বরিশাল প্রতিনিধি: ঢাকা-বরিশাল নৌরুটসহ দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েই চলছে। আগের চেয়ে অনেক বড় নৌযানে আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ চালক থাকলেও নদীর গতিপথ পরিবর্তন, ডুবোচর ও নাব্যতা সংকটে দুর্ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করেন নৌযান চালকরা। নৌ-পথ দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা এসব দুর্ঘটনার জন্য নদীর ভাঙাগড়ার খেলাকেই দায়ী করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআইডব্লিউটিএ’র একাধিক কর্মকর্তারা বলেন, পূর্বের তুলনায় নৌ-দুর্ঘটনা অনেক কমেছে। তবে সাম্প্রতিককালের কয়েকটি নৌ-দুর্ঘটনা যাত্রী থেকে শুরু করে লঞ্চ স্টাফদেরও মধ্যেও ভীতির সৃষ্টি করেছে। গত এক বছরে নৌ-দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে অর্ধশত মানুষ। আহতের সংখ্যাও কয়েক শত। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর বানারীপাড়া উপজেলার সন্ধ্যা নদীতে ‘এমএল ঐশী’ লঞ্চ অর্ধশত যাত্রী নিয়ে নিমজ্জিত হয়। এতে ২৭ যাত্রী প্রাণ হারায়। আহত হয় আরও ১২ যাত্রী।
পরেদিন বিকেলেই ওই নদীতে লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাডুবিতে মারা যায় আরও একজন। একই বছরের ৪ জুলাই ঢাকা-বরিশাল রুটের ‘সুরভী-৭’ লঞ্চের সঙ্গে বিআইডব্লিউটিসির রকেট স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’র সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় পাঁচ যাত্রী। গুরুতর আহত হয় আরও ১০ জন। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে ট্রলারের ধাক্কায় নৌকা ডুবে নানা-নাতি মারা গেছে। ৫ জুলাই মুলাদীর আড়িয়াল খাঁ নদীতে লঞ্চের ধাক্কায় ট্রলার ডুবে এক শিশু নিখোঁজ হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর হিজলার মেঘনা নদীতে ট্রলারের ধাক্কায় অপর একটি ট্রলার ডুবে ভাই-বোন মারা গেছে। ৫ অক্টোবর মুলাদীতে লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা ডুবে জেলে নিহত হয়েছে। ১২ ডিসেম্বর মেহেন্দিগঞ্জের গজারিয়া নদীতে লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা ডুবে জেলে নিখোঁজ হয়। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি হিজলার দুর্গাপুর ঘাটে লঞ্চের ধাক্কায় ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। ১১ মার্চ বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে নৌকাডুবে এক নারী মারা গেছে। নৌকা বা ট্রলার ডুবে নিখোঁজ ও নিহত হওয়ার খবরও কম নয়। আবার হতাহত না হলেও দুর্ঘটনায় নৌ-যানগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে গত এক বছরে।
গত বছর ১৭ মার্চ হিজলার মেঘনা নদীতে ডুবে যাওয়া বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় পাঁচ শত যাত্রী নিয়ে সুন্দরবন-৯ লঞ্চের তলা ফেটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৩১ অক্টোবর উজিরপুরে সন্ধ্যা নদীতে দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে এমভি যুবরাজ ও বালু ভর্তি কার্গোর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। গত বছর নভেম্বর মাসে সুন্দরবন-১০ লঞ্চ ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে বরিশাল আসার পথে বুড়িগঙ্গা ব্রিজের সাথে ধাক্কা লেগে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ওই লঞ্চটি একই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকাগামী কীর্তনখোলা-২ লঞ্চের সঙ্গে পাল্লা দিতে দিয়ে মুলাদী এলাকায় ধাক্কা-ধাক্কিতে লিপ্ত হয়। গত বছর জানুয়ারি মাসে বরিশাল থেকে ঢাকায় যাওয়ার সময় যাত্রী নিয়ে চরে আটকা পড়ে দ্বীপরাজ। যাত্রীরা রক্ষা পেলেও নদীতে ভাটার সময় পানি কমে যাওয়ার কারণে লঞ্চটির তলা ফেটে ডুবে যায়।সম্পাদনা মুরাদ হাসান