গোল টেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনরা অনেক ডাক্তারের মধ্যে নৈতিক শিক্ষার অভাব
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের অনেক ডাক্তারের নৈতিক শিক্ষার অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে হেলথ কনজুমার রাইটস ফোরাম আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠক থেকে। শনিবার ‘চিকিৎসাসেবায় মেডিকেল ডিভাইসের মূল্য নির্ধারণ: বর্তমান প্রেক্ষাপট ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এম মোজাহেরুল হক বলেন, ডাক্তারদের ব্যবসা করা নিয়ে কোনো আইন না থাকলেও নৈতিকভাবে তারা ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না। ক্লিনিক ব্যবসা করলে অনেক সময় সেবার মানসিকতা থাকে না। অনেক সময় কিছু কিছু ডাক্তারের মধ্যে অবক্ষয় দেখা যায়।
ড. আলমাসুর রহমান বলেন, আইন করে ডাক্তারদের প্যাথলজির রেট, ডাক্তার ফি কমানো বা কমিশন বন্ধ করা যেতে পারে। কিন্তু একজন ডাক্তার কোনো রোগের জন্য কোনো টেস্ট করবেন, কয়টা ওষুধ দেবেন, অপারেশন করবেন কিনা, এটা একান্তই তার সিদ্ধান্ত। এরপরও অনেক ডাক্তার এগুলোর কোনোটিই মানছেন না। অনৈতিক কাজ করছে। তাদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষার অভাব আছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) শাহাদাত হোসেন বলেন, এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেখানে একজন শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছে, তার কথা শুনে মানসিক অসুস্থতা নিয়ে ফিরেছে। একজন ডাক্তার ভোক্তাদের সেবা না দিয়ে ব্যবসা করতে পারে না। সব ডাক্তার প্রতারক নয়, তবে প্রতারক ডাক্তারদের লাগাম ধরতে ভোক্তা অধিকার আইনের প্রয়োগ করতে পারেন ভোক্তারা।
গোলটেবিলে বাংলাদেশের মেডিকেল ডিভাইসগুলোর অতিরিক্ত মূল্য আদায়কারী এবং অবৈধ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদানের সুপারিশ করা হয়।
পান্থপথে অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল বৈঠকে জনঅধিকার ফাউন্ডেশনের অ্যাডভাইজার (অনারারি) এম রফিকুল ইসলাম মিলন আলোচনার বিষয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, হার্টে রিং স্থাপনে সরকারের দাম নির্ধারণের আগে দৈনিক গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগীর রিং স্থাপন করা হতো। বর্তমানে এই সংখ্যা ৮ থেকে ১০-এ নেমে এসেছে। একটি সিন্ডিকেটের প্রতারণার কারণে অনেকে রিং স্থাপন করতে পারছেন না। এই সিন্ডিকেট রোগীদের কাছ থেকে প্রতিবছর ১৪৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গত ৪ বছরে অতিরিক্ত আদায় করেছে ৫৯৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
এ সময় জনঅধিকার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন এম রফিকুল ইসলাম। এগুলোর মধ্যে ‘ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যালস এন্ড মেডিকেল ডিভাইস প্রাইসিং অথরিটি’ গঠন, অনৈতিক রিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শতাধিক চিকিৎসক, ২১টি প্রতিষ্ঠান ও ওষুধ প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, রিং বাণিজ্যের মাধ্যমে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য। সম্পাদনা : রিকু আমির