‘হাওরের দুর্যোগ ঠেকাতে মহাপরিকল্পনা হচ্ছে’
তানভীর আহমেদ : পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেছেন, হাওরের দুর্যোগ ঠেকাতে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা তৈরিতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে। তা না হলে সুষম উন্নয়ন হবে না। হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে কাজের সমন্বয় থাকতে হবে।
গতকাল পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নে উপাত্ত ঘাটতি বিশ্লেষন: বাংলাদেশ পরিপ্রেকিত, ব্যাংকিং অ্যাটলাস ও হাওরাঞ্চলের পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষক তিনটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে তারা এসব কথা বলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ৪০ ফুট কেন হিমালয় সমান বাঁধ দিলেও হাওড়কে বশে আনা যাবে না। তবে পুরো অঞ্চল নিয়ে দেশি-বিদেশি অভিজ্ঞদের দিয়ে বিশেষ করে হাওড় নিয়ে কাজ করেন, তাদেরকে নিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে এর সমাধান করা যেতে পারে। হাওরে বন্যার জন্য জলবাযূ পরিবর্তনকেও দায়ী করেন তিনি বলেন, আমাদের এক জায়গায় হাত-পা বাঁধা, তা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। যদিও আমরা এই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নই।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে সমীক্ষা ও বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। কৃষকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে। ওখানকার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের আলাদা সমস্যা। কৃষকদের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পরিকল্পনায় সমন্বয় আনতে হবে। এ দেশের হাওর অত্যন্ত সম্পদসমৃদ্ধ। ওই সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলেই ওই এলাকার মানুষের জীবনমানের উন্নতি হবে। যেমন মধ্যস্বত্বভোগী ও ইজারাদার বাদ দিতে পারলে ভালো হবে। তাহলেই মানুষ সম্পদের সুবিধা সরাসরি পাবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেছেন, বাংলাদেশ এসডিজি বাস্তবায়নে সমর্পূণভাবে প্রস্তুত। উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ সফলতা অর্জন করেছে এসডিজি বাস্তবায়নেও সফল হবো। ২০৩০ সালের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা তা অর্জন করতে পারব।
এসডিজি চাহিদা নিরুপন এবং অর্থায়ন কৌশল , পরিবীক্ষণ এবং মূল্যায়ন কাঠামো উন্নয়ন দ্রুতই প্রণয়ন করা হবে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগ ও ইউএনডিপি’র সার্পোট টু সাসটেইনেবল এন্ড ইনক্লসিভ প্লানিং (এসএসআইপি) প্রকল্প যৌথভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রতিবেদনের ফলাফল উপস্থাপন করেন ড. শামসুল আলম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এসডিজির ১৭টি বৈশ্বিক অভীষ্ট রয়েছে। এর অধীনে ১৬৯টি লক্ষমাত্রা অর্জনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষন করা হয় ২৩০টি সূচকের মাধ্যমে। বাংলাদেশকে অবশ্য ২৪০টি সূচক দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছে। বিশ্লেষনে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে ৭০টি সূচকের উপাত্ত রয়েছে। এবং ১০৮টি সূচকের উপাত্ত আংশিক ভাবে পাওয়া যাচ্ছে। অবশিষ্ট ৬৩টি সূচকের উপাত্ত একেবারেই নেই। ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ও এর লক্ষমাত্রাগুলো বাস্তবায়ন কার্যক্রম পরিবীক্ষন ও মূল্যায়নে উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণ উপাত্ত ঘাটতি সম্মুখিন হচ্ছে। জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত টেকসই উন্নয়ন সূচকের মাত্র এক তৃর্তীয়াংশের উপাত্ত বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছে এবং অবশিষ্ট দুই তৃর্তীয়াংশ উপাত্ত আংশিকভাবে বিদ্যমান অথবা অনুপস্থিত।
শামসুল আলম বলেন, এসডিজি সফল ভাবে বাস্তবায়নের জন্য আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করেছি। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা যায় পেরেছি আমাদেও কি ধরনের উপাত্ত আছে এবং কি ধরনের প্রয়োজন। তাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, শাখার সহায়তায় পরিসংখ্যান ব্যুরোর নেতৃতে¦ পরিকল্পনা প্রনয়ন করা হবে যাতে অবশিষ্ট উপাত্ত গুলোও পাওয়া যায়। সম্পাদনা : হাসান আরিফ