড় কথা বলার মতো তেমন কিছু নেইও। ওই মাঝে মাঝে সুন্দরবন নিয়ে ফাল পাড়া। আনু সাহেবের এক আধটা কলাম। কিছু নাস্তিকের বিদেশ পলায়ন কিংবা হুমকি খাওয়া। আর ইনু সাহেবের খালেদা জিয়া বন্দনা। যদিও বলার অনেক কিছু আছে, আসলে সবকিছুই রিপিটেশান। নো নিউ নিউজ। সেই চর্বিত চর্বণ করতে গেলে আপনিও যেমন বিরক্ত হবেন, আমিও। সো, ওদেরকে আপাতত খেলায় নিচ্ছি না, ওকে?
তাহলে? শামীম ওসমান সাহেবের হুমকি? ওটা একদিন খবর হওয়ার মতো টপিক, তাও আবার এক কলামের। অ্যান্টি আওয়ামী পত্রিকা হলে দুকলাম দিতে পারেন। সেই আঙুল দেখিয়ে শাসানো ছবি না দিয়ে মাথায় টুপি পরা ছবি অনেকে দিয়েছে দেখলাম। বরং বলতে পারেন, এটাই বড় খবর। অনেকদিন পরে, তার সম্পর্কিত নিউজে, ছবির পরিবর্তন। বাকি সবকিছু আগের মতোনই। দু-একদিন ঘ্যান ঘ্যান, অ্যান্ড, কিসসা খতম।
সাক্কু? ওটা তো জানা কথাই। বেচারা হারলে বরং বেঁচে যেত। জিতে গিয়েই বেচারা নিজের পায়ে কুড়ালটা মারল। কি আর করা, নাও ফেস দ্য মিউজিক। কিছুদিন জেল, এরপরে বরখাস্ত অ্যান্ড ‘এরপরে কুমিল্লাবাসী সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে থাকল’ টাইপ এন্ডিং। পরিচিত স্ক্রিপ্টের নবতম মঞ্চায়ন। সো, এটাকেও ঠিক খবর বলতে মন চাইছে না।
রানা প্লাজার বার্ষিকী? তাও চার বছর পরে? পাগল হয়েছেন? দুঃখিনী গার্মেন্টস কর্মচারীর করুণ গাঁথা নিয়ে রিপোর্ট করেছেন কি মরেছেন। কেউ পড়বে না। অনলাইনে প্রকাশ করেছেন কি হিট পাবেন না। ফেসবুকে কিংবা ব্লগে? তথৈবচ। নো শেয়ার, নো লাইক। তারপরও কিছু গাধা দেখলাম ট্রাই করেছে। সেই পুরনো ছবিগুলো শেয়ার করে সেন্টিমেন্ট চাগানোর চেষ্টা আর কি। লাভ হয়নি। আসলে নেহাত কড়া ঝাঁঝের খাবার না হলে এত পুরনো খাবার বাঙালি খায় না। দেখেন না, একসময়ের সাগর-রুনিই এখন কেমন ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে গেছে। অতদূর কেন যাচ্ছি, তনু হত্যা? কত হিট করেছিল, আর এখন? কিছুদিন আগেই তো বার্ষিকী হলো, কোনো এক্সাইটমেন্ট ছিল? এটাই বুঝতে হবে।
হাওর? ইনফ্যাক্ট অনেকদিনই তো হলো। বলতে গেলে চেষ্টাও কম হয়নি। তারপরও খবরটা সেই অর্থে কিন্তু হিট করল না। যেভাবে শিরোনামে থাকার কথা ছিল, টক অফ দ্য টাউন হওয়ার কথা ছিল, সেভাবে কিন্তু হলো না। পাবলিক খেল না। ফেসবুকে, ব্লগে পোস্ট খুব খারাপ হয়নি। ‘একটাও ছাগল মরেনি’ নিউজ হিসেবে বেশ ভালোই ছড়িয়েছিল। মৃত মাছ কিংবা গবাদির ছবিগুলোও প্রায় প্রতিদিনই নিউজ ফিডে আসছিল। সো, প্রচারণা কিন্তু কম পায়নি। তারপরও হলো না। সোজা কথায়, পাবলিক খেল না। কেন?
গরিব-দুঃখীর ঘ্যান ঘ্যান করা দুঃখগাঁথা শুনতে আমরা খুব একটা আগ্রহী না। খবরে কিছুটা মশলা চাই, এক্সাইটমেন্ট চাই, সোজা কথা খবর হতে হবে সেক্সি। ‘হাওরনামা’য় এমন কিছুই ছিল না। ভ্রু কুচকাচ্ছেন কেন? ওকে, আই এগ্রি। একেবারেই ছিল না বলাটা ভুল হলো। আসলে কিছুটা ছিল। ইয়েস, ইউ আর ব্যাং অন টার্গেট। দ্যাট দশ কোটি টাকার হিসেবে না পাওয়া। বাট ওটাতে হয়? হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির খবর হজম করা বাঙালির জন্য দশ কোটি কোনো ব্যাপার?
সুনামগঞ্জের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা যে খবর হিসেবে পানসে, কিংবা পাবলিক খাবে না, এ নিয়ে আমার তেমন কোনো সন্দেহ ছিল না। বস্তি পুড়ে যাওয়া কিংবা রানা প্লাজা মার্কা খবর প্রথমবার হিট করে, তবে পরের বার না। তাজরিন আসলে হিট করেছিল নতুনত্বের জন্য, ‘জীবন্ত আগুনে পোড়া’। দ্যাট ওয়াজ কোয়াইট এক্সাইটিং। সো, মোদ্দাকথা, হাওরের মানুষের জন্য কেঁদে লাভ নেই। ও নিয়ে শিরোনাম করেছেন কি পত্রিকার সারকুলেশান শিকায় উঠবে, আর অনলাইন হলে হিট কমে যাবে। ফেসবুকে লাইকও জুটবে না, শেয়ারও পাবেন না। সো, লুক ফর সেক্সি নিউজ।
ফ্রান্সের নির্বাচন? ট্রাই করতে পারেন। শহুরে আঁতেল খাবে। ব্রিটেনের স্ন্যাপ পোল? সেটাও চলবে। করবিনকে নিয়ে দুকলম লিখে প্রমাণ করতে পারেন আপনি বিশ্ব রাজনীতির কতবড় বোদ্ধা। ভেনিজুয়েলা কিংবা সিরিয়া, ট্রাম্প কিংবা পুতিন, উত্তর কোরিয়া কিংবা চীন… যেকোনোটাই ট্রাই করতে পারেন। পাঠক আছে। আর দেশে যদি থাকতে চান, আওয়ামী হেফাজত সখ্য নিয়ে লিখতে পারেন। যদিও চার্ম কমে এসেছে, স্টিল ইট ইজ হট। আসলে রিয়েল সেক্সি কোনো খবরের অভাবে যা হয়, নববর্ষ উদযাপন কিংবা মঙ্গল শোভাযাত্রা, হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি, ঈমানি দায়িত্ব কিংবা আফসান সাহেবের ‘বাঙালি না হলে দেশ ছেড়ে চলে যান’ টাইপ খবর এখনো করে কম্মে খাচ্ছে। দেখা যাক সামনের দিনগুলোতে কি হয়।
এনিওয়ে, হাওর নিয়ে যারা এখনো ট্রাই করছেন, কত বরাদ্দ হলো, কয়মাস চাল দেওয়া হবে কিংবা ইউরেনিয়াম নিয়ে এখনো ট্রাই করে যাচ্ছেন, তাদের জন্য বেস্ট অফ লাক। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ বরং অনেক বেশি এক্সাইটিং নিউজ। একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করেছেন? সুন্দরবন বাঁচাতে শোভাযাত্রা হলেও, এদেশের জনগণ বাঁচাতে শোভাযাত্রা নেই। মূর্তিকে বোরখা পরাবার জন্য উৎসাহী জনতা থাকলেও হাওরবাসীর কাপড়ের ব্যবস্থা করবার ইচ্ছা কারও নেই। নাস্তিকদের জন্য চোখের ইশারা করবার লোক থাকলেও হাওর এলাকার জনতার জন্য চোখের ইশারা করবার লোক নেই। হোয়াই? বিকজ হাওর ইজ নট দ্যাট সেক্সি।
লেখক: চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান