জঙ্গিবাদে বিদেশি অর্থায়ন থাকতে পারে : মনিরুল
সুজন কৈরী : বাংলাদেশের জঙ্গিবাদে বিদেশি কোনো সংস্থার অর্থায়ন থাকতে পারে বলে মনে করছেন ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। গতকাল শনিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। মনিরুল ইসলাম বলেন, অর্থায়নের সব কটি উৎস এখনো পুরোপুরি চিহ্নিত হওয়া যায়নি। জঙ্গিদের সমমনা কিছু দেশি ও প্রবাসী লোক এই অর্থের জোগান দিচ্ছে। যেসব জঙ্গি জঙ্গিবাদে যুক্ত হতে ঘর ছেড়েছে, তারা সহায়-সম্পত্তি সংগঠনকে বিলিয়ে দিয়েছে। কেউ কেউ চাকরি করে সংগঠনের তহবিল জোগায়। তবুও তাদেরকে কারা অর্থ দিচ্ছে, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যদিও কোনো কোনো ব্যক্তি বিশেষেরও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবুও এটা কেস টু কেস বিবেচনা করতে হবে। প্রবাসী বাঙালি ছাড়াও এর আগে আমরা জেএমবি সদস্যদের জাল মুদ্রা কারবারে যুক্ত হতে দেখেছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের পাশের একটি দেশের এ জাল মুদ্রাগুলো প্রতিবেশী আরেকটি দেশ থেকে তৈরি হয়ে আসত। জেএমবি সদস্যরা এই মুদ্রা পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে অতীতে দেখা গেছে। এসব মুদ্রা পাচারের অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে সেই প্রতিবেশী দেশের একজন কূটনৈতিক প্রত্যাহারও হয়েছে। সুতরাং জঙ্গিবাদে বিদেশি অর্থায়নের সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
একটি দলের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতার যে অভিযোগ সরকার দলীয় নেতারা করেছেন সে বিষয়ে মনিরুল বলেন, এটা উদাহরণ দিয়ে বলতে হবে। জঙ্গিদের অনেককে পাওয়া গেছে, যাদের এ ধরনের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকার অতীত রয়েছে। যেমন সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিহত আবু জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তার শ্বশুরের পরিবার জামায়াত এবং বলা হয় আবু বিয়ের পরই এ পথে এসেছে অর্থাৎ স্ত্রীর হাত ধরে এসেছে। তবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ঢালাওভাবে বলা যাবে না, আবার উড়িয়েও দেওয়া যাবে না। কেস টু কেস বিবেচনা করতে হবে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, তাদের অনেকেই জামায়াত-শিবির থেকে এসেছে।
গত ২৬ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের বর্ণনা দিয়ে সিটি প্রধান বলেন, ওই বাড়িটি জঙ্গিরা তাদের অস্ত্র-বিস্ফোরকের ভা-ার হিসেবে ব্যবহার করত। আস্তানা থেকে যেসব বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে, সেগুলো দেখে মনে হয়েছে, বাইরে থেকে আনা হয়েছে। এ অভিযানে নিহতদের একজন আবু ছাড়া বাকি তিনজনের মধ্যে নব্য জেএমবির নেতা আবদুল্লাহ রয়েছে বলে পুলিশের ধারণা। এছাড়া নিহতদের দুজন ঝিনাইদহ থেকে এসেছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে আবুর স্ত্রী সুমাইয়া জানিয়েছে।
বিস্ফোরক এবং অস্ত্রের সাপ্লাই লাইন ধ্বংস করার তথ্য জানিয়ে সিটিটিসির এ প্রধান বলেন, বর্তমানের অধিকাংশ বিস্ফোরক উপাদানই দেশের ভিতরের। এর আগে চোরাইপথে যে বিস্ফোরক দ্রব্য, অস্ত্র আসত তার কিছু কিছু লাইন দেশের এপার ওপার দুপাশেই সমন্বয় করে আমরা সেই সাপ্লাই লাইনগুলো ধ্বংস করেছি, করতে পেরেছি। ফলে তাদের সাপ্লাই লাইনটা আবার নতুন করে তৈরি করতে হবে। এখন তারা এগুলো দেশের ভিতরে প্রচলিত জিনিসের মধ্য থেকে সংগ্রহ করছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তার ধারণা, ঝিনাইদহের আস্তানা থেকে পালিয়ে আবদুল্লাহ ও তার সঙ্গী বিস্ফোরক নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আস্তানায় গিয়েছিল। খোলা বাজার থেকেই ওইসব বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহার হওয়া বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো খুব শক্তিশালী বা উন্নত এটা বলা যাবে না। তবে সেগুলোর পরিমাণ অনেক বেশি বলে ধ্বংস ক্ষমতা বেশি। এসব বিস্ফোরক অন্য কোথাও ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল। অভিযান শেষে সেখানে সুইসাইড ভেস্টের পাশাপাশি চারটি অবিস্ফোরিত বোমাও পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, আগাম তথ্যের ভিত্তিতে কোনো লোকাল জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চিহ্নিত করে অভিযান পরিচালনা করে আস্তানাটিকে ধ্বংস করতে। গোয়েন্দা সংস্থাসহ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও কাজ করছে। আস্তানাগুলো চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগনের একটা বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, আমরা মনে করি, জঙ্গিবাদ দমন শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একার কাজ নয়। এক্ষেত্রে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ জঙ্গিবাদ প্রকৃতপক্ষে মানবতার বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে, সর্বোপরি সকলের বিরুদ্ধে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ