প্রেসিডেন্সির ১০০ দিনে নিজেকে সফল দাবি ট্রাম্পের
লিহান লিমা : ২৯ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করার শততম দিন পূর্ণ হলো। প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের সময় থেকে প্রথম ১০০ দিনে প্রেসিডেন্টের কর্মদক্ষতার হিসাব-নিকাশ গ্রহণের প্রথা চলে আসছে। ১৯৩৩ সালে রুজভেল্ট শততম দিনের মধ্যে মার্কিন সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুরোপুরি বদলে ফেলেছিলেন। কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে তিনি ৭৬টি আইন পাস করেন এবং এই সময়ের মধ্যে তার পুরো মন্ত্রিপরিষদ শপথ গ্রহণ করে।
অন্যদিকে ট্রাম্প ৮০ ভাগেরও বেশি প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ৩৮টি প্রতিশ্রুতির মধ্যে মাত্র ৭টি পূর্ণাঙ্গভাবে সম্পন্ন এবং অল্প কয়েকটি আংশিকভাবে সম্পন্ন করেছেন, বাকিগুলোতে এখনও হাত দেয়া হয়নি।
ফক্স নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, গত ১শ’ দিনে যে কাজ করেছি, তাতে আমি শতভাগ সফল। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই অল্প সময়ে এত বেশি কাজ কোনো প্রেসিডেন্ট করেছেন বলে মনে হয় না। ’ যদিও ট্রাম্প এখনও তার মন্ত্রিসভা পূর্ণাঙ্গভাবে গঠন করতে পারেননি। সিনেটের সমর্থন লাগে এমন ৫৫৬টি পদের মধ্যে মাত্র ৪৭০টি পদে নিয়োগ নিশ্চিত করতে পেরেছেন।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের ধারা ফিরিয়ে এনেছি । মিশিগান, ওহাইয়োতে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের ব্যস্ততা আবারো শুরু হয়েছে। তারা আর সেখান থেকে অন্য এলাকায় যেতে চায় না। শুধু আলোচনার মাধ্যমে আমি যুক্তরাষ্ট্রের ৭২ কোটি ৫০ লাখ ডলার রক্ষা করেছি। বিভিন্ন খাতে খরচের পরিমাণ কমিয়ে অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধি করেছি।’
এর আগে নির্বাচনি ক্যাম্পেইনে ট্রাম্প বলেছেন, প্রেসিডেন্সির ১০০দিনের মধ্যে প্রথম দিনই ২০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে বহিষ্কার করবেন, ওবামাকেয়ার বাতিল করে নতুন স্বাস্থ্যবিমা আইন চালু করবেন, মেক্সিকোর সঙ্গে দেয়াল নির্মাণ শুরু করবেন, সুপ্রিম কোর্টে একজন রক্ষণশীল বিচারপতির মনোনয়ন দেবেন এবং মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নাফটা বাতিল বা নতুন করে চুক্তি সম্পাদন করবেন এবং এক ট্রিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। যার মধ্যে নেইল গোরসাচকে নিয়োগের প্রতিশ্রুতিই শুধু রক্ষা করতে পেরেছেন।
ট্রাম্প অবশ্য নিজের স্বাক্ষর করা ২৮টি নির্বাহী আদেশকে তার প্রশাসনের অন্যতম সাফল্য বলে দাবি করেন। যদিও এর অধিকাংশই বিচারবিভাগ আটকে দিয়েছে অথবা তার নিজ দল রিপাবলিকানদের বাধার মুখে এটি কংগ্রেসে পাস হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা , ওবামাকেয়ারের জায়গায় নতুন স্বাস্থ্যবিমা আইন প্রণয়ন, মেক্সিকোর সঙ্গে দেয়াল নির্মাণ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে তিনি বিচারবিভাগ ও রিপাবলিকানদের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন।
এছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনে কন্যা ইভানকা ট্রাম্প ও জামাই জ্যারেড কুশনারের আধিপত্য নিয়েও সমালোচনা চলছে। হাফিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশে সরকারি ক্ষমতা রাষ্ট্রপ্রধান ও তার পরিবারের মধ্যে সীমিত। হোয়াইট হাউস এখন অবিকল তৃতীয় বিশ্বের দেশে পরিণত হয়েছে।
ট্রাম্প বলেছেন, প্রথম ১০০দিনে তিনি চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। যদিও নির্বাচনি ক্যাম্পেইনে ‘জাতীয়তাবাদ ও ‘আমেরিকা ফার্স্ট ’বুলি উচ্চারণ করা ট্রাম্প এখন সিরিয়া, আফগানিস্তানে সামরিক হামলা চালিয়েছেন। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গেও তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আগের চেয়ে অনেকটাই তিক্ত। এবিসি টিভির জনমত জরিপে দেখা যায়, বেশিরভাগ আমেরিকান আশঙ্কা করছেন ট্রাম্প বড় ধরনের যুদ্ধ বাধাতে পারেন।
ফক্স নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রথম ১০০দিনের কর্মপরিকল্পনায় ট্রাম্প ১৬জন বৈদেশিক নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, ব্যবসায়িক নেতাদের সঙ্গে ১৭টি বৈঠক করেছেন, মন্ত্রিপরিষদের ২১ সদস্যপদ নিশ্চিত করেছেন এবং ২৮টি বিল স্বাক্ষর করেছেন। ট্যুইটার প্রিয় ট্রাম্প প্রেসিডেন্সির পর থেকে এই পর্যন্ত ৪৮৫ বার টুইট করেছেন।’ সূত্র : দ্য ডেইলি মেইল, সিএনএন ও ফক্স নিউজ অবলম্বনে।
সম্পাদনা : আবু সাইদ