পর্দা নারীর সম্মানের প্রতীক
হাফসা ইসলাম
মালিহা মেয়েটি দেখতে খুবই মিষ্টি মেয়ে, বয়স তুলনায় বড় হয়ে গেছে বেশি । আমার সাথে ভাল পরিচয় থাকায় প্রায় সময় আমার কাছেই থাকে । মাঝে মাঝে বাইরেও বেড়াতে যাই তাকে নিয়ে । বাসার সবাই তাকে বুঝায় তুমি এখন বড় হয়ে গেছ, পর্দা করা তোমার এখন খুবই প্রয়োজন । সে কিছুতেই বুঝতে চায় না, অনেক বুঝানোর পরে বোরকা পরা শুরু করেছে কিন্তু সেটা আধুনিক বোরকা । মুখ খোলা রেখে ছোট্ট হিজাব পরে বাইরে বের হয় । একদিন আমার সাথে ঘুরতে বের হয়েছে, আমি লক্ষ্য করলাম একদল যুবক আমাদের পিছু নিয়েছে, আমি ভয় পেয়ে গেলাম, আমি বখাটেদের বাসা চেনাব না বলেই অলি গলি ঘুরছি কিন্তু বাসায় ঢুকছি না । ছেলেগুলো কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না । অনেক বাজে বাজে কথা বলতেও দ্বিধা করছে না। আমি মালিহাকে আড়াল করে রেখে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কল করার অভিনয় করে বললাম: ভাইয়া জলদি আসেন তো, একটা কথা আছে, দেরি করবেন না যেন । সাথে করে আপনার খেলার স্টাম্পটাও নিয়ে আসেন । দেখলাম ছেলেগুলো মুহুর্তেই হাওয়া হয়ে গেল । এরপর নিশ্চিন্তে বাসায় ফিরলাম । পরে খুব রাগের সঙ্গে মালিহাকে শাসন করলাম। ও বুঝতে পেরেছে যে পরপর দুইদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনায় আমি রেগে গেছি । ও কিছু না বলে চলে গেল।
এমন ঘটনার মুখোমুখি আমাদের প্রায় হতে হয়। চরিত্রহীন যুবক ছেলেদের কাছে মেয়েরা এমনই লাঞ্চনার শিকার। তবে এর জন্য শুধু ওরা দায়ি নয় সমাজে বেপর্দার ফলেই চরিত্রহীন যুবকরা এমন প্রশ্রয় পেয়ে থাকে। এই পরিণতি কি পর্দা না করার জন্যে নয়? বোরকা পরে মুখ খোলা রেখে চলা আর বোরকা না পরে চলা একই কথা। আসলে আল্লাহর হুকুম পর্দা লঙ্ঘন করলে, দুনিয়ার বুকে নারীরা লাঞ্চিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত হবে এটাই স্বাভাবিক। মোটকথা বে-পর্দা তো দুনিয়া নষ্ট করেই, সেই সাথে আখেরাতকেও বরবাদ করে দেয়। পর্দা হল নারীর অলংকার, অহংকার, নারীর সতীত্বের প্রতীক। কিছু দিন পর মালিহা আমার সাথে দেখা করে পূর্ণ পর্দায় আবৃত হয়ে, ‘সে বলল: আপু পর্দার মাঝে যে এত শান্তি তা তো আগে অনুভব করিনি । এখন নিশ্চিন্তে বাইরে চলতে পারছি ।’ পর্দাকে যে যত বেশি আঁকড়ে ধরবে তার স্থান তত উচ্চতায় হবে। পর্দানশীল মহিলাকে সকলেই ভালোবাসেন। কেননা পর্দা নারীকে মানুষের কাছে প্রিয় করে তোলে। প্রিয় করে আল্লাহ ও তার রাসূল সা. এর কাছে। হিজাব হল নারীর সম্মানের প্রতীক। পর্দা তথা হিজাব পড়লে নারী থাকে চির সুরক্ষিত। রাসূল সা. বলেন, “তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট নারী হল বে-পর্দা ও অহংকারী নারীরা। এরাই মুনাফিক। এদের জান্নাতে প্রবেশ করা বড়ই দুরূহ ব্যাপার।” [বায়হাকী]
অন্যান্য ফরজ ইবাদতের মত পর্দা করাও নারীদের উপর ফরজ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক পর্দার নির্দেশ দিয়ে বলেন, “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের, আপনার মেয়েদের এবং মুমিনদের স্ত্রীদের বলে দিন তারা যেন নিজেদের ‘জিলবাব’ দিয়ে ঢেকে বের হয়, তাহলে সহজেই তাদের চেনা যাবে। এবং তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু।” [সূরা আহযাব : ৫৯]
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা প্রথমে পর্দার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূল সা. এর স্ত্রী ও মেয়েদের। অথচ তারাই ছিলেন পৃথিবীর সবচে সতী, পূণ্যবতী। আমাদের চিন্তা করা দরকার, আল্লাহ যদি তাদের পর্দার জন্য কঠোর হুকুম দিতে পারেন, যারা ছিলেন পূত-পবিত্রা। তাহলে এই নষ্ট যুগের নারীদের পর্দার বিধান রক্ষা করা এবং তা মেনে চলা কতটুকু জরুরি ও আবশ্যকীয়?