বাজার স্থিতিশীল করতে সরকারের উদ্যোগ শুল্কমুক্ত হচ্ছে চাল আমদানি
হুমায়ুন কবির খোকন : চালের বাজার স্থিতিশীল করতে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির শুল্ক সম্পূর্ণরুপে তুলে দেয়া হচ্ছে। চাল আমদানি শুল্ক তুলে দিতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে খাদ্য অধিদফতর। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। চাল আমদানির শুল্ক প্রত্যাহার করে শিগগিরই এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করবে এনবিআর।
খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো.কামরুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের কোনো দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উপর শুল্ক নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজি বন্ধ করতে ও কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং বাজারে চালের সরবরাহ বাড়াতে আমদানি শুল্কমুক্ত করা হচ্ছে। এতে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি বাড়লে বাজারে চালের দাম কমে যাবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, বিগত কয়েক বছরে ধানের বাম্পার ফলনের কারণে বাংলাদেশ চালের ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হয়। চালের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে কমতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে কৃষকের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে সরকার চাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপ করে। এতে চালের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে গিয়ে স্থিতিশীল হয়। কিন্তু চলতি বছর হাওর এলাকায় পাহাড়ি ঢলে বিপুল এলাকার বোরো ধানের জমি তলিয়ে যাওয়ায় চালের দাম বৃদ্ধি পেয়ে বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে উত্তরবঙ্গ ছাড়া দেশের সর্বত্র বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। এসময় চালের দাম নিুমুখী থাকার কথা থাকলেও চলতি বছর কিছুটা ভিন্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অকাল ভারি বর্ষণে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ সিলেট বিভাগের সম্পূর্ণ হাওর অঞ্চলে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, ঝড় ও নিচু এলাকার ফসলডুবিসহ নানা কারণে টার্গেট অনুযায়ী বোরো ফসল ঘরে তোলার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ঝড় ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ফসলের গুণগত মান ও পরিমাণ নিয়ে জনমনে একটি মনস্তাত্তিক সংশয় দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত নানা ধরনের সংবাদ ও আলোচনায় এ পরিস্থিতি আরও প্রতিকূলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে চালের বাজার মূুল্যের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চাল আমদানিতে আরোপিত শুল্কের হার সম্পূর্ণরুপে প্রত্যাহারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়।
খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মো.বদরুল হাসান বলেন, আমরা প্রথমে আমদানি শুল্ক ২৫ থেকে নামিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। পরে আবারও আমাদের মতামত চাওয়া হলে নানা বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার প্রস্তাব দিয়েছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
শুল্ক কেন তুলে দেয়া হচ্ছে-এমন প্রশ্নের উত্তরে বদরুল হাসান বলেন, হাওরের ক্ষয়ক্ষতিকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা চালের বাজার অস্থিতিশীল করছে। বাড়ছে চালের দাম। গণমাধ্যমে হাওর এলাকার ক্ষয়ক্ষতির বিষয় ব্যাপক প্রচার হওয়ায় মানুষের মধ্যে মজুদ প্রবণতা বাড়ছে। যার ৫ কেজির প্রয়োজন তিনি ২০ কেজি মজুদ করছেন। ব্যবসায়ীরাও এ সুযোগে মজুদ বাড়াচ্ছে। ২৫ শতাংশ শুল্ক থাকায় বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি একদম কমে গেছে। ফলে এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই মূলত চাল আমদানি শুল্কমুক্ত করা হচ্ছে।