দেশের সর্ববৃহৎ মেরিন ড্রাইভ সড়ক উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক পর্যটন নগরী হবে কক্সবাজার
ফরিদুল মোস্তফা খান, কক্সবাজার থেকে : কক্সবাজারবাসী ও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ সড়ক উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে কক্সবাজারের পর্যটনশিল্প এগিয়ে গেলো আরো কয়েক ধাপ। এটি দেশের সর্ববৃহৎ মেরিন ড্রাইভ ।
কক্সবাজারের কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রের পাড় দিয়ে চলে যাওয়া এই ৮০কি.মি দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের সড়ক পথটি ৪ লেন করার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অর্থনীতিতে কক্সবাজারের গুরুত্ব বিবেচনায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কটিও ৪ লেন করার ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মেরিন ড্রাইভওয়ে ’৭৫ এর পর থেকে দীর্ঘদিন অবহেলিত কক্সবাজারের সৌন্দর্য অবলোকনে শুধু পর্যটকদের আকর্ষণই করবে না বরং এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তত্ত্ব্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্ত এই মেরিন ড্রাইভটি নির্ধারিত সময়ের ১৪ মাস আগেই নির্মাণ কাজ শেষ করে।
শনিবার দুপুরে একদিকে পাহাড় আরেক দিকে সাগরের অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত ইনানী এলাকায় উপস্থিত হয়ে তিনি কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটারের এই সড়কটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সেনা প্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভের এক পাশে থাকছে নীল সমুদ্রের হাতছানি, অন্য পাশে থাকছে সবুজে ঘেরা বন-বনানী ও পাহাড়। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এ সড়কও যথেষ্ট আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা হয়েছে। পর্যটকরা যাতে সহজে কক্সবাজারে পৌঁছতে পারেন, সে জন্য এক হাজার ১৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এখন সুপরিসর বোয়িং বিমানও সেখানে ওঠানামা করতে পারবে।
মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধনের সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, আবদুর রহমান বদি এমপি, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন প্রমুখ।
গতকাল সকালে ঢাকা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে রওনা হয়ে সকাল ১০টায় কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছায় বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের উড়োজাহাজ মেঘদূত। বোয়িংয়ে চড়ে এই প্রথম কক্সবাজার যাত্রা হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন নগরীতে সুপরিসর উড়োজাহাজ চলাচলেরও সূচনা হল। কক্সবাজারের সম্প্রসারিত রানওয়ে ব্যবহার করে নামার পর বিমানবন্দরে বড় আকারের উজোজাহাজ চলাচল উদ্বোধনের পর মোনাজাত করেন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন- বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকারের নির্মাণ করা এ বিমানবন্দরটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এতদিন কেবল ড্যাস কিউ ৪০০ মডেলের ৭৪ আসনের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে এবং এর চেয়ে ছোট যাত্রীবাহী ও কার্গো উড়োজাহাজই এ বিমানবন্দরে ওঠানামা করত। কিন্তু কক্সবাজারকে একটি আধুনিক পর্যটন নগরী এবং মহেশখালীকে বিনিয়োগের ‘হাব’ হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরুর প্রেক্ষাপটে সরকার এ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করার কাজ শুরু করেছে।
এই সফরে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের ১০০ শয্যার ছাত্রী নিবাস, কক্সবাজার সরকারি কলেজের একাডেমিক ভবন কাম এক্সামিনেশন হল, কক্সবাজার সরকারি কলেজের ১০০ শয্যার ছাত্রী নিবাস, উখিয়ার বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব মহিলা কলেজের দ্বিতল একাডেমিক ভবন এবং মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়), এলজিইডির আওতায় কক্সবাজার সদর উপজেলার বাকখালী নদীর উপর খুর স্কুল ঘাটে ৫৯৫ মিটার পিসি বক্সগার্ডার ব্রিজ, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কক্সবাজার আইটি পার্ক, মহেশখালীতে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, মহেশখালীতে ইনস্টলেশন অব সিংগেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প, নাফ ট্যুরিজম পার্ক, কুতুবদিয়া কলেজের একাডেমিক ভবন এবং কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অফিস ভবনের ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি