শিল্পী সমিতির নির্বাচন উদ্দীপনা ও উচ্ছ্বাসে তারকাদের মিলনমেলা
ইমরুল শাহেদ : শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল এফডিসি চত্বর হয়ে উঠেছিল তারকাদের মিলনমেলা। সকল তারকার মধ্যেই দেখা প্রবল উদ্দীপনা ও উচ্ছ্বাস। নূতন বললেন, মনে হচ্ছে আজ ঈদ। সূচন্দা বললেন, এমন উচ্ছ্বাস আগে কখনো দেখিনি।
কথা ছিল শিল্পী সমিতির নির্বাচন সকাল নয়টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয়ে যাবে বিকাল পাঁচটার মধ্যেই। কিন্তু শিল্পীরা শুটিংয়ে যেমন আসেন শিডিউল ব্রেক করে তেমনি তাদের নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও শিডিউল ব্রেক করে আসতে দেখা গেল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার মনতাজুর রহমান আকবর তাই নির্ধারিত সময়ের পর আরও দেড় ঘন্টা বাড়িয়ে সন্ধ্যে সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করেন। চুড়ান্ত ভোটার তালিকায় ৬২৪ জনের নাম থাকলেও ভোট দিতে উপস্থিত হয়েছেন ৫৫৭ জন। প্রায় সকাল সাতটা থেকেই এফডিসি চত্বর মুখরিত হতে শুরু করে। শুক্রবার দিন সাধারণত পরিচালক সমিতি ও প্রযোজক সমিতির অফিস খোলা থাকে না। নির্বাচন উপলক্ষে এদিন অফিস খোলা রাখা হয়েছে। খোলা রাখা হয়েছিল এফডিসির ক্যান্টিনটিও। এই ক্যান্টিনে চা-নাস্তা, বা দুপুরের খাবার খেতে কোনো তারকা আসেন না। অন্যান্য দিনের চাইতে এদিন ক্যান্টিনের বিভিন্ন পণ্যের দাম নেওয়া হয়েছে দ্বিগুণ। তারপরও ক্যান্টিনে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। সকাল থেকে তারকাদের দেখার জন্য উৎসুক লোকজন ভিড় করতে থাকে এফডিসির ফটকে। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল সেখানে। উৎসুক লোকদের ভিড় সামাল দিতে পুলিশকে হিমসিম খেতে হয়েছে। এক সময়ের সাড়া জাগানো খল-অভিনেতা ডিপজলকেও পুলিশ আটকে দিয়েছিল। তবে ভোট দিতে এসেছেন নবীন-প্রবীণ সব শ্রেণীর শিল্পীরাই। আগমগীর, সোহেল রানা, ফারুক তারা আনন্দের সঙ্গেই ভোট দিয়েছেন। যাদের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে দেখা-সাক্ষাৎ ছিল না, ভোটকে কেন্দ্র করে তাদের অনেকের মধ্যেই দেখা হয়েছে। চিত্রনায়িকা নূতন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বলেন, ‘আজ যেন আমাদের ঈদ হচ্ছে।’ তিনি গরমে টিকতে না পেরে ভোট চাওয়া থেকে বিরত হয়ে পরিচালক সমিতিতে এসে বসেছিলেন। নূতন বলেন, ‘গরম আর সেলফিওয়ালাদের ফাঁকি দিতে এখানে এসে বসেছি তারপরও রেহাই নেই।’ দুপুরের ব্রেক হতেই পপি, পূর্ণিমা ও রোজিনা একটু শীতল হওয়ার জন্য পরিচালক সমিতিতে এসে প্রবেশ করেন। একটু আগেই তারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ভোট চাইছিলেন। রুবেল ন্যাড়া মাথায় ঘুরঘুর করে ভোট চাইছিলেন মিশা-জায়েদ খান প্যানেলের জন্য। আর মাঝেমধ্যেই টিভি ক্যামেরায় কথা বলছিলেন। রিয়াজ ভোটাদের তালাশ করতে সবার আগে এসে দাঁড়ান। ভিতরের দিকে দাঁড়িয়েছিলেন মৌসুমী, ফেরদৌস, ওমর সানি, জায়েদ খানসহ প্রার্থী তারকারা। কেউ ফুল দিয়ে, কেউ মুচকি হেসে, কেউ গায়ে হাত বুলিয়ে ভোট চাইছিলেন। মৌসুমী অসুস্থ থাকায় তাকে কিছুটা মন মরা দেখা গেছে। তারপরেই ভোট চাইছিলেন হেসে হেসে। তবে সপ্রতিভ হয়ে নয়। এই নির্বাচনে কারো ভোট চাননি পূর্ণিমা। তাই কয়েকজন সাংবাদিক একত্রিত হয়ে পূর্ণিমার জন্য ভোট চাইছিলেন। ডন ভোট দিতে আসেন হুইল চেয়ারে বসে। তার সঙ্গে ছিল একজন নার্স। একটি দুর্ঘটনায় পায়ে ব্যথা পাওয়ার পর সেটা এখনো সেরে উঠেনি। কিন্তু তিনিও একজন প্রার্থী। শাকিব খান ভোট দিতে এসেছেন দুপুরের দিকে। তার পেছনে ছিল একদল লোক। তার আসার সময়ে ভোটগ্রহণে ব্রেক ছিল। তাই তিনি সাউন্ড কমপ্লেক্সে গিয়ে সময় ক্ষেপন করেন। কিন্তু অন্যান্য সময়ের মতো এবার আর পরিচালক সমিতিতে যাননি।
ভোট দিতে এসে কবরী হারিয়ে ফেলেছেন তার সেল ফোনটি। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সপ্তাহ খানেক আগেই স্যামসাং গ্যালাক্সি সিরিজের ফোন সেটটি কিনেছি। আজ ভোট দিতে আসার পর তা চুরি হয়ে গেছে।’ কবরী বলেন, ‘সবাই এফডিসিতে এসেছে ভোট দিতে অথচ এমন একটা জায়গায় নাকি চোরও ঢোকে! মোবাইল ফোন চুরি হয়ে গেছে, তা নিয়ে আমি যতটা না কষ্ট পেয়েছি, তার চেয়ে বেশি কষ্ট লেগেছে এফডিসির মতো একটা জায়গা থেকে এমন ঘটনা ঘটায়। ফোনসেট হারিয়ে আমি এখন বেশ বিপাকে পড়ে গেছি।’
ভোটকেন্দ্রে অপু-বুবলি!
অনেক দিন পর অপু বিশ্বাস এই প্রথম প্রকাশ্যে এলেন। অপু বিশ্বাস ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দীর্ঘ এক বছর পর আজ এলাম প্রাণের এফডিসিতে। অনেকের সঙ্গে দেখা হলো, কথা হলো, হাসি-আড্ডা সবই হলো। নিঃসন্দেহে আজ জীবনের অন্যতম সেরা একটা দিন ছিল। সবাইকে ধন্যবাদ এমন একটা সুন্দর দিন উপহার দেওয়ার জন্য।’ তবে তার মধ্যে আগের সেই অপু নেই। মা হয়েছেন। মুটিয়ে গেছেন অনেক। তিনি সকাল সাড়ে দশটার দিকে এফডিসিতে আসেন। তার কিছু পরেই আসেন বুবলী। এবারই ভোটার হয়েছেন বুবলী। গত কিছুদিন ধরে শাকিবকে কেন্দ্র করে অপু ও বুবলীর মধ্যে চলছে টানাপড়েন। শিল্পী সমিতির নির্বাচনে এসে হয়ে গেলেন মুখোমুখি। কিন্তু তারা মুখোমুখি হলেও কেউ কারো সঙ্গে কথা বলেননি। সাধারণ সৌজন্যতাবোধও দেখাননি। তারা সমিতির কার্যালয়ের সবার সঙ্গে আলাদাভাবে কুশল বিনিময় করেন। কুশল বিনিময় শেষে দুজনই ঢোকেন ভোট দিতে। ভোটকেন্দ্রের ভেতর তারা দুজন একসঙ্গে ছিলেন প্রায় ১০ মিনিট।
ভোট দিয়ে বেরিয়ে এসে বুবলি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি। সরাসরি এফডিসি থেকে বেরিয়ে যান। তবে অপু বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীকে শুভকামনা জানান। কিছু সময় পর তিনিও বিদায় নেন এফডিসি থেকে।
ক্ষোভ ঝাড়লেন ববিতা
দুপুর ১২টার দিকে ভোট দিতে আসেন চিত্রনায়িকা ববিতা ও তার বড় বোন চিত্রনায়িকা ও নির্মাতা সুচন্দা। ভোট দিয়ে বেরিয়ে এসে চিত্রনায়িকা ববিতা গণমাধ্যমের কাছে নিজের কিছু ক্ষোভ ঝাড়েন। তিনি বলেন, ‘বিগত দিনগুলোয় যাঁরা শিল্পী সমিতির নেতা ছিলেন, তারা কেউ শিল্পীদের কিংবা চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়নের জন্য কাজ করেনি। আমাদের জন্য কিছু করেনি। তাই এবার অনেক আশা নিয়ে এসেছি ভোট দিতে। আশা করছি, এবার যারা ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তারা আমাদের উন্নয়নের কথা ভাববেন, সে অনুযায়ী কাজ করবেন।’ কিন্তু সুচন্দা বলেন উল্টো কথা। তিনি নির্বাচন নিয়ে সবার এত আগ্রহ ও লোকসমাগম দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, ‘পুরো এফডিসি তো মানুষের ভিড়ে ফেটে যাচ্ছে। এত উচ্ছ্বাস আর কোনোবার দেখিনি। সবার এমন বিপুল অংশগ্রহণ আমাকে আশাবাদী করে তুলছে।’