সমস্যার সমাধানও করা সম্ভব মনে করছে আইন মন্ত্রণালয় ৩ বিভাগের সমন্বয় : যে কোনো সমস্যা নিয়ে আলোচনা হতে পারে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের যদি কোনো দূরত্ব থাকে কিংবা যদি কোনো সমস্যা থাকে এবং দ্বন্দ্ব থাকে সেই সব সমস্যা আলোচনা করেই সমাধান সম্ভব। আর এই জন্য আলোচনা করার প্রয়োজনও মনে করছে আইন মন্ত্রণালয়। তবে প্রধান বিচারপতির দফতর থেকে বিষয়টি নিয়ে সেইভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে সমস্যার বিষয়গুলো মন্ত্রণালয়ে ওইভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে এর আগে তা চিহ্নিত করা দরকার বলেও মনে করছে আইন মন্ত্রণালয়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আমি সবসময়ই আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সব কিছু নিরসন হোক- সেটা চাই। আমি তো কোনো দ্বন্দ্ব দেখি না। আমাদের আচরণে কোনো সৎ মা সুলভ ব্যবহার দেখি না। সেটা যদি উনি (প্রধান বিচারপতি) পয়েন্ট আউট করে দেন, সেটা আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চয়ই নিষ্পত্তি করতে পারব।
আইনমন্ত্রীর ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধান বিচারপতি সম্প্রতি হবিগঞ্জে কথা বলার পর সেই সব কথার প্রেক্ষাপটে আইনমন্ত্রীও কথা বলেন। এর পরদিন আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কথা বলেন। তিনি বলেছেন, আইন প্রণয়নকারী ও আইন প্রয়োগকারী এবং আইন বাস্তবায়নকারী তিনটির মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। দোষারোপ করে কাজ হবে না সেটাও বলেছেন। পাশাপাশি তিনি বিচরক ও আইনজীবীদেরও আরও মানবিক হওয়ার জন্য বলেছেন।
আইন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, প্রধান বিচারপতি যেসব কথা বলেছেন ওই সব কথার প্রেক্ষিতে কষ্ট পেয়েছে সরকারের দায়িত্বশীলরা। তারা মনে করছেন, সরকার বিচারবিভাগের উপর হস্তক্ষেপ করছে এবং বিমাতা সুলভ আচরণ করছে, তিনি কি করণে বলেছেন তা চিহ্নিত করে দিলে এই বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনাও করতে চান। তবে সেই ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি যেসব সমস্যা সরকার ও নির্বাহী সঙ্গে অনুভব করছেন ও কাজ করছে উপলব্ধি করছেন এই সব বিষয়ে আলোচনা করতে চান।
সরকারের নীতি নির্ধারক একজন মন্ত্রী বলেন, হবিগঞ্জে প্রধান বিচারপতি যে সব কথা বলেছেন তাদের সরকারের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগের যে দূরত্ব ও সেখানকার চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। এই অবস্থায় সরকার কিছুটা বিব্রতও। তাই সরকার মনে করছে প্রধান বিচারপতি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জানালে এই ব্যাপারে কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলোর সমাধান করা হবে।
আইনমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো সমস্যা থাকলে সেই সমস্যা আলোচনা করেই সমাধান করা যাবে। তবে এটা ঠিক সরকার বিচারপতিদের বেতন বাড়িয়েছে। সুযোগ সুবিধা বাড়িয়েছে। সরকার তো বিমাতা স্বরূপ আচরণ করলে বিচারকদের বেতন বাড়াতেন না। আসলে সরকার প্রয়োজন বিবেচনা করেই বেতন বাড়িয়েছে।
প্রধান বিচারপতি যে সব কথা বলেছেন, সেটা নিশ্চয়ই তার উপলব্ধি। এই বিষয়গুলো নিরসনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার তো সবসময় সহযোগিতা করছে। লাগলে আরও করবে। তবে তার প্রতি অনুরোধ থাকবে তিনি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করলে সুবিধা হবে।
সূত্র জানায়, প্রধান বিচারপতি কাজ করতে গিয়ে যেসব সমস্যা প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করেছেন তিনি তার অবস্থান থেকেই সেগুলো তুলে ধরেছেন। সমস্যা হচ্ছে না বলেই পাবলিকলি বলেছেন। তাতেও যদি সরকার বিষয়গুলো উপলব্ধি করে।
যদিও তিনি এই সব কথা বলার পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কোনো দেশের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ্যে এত কথা বলেন না। যদি প্রধান বিচারপতির কোনো কষ্ট থাকে, তাহলে তা তিনি আমাদের কাছে বলতে পারেন। আমরা তার কষ্ট শোধ করার চেষ্টা করব। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, প্রশাসন বিচার বিভাগকে স্বাধীন হতে দিতে চায় না। বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের আসলে সংকটটা কোথায়? আইনমন্ত্রী বলেন, এই কথাটা যে উনি বলেছেন, এটার কারণ দিয়ে যদি বলতেন, তাহলে আমার মনে হয়, অনেক সুবিধা হতো।
তিনি বলেন, বেতন বাড়ানোসহ আনুষঙ্গিক সুবিধাদি যা একজন বিচারপতির মর্যাদা রক্ষার জন্য দরকার, সেটা দেওয়া হয়েছে। বিমাতাসুলভ আচরণের যে কথাটা এসেছে, সেটা যদি এই সরকারের আচরণের মধ্যে থাকত, তাহলে প্রধানমন্ত্রী এসব জিনিস বিচারপতিদের জন্য করতেন না। বিচারক ও বিচারপতিরা যাতে স্বাধীনভাবে বিচার করতে পারেন, সে জন্য প্রত্যেক ক্ষেত্রে এই অবকাঠামোগুলো করা হয়েছে। তাহলে কেউ যদি বলে এই সরকার বিচার বিভাগের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করে, সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
প্রধান বিচারপতির অভিযোগ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয়ে বর্তমান সরকারসহ দেশের প্রতিটি সরকার বিচার বিভাগের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল হয়ে বলব, উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশ এমনকি প্রতিবেশী দেশেও বিচারকাজ ছাড়া প্রধান বিচারপতিরা এত উষ্মা, এত কথা পাবলিকলি বলেন না। নিশ্চয়ই উনি প্রয়োজনে বলেন, আমি এটা অস্বীকার করি না। কিন্তু উনি এসব কথা, ওনার যদি কোনো দুঃখকষ্ট থেকে থাকে, তা উনি পাবলিকলি না বলে আমাদের জানান, তাহলে আমরা হয়তো সেগুলো সুরাহা করার চেষ্টা করতে পারি।
তিনি দাবি করেন, আমি তো কোনো দ্বন্দ্ব দেখি না। আমাদের আচরণে কোনো সৎ মা সুলভ ব্যবহার দেখি না। আমি অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই, এই সরকার শেখ হাসিনার সরকার, বিচারকাজে কখনাই হস্তক্ষেপ করে না, কখনোই হস্তক্ষেপ করবে না। বিচার বিভাগ স্বাধীন। নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগের দূরত্ব নেই। কারণ আমি কোনো দূরত্ব দেখি না। তিনি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সবকিছু নিরসনের জন্য আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতির প্রতি।
আমার কথা হচ্ছে, নিশ্চয়ই উনি প্রয়োজনে বলেন, আমি এটা অস্বীকার করি না। কিন্তু উনি এই সব কথাগুলো, উনার যদি কোনো দুঃখ কষ্ট থেকে থাকে, এই সব কথাগুলি যদি উনি পাবলিকলি না বলে আমাদেরকে জানান, তাহলে আমরা হয়তো সেগুলো সুরাহা করার চেষ্টা করতে পারি।’
বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের সঙ্কট নিয়ে কথা বলার পর সরকার এখনো সংকট দেখছে না। এই জন্য সরকার মনে করছে, প্রধান বিচারপতি যদি তার ওই বক্তব্যের কারণটা বলতেন, তাহলে অনেক সুবিধা হতো। যেখানে আনুষঙ্গিক সুবিধাদি যা একজন বিচারপতির মর্যাদা রক্ষার জন্য দরকার, সেটা দেওয়া হয়েছে। এটা হচ্ছে অবকাঠামো বৃদ্ধির প্রথম পদক্ষেপ হিসাবেই করা হয়েছে। বিচার বিভাগকে বিরাট কিছু দিয়ে খুশি করার জন্য এটা করা হয়েছে। এমন নয় বলেও মনে করেন মন্ত্রী।
আইনমন্ত্রী বলেন, গুরুত্ব আরোপে যে কথাটা এসেছে যে স্টেপ মাদারলি বিহেভিয়ার। আমার কথা হচ্ছে, স্টেপ মাদারলি বিহেভিয়ার যদি এই সরকারের আচরণের মধ্যে থাকত, তাহলে প্রধানমন্ত্রী এই সব জিনিসগুলো বিচারপতিদের জন্য করতেন না। বিচারকরা যাতে স্বাধীনভাবে বিচার করতে পারেন, সেজন্যই অবকাঠামো শক্ত করা হচ্ছে মন্তব্য করে আইনমন্ত্রী বলেন, সেটা শক্ত করছেন কে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। তাহলে কেউ যদি বলে আমরা এই সরকার, তিনি অন্যান্য সরকারের কথা কী বলেছেন, তাদেরকে ডিফেন্ড করার দরকার আমার নেই। এই সরকার বিচার বিভাগের সাথে সৎ মা সুলভ আচরণ করে (বলা), সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। শেখ হাসিনার সরকার বিচার কাজে কখনাই হস্তক্ষেপ করে না এবং কখনোই হস্তক্ষেপ করবে না। বিচার বিভাগ স্বাধীন।