মে দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী আমাদের মত কোনো সরকার শ্রমিকদের বেতন বাড়ায়নি
জাহিদ হাসান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের শ্রমিকদের বেতন যে হারে বাড়িয়েছে, সেই হারে বিশ্বের অন্য কোনো দেশের সরকার শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে এসে দেখলাম শ্রমিকরা মাত্র ৮’শ থেকে ৯’শ টাকা নিম্নতম মজুরি পেত। তখনই আমরা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর ব্যবস্থা নেই। পরে শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। কাজে ঢুকলেই তাদের বেতন প্রথমে ৩ হাজার, পরে ৫ হাজার ৩’শ টাকায় আনা হয়েছে। মে দিবস দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রমিকদের বেতন আমরা বাড়িয়েছি। কারণ যাদের দিয়ে দেশের উন্নয়ন হবে, তারাও যেন স্বস্তিতে সংসারটা চালাতে পারে সেটাই ছিল আমাদের লক্ষ্য।’
শ্রমিকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ট্রেনিং কাম ডরমেটরির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তারা যেন ভালোভাবে বসবাস করতে পারে, কাজের পরিবেশ যেন তৈরি হয়, সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আওয়ামী লীগ সরকার শ্রমিকদের জন্য কাজ করেছে। আমি শ্রমিকদের জন্য কাজ করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিল্প যদি না থাকে, কী দিয়ে খাবেন? কী দিয়ে চলবেন? বিভিন্ন খাতে নিয়োজিত শ্রমিকের পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানি শ্রমিক রয়েছে, যাদের সুনির্দিষ্ট চাকরি নেই। তাদের কল্যাণের দিকটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। তাদের জন্য কল্যাণমুখী কিছু করার পদক্ষেপ নেবো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু শ্রমিক নেতা জুটে যান, তারা কোথাকার শ্রমিক তা আমি জানি না, কিন্তু তারা নেতা সাজেন। কিছু এদের মধ্যেই কিছু শ্রমিক আছে যাদের দেশের খবর নাই, কিন্তু তারা দেশের বিরুদ্ধে বিদেশে নিউজ পাঠায়।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাদের সম্পর্কে আরো বলেন, এতে তাদের লাভ কী? তারা কী ভাড়া খাটেন। কোনো বিদেশী এজেন্সির ভাড়া খেটে এটা করেন কিনা সেটাই আমার সন্দেহ।
শ্রমের মর্যাদা এবং শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা যথাযথভাবে মিটিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মালিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুনাফা অবশ্যই করবেন। তবে তা যেন শোষণে পরিণত না হয়। শ্রমিকদের বঞ্চিত করে শিল্পের উন্নয়ন হবে না। কারণ, শ্রমিক হচ্ছে কারখানার প্রাণ।’ তিনি শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘শিল্প টিকে থাকলেই কেবল আপনাদের কর্মসংস্থান হবে। দারিদ্র্য দূর হবে। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখতে পারবে। তাই শিল্পের ক্ষতি হয়, এমন কোনো কাজে সম্পৃক্ত হবেন না।’ তিনি বলেন, কাজেই মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক হতে হবে হৃদ্যতাপূর্ণ। একে অপরের পরিপূরক হয়ে কাজ করলেই কেবল দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক হতে হবে হৃদ্যতাপূর্ণ। একে অপরের পরিপূরক হয়ে কাজ করলেই কেবল দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আর এটুকু ভরসা রাখবেন, আমার রাজনীতি আপনাদের জন্য, বাংলাদেশের কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের জন্য। কাজেই আমি আছি আপনাদের সঙ্গে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কান্ট্রি অফিসের পরিচালক শ্রীনিবাস বি রেড্ডি।
অনুষ্ঠানে মে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুকুর মাহমুদ, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের পক্ষে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান এবং কর্মজীবীদের পক্ষে বাংলাদেশ এমপ্লোয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি সালাউদ্দিন কাশেম খান বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার। সম্পাদনা : জাহিদ হাসান