বিএনপি বলছে পেছনের কারণ জানতে হবে সরকার মনে করছে পাকিস্তানের চাপেই পুরস্কার ফেরত দিতে চান হামিদ মীর
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : পাকিস্তানের অধ্যাপক ও সাংবাদিক ওয়ারিস মীরের সম্মাননা ফেরত দিতে চাইছে যিনি পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন তিনি নিজেই। এই কারণে হামিদ মীরের পুরস্কার ফেরত দেওয়ার বিষয়টি সরকার স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না। এটা একটা ষড়যন্ত্রই মনে করছে। কারণ এই পুরস্কার ও সম্মাননা যখন দেওয়া হয়েছিল তখন সকল আনুষ্ঠানিকতা মেনেই হামিদ মীর নিয়েছেন। তিনি তখন পুরস্কার নেওয়ার সময়ে কোনো আপত্তি করেননি। স্বেচ্ছায়ই নিয়েছেন। এই কারণে হঠাৎ করেই তিনি পুরস্কার ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সরকার মনে করছে এটা পাকিস্তানের চাপেই তিনি করছেন। এর পেছনে আরও অনেক কারণও থাকতে পারে। দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ না হলেও কূটনৈতিক সম্পর্ক সরকার রাখলেও তিনি তার মতো করে অভিযোগ করেছেন।
এদিকে বিএনপি এটাকে মনে করছে, সম্মাননা সরকার তখন দিয়েছিল তাদের সুবিধার জন্য। এখন নিশ্চয়ই পুরস্কার গ্রহণকারী কিছু জানতে পেরেছেন, এই কারণে প্রায় চার বছর পর পুরস্কার ফেরত দিতে চাইছেন। তিনি কিভাবে পুরস্কার ফেরত দেন সেটা দেখতে হবে। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে একজনকে দেওয়া পুরস্কার ফেরত দেওয়া দেশের জন্য ও সরকারের জন্য সম্মানজনক নয়। এই ব্যাপারে সরকারের একজন মন্ত্রী বলেন, এখনই এই ব্যাপারে কিছু তেমনভাবে বলা যাচ্ছে না কারণ হামিদ মীর কেবল ঘোষণা দিয়েছেন। পুরস্কার ফেরত দিতে চাইলে এই জন্য একটা প্রক্রিয়াও দরকার। সেই ব্যাপারে হামিদ মীর কি করেন সেটা দেখতে হবে। সম্মাননা দেওয়ার কারণ কি, সেটাও দেখা হবে। তার চিঠি পাওয়ার পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, হামিদ মীর কি কারণে পুরস্কার ফেরত দিতে চান সেটা আগে জানতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা এখনো স্পষ্ট করে কিছু জানি না। তবে এটা এমন হতে পারে পাকিস্তানের চাপেই করতে পারেন।
সূত্র জানায়, হামিদ মীরের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায়। এটা তার অভিযোগ হতে পারে। কারণ বাংলাদেশ ও সরকার কারও সঙ্গে শত্রুতা চায় না। সব রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্ক বজায় রাখবে। এর আগে প্রধানমন্ত্রীও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন। সুতরাং এই সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় এ অভিযোগ ঠিক না।
সরকার একাত্তরে বাংলাদেশে দমন-পীড়নের বিরোধিতায় কলম ধরায় বিদেশি বন্ধু হিসেবে যে সম্মাননা দিয়েছিল ওয়ারিস মীর। ওই সময়ে পাকিস্তানের জিও নিউজের শো হোস্ট হামিদ মীর বাবার পক্ষে ওই সম্মাননা স্মারক নেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে ভূমিকা রাখার জন্য পাকিস্তান সরকারের দেওয়া সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেননি তিনি। বরং হামিদ মীর ২০১৩ সালের মার্চে বাবার সম্মাননা নিতে ঢাকায় আসেন। তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের জানান, পাকিস্তানেও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে।
ওই সময়ে তিনি এই কথা বললেও এবার বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি জিও নিউজের নিয়মিত শো ‘ক্যাপিটাল টকে’ বলেছেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক ভালো হওয়া উচিত। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো হবে। এই জন্য পাকিস্তানের কয়েকজন মুরব্বিকে বাংলাদেশ সরকার অ্যাওয়ার্ড দেবে। এর মধ্যে আমার বাবাও ছিলেন। ১৯৭১ সালে যারা বাংলাদেশে পাকিস্তানি সামরিক অপারেশনের বিরোধিতা করেছিলেন তাদের এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। তিনি ওই সময়ে দাওয়াত গ্রহণ করার ও পুরস্কার নেওয়ার কারণ সম্পর্কে বলেছেন, ওই সময়ে ১৩ জন পাকিস্তানি দাওয়াত গ্রহণ করেন কারণ আশা ছিল শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরালো করবেন।
তিনি পুরস্কার এখন ফেরত দেওয়ার বিষয়েও ব্যাখ্যা দিয়েছেন, বলেছেন, আমি সেখানে গিয়ে বাবার পক্ষে অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু এরপরে দেখলাম, হাসিনা ওয়াজেদ সম্পর্ক ভালো করার জায়গায় আরও খারাপ করলেন। এমন মনে হচ্ছে যে, তিনি পাকিস্তানিদের যে অ্যাওয়ার্ড দিয়েছিলেন সেটা ধোঁকা ছিল।
সরকারের সূত্র জানায়, তার পুরস্কার ফেরত দেওয়ার বিষয়ে তিনি ঘোষণার পর পরবর্তী পদক্ষেপ দেখেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, হামিদ মীর ঠিক কি কারণে ওই সময়ে এই সরকারের দেওয়া পুরস্কার গ্রহণ করেন আর কি কারণে ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এটা তিনি জানেন এ ব্যাপারে আমরা জানি না। অপেক্ষা করতে হবে।
হামিদ মীর বলেছেন, বাংলাদেশ পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে। সেই জন্য শেখ হাসিনা দায়ী। এই কারণে বাবার ওই সম্মাননাকে এখন তার ধোঁকা বলে মনে হচ্ছে। তার অভিযোগ, উনি চাচ্ছেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক শেষ হয়ে যাক। ওই অ্যাওয়ার্ড ছিল ধোঁকা। আমি ধন্যবাদের সাথে বলছি, ওই অ্যাওয়ার্ড আমাদের হাসিনা ওয়াজেদকে ফেরত দেওয়া উচিত। আমি এই ধোঁকা ফেরত দিচ্ছি।
মোশাররফ হোসেন বলেন, এই জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আসল ঘটনাও পরে জানা যাবে। আর পাকিস্তানের সঙ্গে সরকার সম্পর্ক খারাপ করতে চাইছে ও ছিন্ন করতে চাইলে এ ব্যাপারে বিএনপির মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি বলতে পারছি না। কারণ এটা সরকারই ভালো জানে। তবে সরকারের পাকিস্তানের ব্যাপারে আলাদা নীতি থাকতে পারে। সেটা আমি কেমন করে বলবো।