নাশকতা চালাতে বালককে হাতিয়ার করল পাক জঙ্গিরা
আশিস গুপ্ত, নয়াদিল্লি : ভারতে নাশকতা চালাতে এবার ১২ বছরের বালককে হাতিয়ার করল পাক জঙ্গিরা। অন্যদিকে কাশ্মীর উপত্যকায় পাকিস্তান ও সৌদি আরবের টিভি চ্যানেল প্রদর্শন বন্ধ করার নির্দেশ দিলো কেন্দ্রীয় সরকার। আর ক্রমশ বাড়তে থাকা অশান্তির আবহে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি শনিবার জানিয়ে দিয়েছেন পরিস্থিতি পরিবর্তনে তার ভরসাস্থল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত শুক্রবার রাতে অনুপ্রবেশের রাস্তা খুঁজতে পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে আশফাক নামে এক বালককে সীমান্তের এপারে পাঠায় জঙ্গিরা। পাকিস্তানি সেনার মদতেই ভারতে প্রবেশ করেছে সে। গতিবিধি সন্দেহজনক ঠেকায় জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরি জেলার নৌসেরা সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছ থেকে তাকে পাকড়াও করেছে ভারতীয় সেনা। সেনার তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, ‘ধৃত বালককে আশফাক আলি চৌহান বলে চিহ্নিত করা গেছে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ভিম্বার জেলার দুঙ্গার পেল গ্রামের বাসিন্দা সে। বাবা হুসেন মালিক পাক সেনার বালুচ রেজিমেন্টের কর্মী। শুক্রবার সন্ধ্যায় নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়ে আশফাক। জঙ্গিদের জন্য অনুপ্রবেশের রাস্তা খুঁজে বের করতেই তাকে পাঠানো হয়েছিল। রাতে টহল দেওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে তার সন্দেহজনক গতিবিধি সেনার নজরে পড়ে। সেনাকর্মীদের নির্দেশ পাওয়ামাত্রই আত্মসমর্পণ করে সে।’ এভাবে নিরীহ শিশুকে হাতিয়ার করার তীব্র নিন্দা করেছে ভারতীয় সেনা।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘একে মানবাধিকার লঙ্ঘন বললে ভুল হবে। নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন ওই এলাকায় কয়েক মিটার অন্তর অন্তর মাইন পোঁতা রয়েছে। শুধুমাত্র অনুপ্রবেশ নিশ্চিত করতে সেনা অধ্যুষিত এরকম বিপজ্জনক জায়গায় একটা নিরীহ শিশুকে পাঠাল কী করে জঙ্গিরা? পাকিস্তানি সেনাই বা কীভাবে মদত দিতে রাজি হল? এ থেকেই বোঝা যায়, ওদের বিবেক বলে কিছু নেই। নাশকতা চালানোই মূল লক্ষ্য। এই ধরনের অনৈতিক আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ বর্তমানে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের জিম্মায় রয়েছে আশফাক। তদন্তের প্রয়োজনে তাকে আরো জেরা করা হবে।
অন্যদিকে উপত্যকায় আর দেখা যাবে না পাকিস্তানি ও সৌদি আরবের টেলিভিশন চ্যানেল। অবিলম্বে সেই সব চ্যানেলের প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, কোনোরকম অনুমতি ছাড়াই পাকিস্তান ও সৌদি আরবের একাধিক চ্যানেল প্রদর্শন করা হচ্ছে জম্মু-কাশ্মীরের কেবল নেটওয়ার্কে। জম্মু কাশ্মীরের মুখ্য সচিবের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। জানা গেছে প্রায় ৫০টিরও বেশি পাক ও সৌদি চ্যানেল বিনা অনুমতিতেই দেখানো হচ্ছে উপত্যকায়। তার মধ্যে জাকির নায়েকের পিস টিভিও রয়েছে। এই সব চ্যানেলগুলিতে ভারতবিরোধী একাধিক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হচ্ছে। ভেঙ্কাইয়ার আগে মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোরও এই চ্যানেলগুলি বন্ধের কথা বলেছিলেন। অনুমতিহীন এই চ্যানেলগুলি প্রদর্শন বন্ধ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে বলেছিলেন রাঠোর। ইতিমধ্যেই রাজ্যকে এই বিষয়ে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশ কার্যকরী করার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনেরও বলে জানিয়েছেন রাঠোর। প্রশাসনকে স্থানীয় কেবল অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। নির্দেশিকা জারির সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মীরের কালেক্টররা জানিয়েছেন, নির্দেশ অমান্য করলে কেবল অপারেটরদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয়া হবে। এর আগে উরি হামলার পরে ভারতে পাক চ্যানেল ও পাক শিল্পীদের উপর কোপ নেমে এসেছিল। একাধিক পাক শিল্পীকে ভারত ছাড়তে হয়েছে। পাকিস্তানি টেলিভিশন চ্যানেলেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। ভারতের এই পদক্ষেপের পরে পাকিস্তানও পাল্টা হিসেবে ভারতীয় চ্যানেল ও সিনেমার প্রদর্শন বন্ধ করে দেয়। পাক অভিনেতা থাকায় পরিচালক করণ জোহরকে শিবসেনার কাছে এক প্রকার মুচলেকা দিয়েই নিজের ছবি অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল রিলিজ করতে হয়েছিল।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলেছেন, ‘কেউ যদি আমাদের বর্তমান অবস্থা থেকে তুলতে পারেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি যে সিদ্ধান্তই নেবেন, গোটা দেশ তা সমর্থন করবে।’ ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা সত্ত্বেও মোদি লাহোর গিয়েছিলেন। মেহবুবার মতে, এটাই মোদির শক্তির পরিচয়। তার কথায়, ‘আগের প্রধানমন্ত্রীও পাকিস্তান যেতে চেয়েছিলেন। তবে তার সাহসে কুলোয়নি।’ কাশ্মীরে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবদী শক্তিগুলোর সঙ্গে কোনো শর্ত ছাড়াই কেন্দ্রীয় সরকার আলোচনা করুক, চাইছে নানা মহল। কেন্দ্র স্পষ্ট করে দিয়েছে পাথর এবং আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না। আগে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যুবকদের প্ররোচনা দেওয়া বন্ধ করুক, চাইছে কেন্দ্র। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংক লুট করেছে জঙ্গিরা। তাদের আশ্রয় দিচ্ছে রাজ্যের একাংশ। দক্ষিণ কাশ্মীরে জঙ্গিদের ধরতে চিরুণি তল্লাশি শুরু করেছে সেনা। জঙ্গিদের ওপর চাপ বাড়াতেই এই পদক্ষেপ। আর তার সমালোচনা শুরু হয়েছে নানা মহল থেকে। এই তল্লাশি চলার সময় শোপিয়ানে সেনা চৌকিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। তাতে এক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন তিন জওয়ান। গতকাল শনিবার হান্দওয়ারায় ছাত্র বিক্ষোভ ঘিরে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। গত মাসে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে তার সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা সারেন মেহবুবা। তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর দেখানো পথে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনার দাবি করেছিলেন। এরপর আজ মোদির পাশে থেকে মেহবুবা বুঝিয়ে দিলেন কেন্দ্রের পাশে রয়েছে রাজ্য।
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জনাপঁচিশেক ছাত্র জখম হল কাশ্মীরে। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গতকাল শনিবার সকালে উপত্যকার হান্দোয়ারায় একটি মিছিল বের করেন কয়েকশ’ ছাত্রছাত্রী। সরকারি সূত্রের খবর, স্লোগান দিতে দিতে ছাত্ররা পুলিশের ওপর চড়াও হন। পুলিশ তাদের বাধা দিলে কর্মীদের লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুঁড়তে শুরু করেন ছাত্ররা। তখন তাদের থামাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ।
জম্মু-কাশ্মীর সরকার গত মাসে জানিয়েছিল, রাজ্য সরকারের কাছে খবর রয়েছে, উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলি ছাত্রছাত্রীদের একটা অংশের মদত পাচ্ছে। তার পরই পুলওয়ামার একটি কলেজে আচমকা তল্লাশি চালায় পুলিশ। কিছু ধরপাকড়ের ঘটনা ঘটে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ