অপার মহিমার শবেবরাত
ানেছারুদ্দীন বিন মিজান
আরবি মাসসমূহের মধ্যে শাবান একটি গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ মাস। মাসেই রয়েছে সীমাহীন কল্যাণ ও বরকতময় একটি রজনী। যা আল্লাহর পক্ষ থেকে শেষ নবীর উম্মতের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ। পূর্ববর্তী উম্মতদেরকে হাজার বছর হায়াত দেয়া হতো। যে দীর্ঘ সময় ইবাদত করে তারা জান্নাতের পথে অগ্রসর হতে পারতো। কিন্তু উম্মতে মুহাম্মদিকে আল্লাহ হায়াত দিয়েছেন সীমিত। কিন্তু এমনকিছু বিশেষ দিনরাত দান করেছেন, যেগুলিতে ইবাদতবন্দেগি করার মাধ্যমে বান্দা দ্রুত আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে সক্ষম। শবে বরাত তার মাঝে অন্যতম একটি। এ রাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে মোমিন বান্দাদের ওপর রহমতের বিশেষ বারিধারা বর্ষিত হয়। আল্লাহর দরবারে বান্দার বিগত বছরের সকল ভালোমন্দ কাজের হিসেব পেশ করা হয়। পাশাপাশি পরবর্তী এক বছরের জন্য ভাগ্যলিপি নির্ধারণ করা হয়। তাই এ রাতে আমাদের অবশ্যই ইবাদত করতে হবে।
যেমন রাত জেগে নামাজ পড়া, দোয়া, কুরআনতেলাওয়াত, জিকির-আজকার, দরুদ পাঠসহ যাবতীয় বন্দেগিতে মশগুল থাকা, পরদিন তথা ১৫ তারিখের রোজা রাখা। এছাড়াও এ রাতে নিজেকে সর্বপ্রকার শরিয়তগর্হিত কাজ থেকে বিরত রেখে মহান রবের প্রতি মনোনিবেশ হওয়া চাই। নিজের অতীত ত্রুটিবিচ্যুতির ওপর লজ্জিত হয়ে ভবিষ্যতে কোনো পাপকর্মে লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা জরুরি।
আজকাল শবে বরাতকে ঘিরে কিছু কুসংস্কারমূলক প্রথা প্রচলিত রয়েছে আমাদের সমাজে; যেমন আতশবাজি ও পটকাবাজি করা, হালুয়া-রুটির আয়োজনকে বাধ্যতামূলক ভাবা, মসজিদে আলোকসজ্জা করা, আনন্দ-উল্লাস করে হালুয়া-মিষ্টি বিতরণ করা, বাড়ি বাড়ি খিচুড়ি বন্টন করা, কবরস্থানে পুষ্প অর্পণ করা। এসব থেকে বিরত থাকা চাই। কারণ কুরআনও হাদিসের কোথাও এগুলির বৈধতা নেই। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন,যখন শাবানের মধ্যবর্তী রাত আসে, তখন তোমরা রাত জেগে নামাজ, তসবিহ, দরুদসহ অন্যান্য ইবাদতবন্দেগিতে মগ্ন থাকো। সঙ্গে পরের দিন রোজা রাখো। (সুনানে ইবনে মাজাহ)।
আল্লাহ তায়ালা এ রাতে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন। এরপর বান্দাদেরকে ডাকতে থাকেন, আছে কি কোনো ক্ষমাপ্রার্থী, যাকে আমি ক্ষমা করবো? আছে কি কোনো রিজিক অন্বেষণকারী, যাকে আমি রিজিক দান করবো? আছে কি কোনো বিপদগ্রস্ত, যার আপদ আমি দূর করে দেবো? (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৩৮৮)। এভাবে সুবহে সাদিক অবধি সব শ্রেণির বান্দাদেরকে বড় মায়া করে নাম ধরে ধরে তিনি ডাকতে থাকেন এবং ক্ষমা করতে থাকেন। তবে বিভিন্ন হাদিসসূত্রে জানা যায়, বিশেষ কিছু শ্রেণির লোকদেরকে তিনি ক্ষমা করেন না, যতক্ষণ না তারা খাঁটি অন্তরে তওবা করে সৎপথে ফিরে আসে। এমন শ্রেণির সংখ্যা প্রায় এগারো ১. মুশরিক তথা ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহর সঙ্গে যেকোনো ধরনের শিরকে লিপ্ত। ২. ঐ লোক, যে কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। ৩. ঐ ব্যক্তি, যে অপরের কোনো কল্যাণ দেখতে পারে না তথা পরশ্রীকাতরতায় লিপ্ত। ৪. সেই লোক, যে আতœহত্যা করার চেষ্টা করে। ৫. সেই ব্যক্তি, যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে; চাই তা নিকটতম আত্মীয় হোক কিংবা দূরবর্তী। ৬. ঐ ব্যক্তি, যে ব্যভিচারে লিপ্ত। ৭. সেই লোক, যে মদপানকারী তথা নেশাখোর। ৮. ঐ ব্যক্তি, যে গণকগিরি করে বেড়ায় বা গণকের কাছে আসা-যাওয়া করে। ৯. সেই লোক, যে মাতাপিতার অবাধ্য। ১০. ঐ লোক,যে জুয়াখেলায় লিপ্ত এবং ১১. টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী পুরুষ। (সহিহ ইবনে হিব্বান : ৫৬৬৫, আল মুজামুল কাবির ২০/১০৯, শোয়াবুল ইমান : ৬৬২৮)। শবে বরাতের পূর্ণ ফজিলত ও সে রাতে দোয়া কবুল হওয়ার জন্য এসব কবিরা গোনাহ থেকে খাঁটি দিলে তওবা করে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা আবশ্যক।