হেফাজতের ৬৮ মামলার তদন্ত শেষ হয়নি ৪ বছরেও
বিপ্লব বিশ্বাস : ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীসহ সারাদেশে হেফাজতে ইসলাম কর্মীদের নাশকতার ঘটনায় দায়ের করা ৮৩ মামলার মধ্যে এখনো ৬৮ মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। এর মধ্যে পুলিশ হত্যা মামলাও রয়েছে। পুলিশ দাবি করেছে, ঘটনার সঙ্গে শতশত মানুষের সম্পৃক্ততা থাকায় নির্দিষ্ট করে ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে দেরি হচ্ছে।
২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ পাঁচ জেলায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মোট ৮৩টি মামলা হয়। কেবল রাজধানীতেই মামলা দায়ের হয়েছিল ৫৩টি। গত চার বছরে পুলিশ ১৫টি মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে। এর মধ্যে বাগেরহাটে একটি মামলার বিচার শেষ হয়েছে। এতে সব আসামি খালাস পেয়েছেন। চার বছর আগে ২০১৩ সালের শুরুতে ইসলাম ধর্মের অবমাননা বন্ধে আইন পাসসহ ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল হেফাজতে ইসলাম। এটি অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাই হেফাজতের নেতৃত্বে ছিলেন। সংগঠনটির আমির ছিলেন হাটহাজারী দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তাকে সামনে রেখে এই আন্দোলনের সূচনা হলেও পরে এর রাজনৈতিক রূপও দেখা যায়। চার বছর আগের ওই ঘটনায় রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের ২২ কর্মীসহ ৩৯ জন নিহত হন। এসব ঘটনায় ৮৩ মামলায় ৩ হাজার ৪১৬ জনের নামসহ ৮৪ হাজার ৯৭৬ জনকে আসামি করা হয় বলে জানায় পুলিশ সদর দফতর। এসব মামলায় হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, নেজামে ইসলাম, খেলাফত মজলিশ, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়।
পুলিশ সদর দফতর জানায়, ৮৩টি মামলার মধ্যে রাজধানীর কলাবাগান থানায় দুটি, রমনা থানায় একটি, শেরেবাংলা নগর থানায় একটি এবং বাগেরহাটে ছয়টি ও নারায়ণগঞ্জে পাঁচটিসহ মোট ১৫টি মামলায় ২০১৪ সালে হেফাজতে ইসলাম, জামায়াত ও বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বাকিগুলোর তদন্ত চলছে।
এ বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম ‘২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকা- ঘটেছে, সেগুলোর ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার কয়েকটি থানায় বেশকিছু মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেদিন অনেক ঘটনা ঘটেছিল। সে জন্য প্রতিটি আলাদা ঘটনায় মামলা হয়েছে। কিছু মামলায় পুলিশ বাদী হয়েছে, কয়েকটি মামলায় ভিকটিমও বাদী হয়েছে। চল্লিশটিরও বেশি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে কয়েকটি মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিল করা হলেও অধিকাংশ মামলাই এখন পর্যন্ত তদন্তাধীন।’
এদিকে, চার বছর পর আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সেই হেফাজতে ইসলাম। কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি, পাঠ্যসূচিতে কী থাকবে বা থাকবে না সেই তালিকা দেওয়া থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্টের সামনের ভাস্কর্য সরানোর দাবি নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন ও গণভবনের অতিথির মর্যাদা পেয়েছে দলটি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হেফাজতকে জায়গা দেওয়ার কারণে চড়া মাশুল দিতে হবে। আর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলছে, কেউ অতীত কর্মকা-ের ভুল থেকে সরে আসলে তাদের স্বাগত জানানো উচিত। কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তি ও ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে আইন করাসহ ১৩ দফা দাবিতে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি পালন করে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। মতিঝিল এলাকায় প্রায় ৮ ঘণ্টা তান্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সাক্ষাৎ এবং তাদের চাহিদা রক্ষায় নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তকে ‘আত্মঘাতী’ পরিস্থিতির পূর্বাভাস হিসেবে দেখলেও খুব বেশি বলা হবে না। এসব মৌলবাদী সংগঠনের সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই।’
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ তেমনটা মনে করেন না। তিনি হেফাজতের তা-বকে ‘ভুল’ বলেই উল্লেখ করেছেন। হানিফ বলেন, ‘২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজত যে তা-ব করেছিল, সেটা ছিল ভুল পদক্ষেপ। কেন করেছিল তার ব্যাখ্যা তারাই ভালো দিতে পারবে। হয়তো যেটা করতে চায়নি, সেটা হয়েছে। সরকার এ বিষয়ে মোটেই নমনীয় নয়, মামলাগুলো চলছে।’ হানিফের মতে, হেফাজত নিজেকে ‘শুধরে’ নিয়েছে। সম্পাদনা : শিমুল মাহমুদ