মানবাধিকারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র
লিহান লিমা : সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর ক্রমাগত নির্যাতন ও মানবাধিকারের চূড়ান্ত সীমা লঙ্ঘন করায় আন্তর্জাতিক তদন্তের মুখে পড়েছে মিয়ানমার। যদিও দেশটি এখন এই তদন্ত এড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। মার্কিন প্রশাসনের অর্থায়নে পরিচালিত গণমাধ্যম দ্য ইরাওয়াদির প্রতিবেদনের শিরোনামে বলা হয়, ‘আরাকান প্রদেশে জাতিসংঘের তদন্ত এড়াতে মিয়ানমারের কৌশল।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, আরাকান প্রদেশে আন্তর্জাতিক তদন্ত থেকে পালানোর পথ খুঁজছে মিয়ানমার। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে আন্তর্জাতিক মিশনের প্রতি সমর্থন জানায় ইইউ। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয় দেশটির আর্মি ও পুলিশ বাহিনী উত্তর আরাকান প্রদেশে গণহত্যা ও ধর্ষণ চালাচ্ছে, যা জাতিগত নিধন এবং মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন।
মিয়ানমারে স্বচ্ছ্বতা, স্বাধীনতা এবং আইনগত অধিকারের অভাব রয়েছে। তাই ইউক্রেন ও সিরিয়ার মতো এই দেশটি ও আন্তর্জাতিক তদন্ত থেকে পালাতে পারবে না।
অং সান সু চির মিয়ানমারের প্রশাসনে আসার আগে সামরিক শাসনের সময় পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের ওপর অবরোধ আরোপ করলেও দেশটিতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা মিয়ানমার গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অর্থায়ন করে। তবে অং সান সু চির ক্ষমতা গ্রহণের পর নাটকীয় পরিবর্তন দেখা যায়। সামরিক সরকার ও গণতান্ত্রিক সমন্বয়ে মিয়ানমারে অদ্ভুদ সরকার তৈরি হয়। মানবাধিকার গণতন্ত্র, স্বাধীনতার আরও অবনতি ঘটে। রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত নিপীড়ন চালানোয় বিশ্বজুড়ে নিন্দার শিকার হওয়া ছাড়াও সু চির শান্তিতে নোবেল ও গণতন্ত্রকামী নেত্রী খেতাব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
মিয়ানমারের ওপর ইইউ-যুক্তরাষ্ট্রের এত আগ্রহের পেছনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন নয় অন্য কারণ রয়েছে। মিয়ানমারের বর্তমান নেতাদের ওপর মার্কিন ও ইউরোপিয়ান সংস্থার ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ মূলত সরকারের বিরুদ্ধে কিন্তু মানবাধিকার রক্ষার জন্য সতিকারের কোনো পদক্ষেপ আদৌ দেখা যাচ্ছে না। মূলত চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী। মিয়ানমারে ইইউ-মার্র্কিন হস্তক্ষেপ মূলত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে চীনের আধিপত্য ঠেকানোর একটি পদক্ষেপ। চীন মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রকল্প উন্নয়নে সহায়তা করছে। যা এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে চীনের বাণিজ্যিক রুটের সুরক্ষা প্রদান করবে। এছাড়া এই অঞ্চলে চীনের আধিপত্য চীনকে বৈশ্বিক ক্ষমতাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ মূলত মানবাধিকার অস্ত্রকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে মিয়ানমারকে বাগে আনতে চাইছে।
লেখক : থাইল্যান্ড ভিত্তিক ভৌগোলিক জার্নাল ‘দ্য নিউ অ্যাটলাস’র প্রধান সম্পাদক ‘জোসেফ থমাস’
সম্পাদনা : সারোয়ার জাহান।