পিসিবি বিসিবিকে ব্ল্যাকমেইল করতে চায়?
মোস্তফা মামুন
জুলাইয়ে বাংলাদেশ সফর কথা ছিল পাকিস্তান ক্রিকেট দলের। সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু হঠাৎই এই সিরিজটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেয় পিসিবি। সিরিজ বন্ধের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন পিসিবি চেয়ারম্যান তাতে বিস্মিত বিসিবি। বিস্মিত আসলে আমরা সবাই। পিসিবির এই সিদ্ধান্তটা খুবই দুঃখজনক। তবে আমার ধারণা, পিসিবি বিসিবির সঙ্গে একটা ব্ল্যাকমেইলের ঘটনা ঘটাতে চায়। পাকিস্তানে যেহেতু এখন কেউ খেলতে চায় না, এতে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। এক্ষেত্রে পিসিবি চায় বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়ে ট্রাই করার। বাংলাদেশ যেহেতু পিসিবির প্রস্তাবে রাজি হচ্ছে না, আমার ধারণা তারা মনে করছে, এই সিরিজটা বাতিল করলে বাংলাদেশ বিপদে পড়বে। এবং পরে বাংলাদেশ পাকিস্তানে গিয়ে খেলতে রাজি হবে।
পাকিস্তান আসলে প্রমাণ করতে চায় খেলার জন্য তাদের দেশ নিরাপদ। তা প্রমাণ করার জন্য তো বড় কোনো ক্রিকেট দেশ সেখানে যেতে চাইবে না। এদিক থেকে বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে দুর্বল, এজন্যই এ রকম পরিস্থিতি তৈরি করেছে পিসিবি। অতীতেও এরকম করতে দেখা গেছে, তাতে অবশ্যই কোনো লাভ হয়নি। পিসিবির সিরিজ স্থগিতের ফলে আমাদের ক্রিকেটে নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না। এবং এই সফরটি হবে না এখনো আমি তা মনে করি না।
আমার ধারণা, পিসিবির মধ্যেও একটা ভয় আছে। এ সময়ে আলোচনা করলেই সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। কারণ এমনিতেই পাকিস্তানে ক্রিকেট হচ্ছে না। এখন যদি তারা সফরটি বাতিল করে তাহলে বাংলাদেশের সঙ্গে ক্রিকেট সম্পর্ক প্রশ্নের মুখে পড়বে। তখন তারা আরও বিপাকে পড়বে। ফলে মনে হয় না যে সফরটি শেষ পর্যন্ত বাতিল হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে তো এখনো ওরা সিরিজিটি বাতি করেনি। বাতিলের হুমকি দিয়ে কিভাবে বাংলাদেশের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করা যায়, এ রকম একটা ভাবনা পিসিবির আছে বলে আমার মনে হয়।
এখন কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে ভাল রোল প্লে করতে হবে। ২০১৫ সালের সিরিজে তারা বাংলাদেশের কাছ থেকে বেশকিছু টাকা চেয়েছিল। যেহেতু ওটা তাদের হোম সিরিজ ছিল সেহেতু তারা কিছু টাকা চেয়েছিল। বাংলাদেশ সেটা দিয়েছিল। সেই হিসেবে এটা বাংলাদেশের হোম সিরিজ। এই জায়গাটাতেই তাদের বোঝাতে হবে। বুঝিয়ে সুজিয়ে সিরিজটা কনফার্ম করতে পারলেই বরং ভালো হবে।
পাকিস্তান যদি সিরিজটি খেলতে না আসে তাহলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গনে তা এমনভাবে উপস্থাপন বা প্রচার করা দরকার যাতে তাদের ব্ল্যাকমেইলিং করার চেষ্টার বিষয়টি সবার সামনে আসে। বলতে হবে সবাইকে যে, পাকিস্তান ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশকে, সুবিধা করতে না পারায় তারা সিরিজটা বাতিল করছে। মোটাকথা তারা যে অন্যায় করছে, এটা যেন আমরা স্টাব্লিস্ট করতে পারি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দুনিয়া ও বিশ্বমিডিয়ায়। প্রথম তাদের বোঝাতে হবে, তাতে কাজ না হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দুনিয়ার কাছে বলা, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড কাজটা ঠিক করেনি। পাকিস্তানে ক্রিকেট খেলা নিরাপদ নয়, ক্রিকেট দুনিয়া তাই মনে করে। বাংলাদেশের সঙ্গে পিসিবি যা করছে, এটা যে অন্যায় সেটা ক্রিকেট বিশ্বকে ভাল করে জানানো। তা করতে পারলে পাকিস্তান একটু চাপে পড়বে। এর ফলে হয়তো তারা এই ব্ল্যাকমেইলিং পজিশন থেকে সরে আসবে।
পরিচিতি: ক্রীড়া বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি/সম্পাদনা: আশিক রহমান