বাবা -মার প্রতি সন্তানের দায়বোধ
মাহফুজ আল মাদানী
মা-বাবার মাধ্যমেই একটি শিশু এই সুন্দর পৃথিবীর মুুখ দেখে। যারা সন্তানদের প্রতি অধিক ¯েœহশীল, দয়াবান, লালনকারী এবং অত্যধিক ভালবাসা পোষণকারী। সন্তানকে বড় করার আশায় তারা সন্তানকে লালন-পালন করেন। তাদের সম্মান করা, তাদের খেদমত করা সকল সন্তানের জন্য অপরিহার্য। ইসলাম বাবা মার অধিকারকে দেখেছে অত্যন্ত সম্মানের চোখে। আল্লাহর ইবাদতের পরেই বাবা মার অনুসরণ-অনুকরণ এবং সদাচরণ করার কথা আলোকপাত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আপনার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাকেঁ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তাদের ‘উফ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদের ধমক দিও না এবং তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বলো। তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, ন¤্রভাবে বাহু নত করে দাও (সুরা ইসরা : ২৩,২৪)।
পিতা-মাতার আনুগত্য করা সন্তানের কর্তব্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের আনুগত্যকে আবশ্যক করে দিয়েছেন। তাদের অবাধ্যতা কবীরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত। হাদীস শরীফে এসেছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, পিতা-মাতার সন্তুষ্ঠিতে রবের সন্তুষ্টি, এবং পিতা-মাতার অসুন্তুষ্টিতে রবের অসুন্তুষ্টি’ (বোখারী)। তিনি অন্যত্র এরশাদ করেছেন, আল্লাহ পিতা-মাতার অবাধ্যতা ব্যতীত আর যে কোন পাপ চাইলে ক্ষমা করবেন। একজন সন্তানের পিতা-মাতা জীবিত অবস্থায় তাদের প্রতি অনেক করণীয় রয়েছে। যেমন, তাদের সাথে ভাল আচরণ করা, তাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা, তাদের কথা মেনে চলা, তাদের ধমক না দেয়া, নরম সুরে কথা বলা, তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবস্থা করা। তাদের সাথে এমন আচরণ না করা যাতে তারা কষ্ট পেয়ে উহঃ শব্দ উচ্চারণ করেন। তাছাড়া তাদের ইন্তিকালের পরও কিছু দায়-দায়িত্ব রয়েছে। তাদের জন্য আল্লাহর শিখানো দোআ করা, তাদের ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করা এবং অসিয়ত পূর্ণ করা। তাদের কবর জিয়ারত করা, তাদের বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ভাল আচরণ করা, তাদের মধ্যস্থতামূলক আতœীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা।
পিতা-মাতার সকল বৈধ আদেশ পালন করা সন্তানের জন্য ফরজ। কারণ, তাদের খেদমত করা সন্তানের জন্য জান্নাত লাভের উপায়। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, হজরত আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন তারা দুজন তোমার বেহেশত, তারাই তোমার দোযখ -(ইবনে মাজাহ)। অর্থাৎ পিতা-মাতার খেদমত করে তুমি জান্নাতে যাবে, নতুবা তাদের অবাধ্য হয়ে তুমি জাহান্নামের অধিবাসী হবে। পিতা-মাতা ভিন্ন ধর্মের অনুসারী হলেও তাদের সাথে ভাল আচরণ করতে হবে। আল্লাহর বাণী, আর দুনিয়াতে তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করো -(সুরা লোকমান ঃ ১৫)।
এমনকি আমাদের সকলের আদর্শ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন তাদের অনুগত হতে। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘হজরত আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরাইশদের সাথে মুসলমানদের সন্ধি স্থাপনকালে আমার মা আমার কাছে মুশরিকা অবস্থায় আসলেন। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার মা আমার কাছে এসেছেন, তিনি ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট নন। এমতাবস্থায় আমি কি তার সাথে সদাচরণ করব? তিনি বললেন হ্যাঁ, তার সাথে উত্তম ব্যবহার কর (বোখারী ও মুসলীম)। তবে, অবৈধ ও গুনাহের কাজে তাদের অনুগত হওয়া জায়েয নয়। হাদীস শরীফের ভাষ্যানুযায়ী, সৃষ্টিকর্তার অবাধ্যতার কাজে কোন সৃষ্ট জীবের আনুগত্য জায়েয নেই।
পিতা-মাতাকে কষ্ট দেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পিতা-মাতার অবাধ্যতার শাস্তি বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি দিয়ে দেন। হাদীস শরীফে এসেছে, হজরত বাক্কার বিন আব্দুল আযীয (রা.) তার পিতা হতে, তিনি তার দাদা হতে তিনি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি এরশাদ করেন, প্রত্যেক গুনাহ সমূহের শাস্তি আল্লাহ তাআলা কিয়ামত দিবস অবধি যতদিন তিনি চান দেরী করেন। তবে সীমালঙ্গন, পিতা-মাতার অবাধ্যতা ও রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি উহার অপরাধীকে পরকালের আগে ইহকালেই দেয়া হয়’ -(ইমাম বোখারী তার আদাবুল মুফরাদে বর্ণনা করেছেন)। আমাদের সমাজে পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তানের সংখ্যা কোনভাবেই কম নয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মা-বাবার সেবা করার তৌদিক দান করুন। আমীন।