স্বপন কুমার দেব , মৌলভীবাজার: পাঁচ ক্লাস পড়ে (৫ম শ্রেণি)আর স্কুলে যাইতে পারিনি, স্কুলে যাইতে মন চায়। বাবা-মা গরিব। পরিবারের অভাবের কারণে পারে না স্কুলে দিতে। ৮৫ টাকা হাজিরায় না পোষাইলে কি হইবো, খাইতেতো হইবো, বাগানের মানুষ কই যাইমু, বাড়ি নাই, ঘর নাই হামরারে কেউ দেখবো-নি দেখবে না। মে দিবস কি খাবার দিবনি, হামরার কি হইবো এই দিনে’ এমন প্রশ্ন রেখে কথাগুলো বল ছিলেন ভুরভুরিয়া চা বাগানের কিশোরী চা শ্রমিক মনি মৃর্ধা (১৪)। ভুরভুরিয়া চা বাগানের হসপিটাল লাইনে কথা হয় মনি মির্ধাসহ রিতা দোসাদ, কল্পনা মৃর্ধা, মুন্নি দোসাদসহ অনেক নারী চা শ্রমিকের সঙ্গে
নারী শ্রমিক রিতা দোসাদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তিন কেজি রেশনের আটা দেয় ৬ দিনে, এই তিন কেজি রেশনে হামরা কয় বেলা খাব, বাচ্ছা-কাচ্ছা নিয়ে কেমনে চলি ৮৫ টাকা হাজিরা দিয়ে। ৪/৫টা ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমরা কি ভাবে চলবো। তারা যদি হামদেরকে (আমাদেরকে) না দেখে। সরকার যদি হামাদের শ্রমিকদের জন্য চালের দামটা আরেকটু কম করতো তাহলে শ্রমিকদের জন্য ভাল হইতো। বাগানের কাজ না থাকলে আমরা টাউনে গিয়া ইট ভাঙতে হয় মাটি কাটতে হয়। কাকিয়া ছড়া চা বাগানের শ্রমিক জগবন্ধু, সুবাস ধর, কালু বাকতি, নিথাকার দাশ ও ফুলছড়ার শ্রমিক সরদার অতুল নায়েক বলেন, নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন দাম সত্বেও চা শ্রমিকদের মজুরি না বাড়ায় চা বাগানের শ্রমিকরা চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
যদিও এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, বেড়েছে মাথাপিছু আয়। কিন্তু ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ির এই কারিগরদের নিচের অন্ধকার যেন কমছেই না। এসব শ্রমিকদের ঘামে ঝরা শ্রমেই চায়ের উৎপাদনে ইতিহাস সৃষ্ট করেছিল ২০১৬ সালে উৎপাদন ছাড়িয়ে ৮৫.০৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। যা ২০১৫ সালে চা উৎপাদন ছিল ৬৭ মিলিয়ন কেজি। এর আগে ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল সর্বোচ্চ ৬৬ মিলিয়ন কেজি। প্রসঙ্গত: ২৩ কেজি চা পাতা উত্তোলন করলে বাগান থেকে তাদেরকে ৮৫ টাকা মজুরিদেয়া হয়। আর গড়ে এক সপ্তাহ পরপর মজুরি পান তারা। ২০০৭ সালে চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ছিলো ৩২ টাকা ৫০ পয়সা, ২০০৯ সালে ৪৮ টাকা, ২০১৩ সালে হয় ৬৯ টাকা। বর্তমানে তা হয়েছে ৮৫ টাকা। দেশে মোট ১৬০টি চা বাগানের মধ্যে মৌলভীবাজারে ৯২টি, হবিগঞ্জে ২৪, সিলেটে ২০, চট্টগ্রামে ২২, রাঙামাটি ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় একটি করে বাগান রয়েছে।মুরাদ হাসান