দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর চাপ আছে
আফসান চৌধুরী : দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমানভাবে দেশের গণমাধ্যমের উপর চাপ বাড়ছে বলে যে প্রতিবেদন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশ করেছে এটার সঙ্গে একমত নই আমি। এটি একটি বাজে পশ্চিমা সংগঠন, যাকে কেউ পাত্তা দেয় না। ওদের ওখানেও তাদের কেউ পাত্তা দেয় না। বিভিন্ন দেশও গুরুত্ব দেয় না তাদের। লন্ডনে বসে তারা ঠিক করবে যে, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে? ওরা আসলে বুঝেও না গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আসলে কী। আগে তাদের বাংলাদেশের গণমাধ্যম সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। বুঝতে হবে। তারপর কথা বলতে পারে। বাংলাদেশের গণমাধ্যম মৌলিকভাবে পরিবর্তন হচ্ছে। এ পরিবর্তনের কারণে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার যে কাঠামোগুলো সেগুলোও পরিবর্তন হচ্ছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তা বোঝে না। এ নিয়ে কথা বলবে আমাদের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। যেমন বিএনপি। তারা বলবে এ দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই ইত্যাদি। এ নিয়ে কথা বলবে মৌলভীরা, জামায়াতে ইসলামীর লোকেরা। দেশে কথা বলার স্বাধীনতা কতটুকু আছে সেটা তো অন্য কথা।
অনলাইন সম্পাদনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এখন যতটা সাফল্য আছে পৃথিবীর আর কোনো জায়গায় কি এতটা সফলতা আছে? হয়তো আমাদের মান অতটা ভালো নয়। কিন্তু আমরা তো স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারি। বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপরে চাপ আছে। এই চাপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা লড়ছেন। বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রধান অন্তরায় সরকার নয়, মালিকপক্ষ। এটাই হচ্ছে আসল বিষয়। রাজুর কেসটা থেকেই বোঝা যাচ্ছেÑ মালিকে মালিকে সংঘর্ষ হচ্ছে। কর্মরত সাংবাদিকদের খেয়াল রাখা উচিত, তারা যেন মালিকের ঝগড়ায় আটকে না যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটা হয়। পৃথিবীর কোনো গণমাধ্যমই নিরপেক্ষ নয়। স্বাধীনও না। সে জায়গাটিতে বাংলাদেশ লড়াই করছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের প্রতিবেদনে শুধুমাত্র বড় বড় হাউজগুলোর কি অবস্থা, সেটা নিয়ে লিখেছে। সোশ্যাল ও অনলাইন মিডিয়া, এদেশের মিডিয়ার চেহারাটা যে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করে ফেলেছে এটা তাদের মাথায়ও ধরেনি। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা একটা গণতন্ত্রকামী রাষ্ট্রের জন্য কতটা প্রয়োজনীয় এটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এটা অতিব জরুরি। এটা কেন সীমাবদ্ধ হয়, এখানে কেউ প্রভাব বিস্তার করে কি না সেটা দেখা দরকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মতপ্রকাশের এত স্বাধীনতা থাকার পরও ট্রাম্পের মতো লোককে আটকানো যায়নি। গণমাধ্যমের নিজের ক্ষমতার চেয়ে বেশি ভাবা উচিত নয়। তার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। গণমাধ্যমের উচিত সমাজের সঙ্গে তার কি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, সেটা দেখা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, আমাদের রাজনীতি যেখানে অত্যন্ত দুর্বল সেখানে গণমাধ্যমের মানুষের সামাজিক সমস্যাসহ অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রতি অনেক বেশি আগ্রহ থাকা দরকার।
আমার মতে, গণমাধ্যমকর্মী এবং গণমাধ্যম মালিক এক নয়। গণমাধ্যম বলে কিছু নেই। গণমাধ্যমের মধ্যে মালিক আছে, কর্মী রয়েছে আর ভোক্তা আছে। অনলাইনের কারণে ভোক্তা আর কর্মীর মধ্যে ব্যবধানটা অনেক কমে গেছে। মালিকের সঙ্গে ব্যবধানটা আরও বেড়ে গেছে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে যদি আমাদের কোনো বিশ্লেষণ করতে হয়, এই সমীকরণটা যদি না থাকে তাহলে আমাদের পক্ষে তা বোঝা সম্ভব নয়।
পরিচিতি: সিনিয়র সাংবাদিক ও গবেষক
মতামত গ্রহণ : সাগর গনি
সম্পাদনা : আশিক রহমান