গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিরোধের আইনটি খুব জরুরি
শাহরিয়ার কবীর
গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকারীদের শাস্তি প্রদানে আইন প্রণয়নের দাবি আমরা দীর্ঘদিন ধরেই করে করে আসছি। এ রকম একটা আইন করা জরুরি। কারণ যেভাবে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে, এটা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। পাকিস্তানিরা যে কাজটা ১৯৭২ সাল থেকেই করছে, মুক্তিযুদ্ধ বলে কিছু হয়নি, ভারত পাকিস্তানকে ভাগ করার জন্যই এ রকম করেছে। আমাদের এখানেও অনেক পাকিস্তানিপন্থি ঐতিহাসিক আছে, পলিটিক্যাল লিডার আছেন, যারা এ রকম অনেক কথা লিখেছেন। এখানে প্রকৃত ইতিহাস রক্ষা করার জন্য এ রকম একটা আইন জরুরি ছিল। আমরা ২০১৫ সালে প্রথম আইন কমিশনকে চিঠি দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের হলোকাস্ট জেনারেল এ্যাক্ট এর আদলে বাংলাদেশে এ রকম একটা আইন করতে হবে। এটা নিয়ে আমরা ২০১৬ সালে আইনমন্ত্রীকেও স্মারকপত্র দিয়েছিলাম আইন করার জন্য। আমাদের অনুরোধে আইন কমিশন আইনের একটা খসড়া করে ২০১৬ সালেই আইন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিল, সেটা এতদিন পর্যন্ত আইন মন্ত্রণালয় কোনো গতি করেনি। ফলে আমাদের অনুরোধেই এ সংক্রান্ত আইন করার প্রস্তাবটি সংসদে পাস করা হয়েছে। এটা খুব জরুরি ছিল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রক্ষা করার জন্য। এতে যারা ইতিহাস বিকৃতি করেন তাদের নিরুৎসাহিত করবে। গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিাহস নিয়ে যদি উল্টা-পাল্টা কেউ কিছু বলেন শাস্তি হয়ে যাবে। তার ফলে এমন ব্যক্তিরা নিরুৎসাহিত হবেন।
এদেশে বেশিরভাগ সময়ই তো স্বাধীনতাবিরোধীরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। রাষ্ট্রপরিচালনা তাদের হাতেই ছিল। তারা ক্ষমতায় এলে এই আইন মানবে না, বাতিলও করে দিতে পারে সে সম্ভাবনা তো আছেই। আমরা পরবর্তী প্রজন্ম বা তরুণ প্রজন্মের কথাই বলছি। এখন একটা বাচ্চা ছেলে ক্লাসে প্রথমে এসেই বলবে, আচ্ছা আমি ক্লাস ফোর-এ থাকতে পড়লাম, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন, ক্লাস নাইনে এসে পড়লাম, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেনÑ তাহলে আমি কোনটা লিখব খাতায়?
আমাদের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ হয়েছেন এ সংখ্যাটি প্রশ্নবিদ্ধ, সঠিক নয়!। এজন্যই এ ধরনের মৌলিক বিষয়গুলো, ইতিহাসের স্বীকৃত সত্যগুলোকে যাতে কেউ অস্বীকার করতে না পারে এবং তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করার জন্য এটা দরকার ছিল। মনে রাখতে হবে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তরুণদের জন্য বিশাল একটা অহংকারের বিষয়।
৫ হাজার বছরের ইতিহাসে এতবড় গৌরব, এতবড় অর্জন তো আর একটিও হয়নি। এই ইতিহাসগুলো যত সঠিকভাবে তারা জানবে, তাদের মধ্যে দেশাত্ববোধ জন্মাবে। অহংকারটা জন্মাবে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে। বাংলাদেশকে নিয়ে সেই অহংকার বুকে নিয়ে তারা অনেক দূর এগোতে পারবে। যে জাতির ইতিহাসে কোনো অহংকার নেই, সেই জাতি কিভাবে টিকবে? বহু জাতি আছে পৃথিবীতে, যাদের কোনো অর্জন নেই, তারা হারিয়ে গেছে। আমাদের এই গর্বের অর্জন ধরে রাখতে হলে এই আইনটা জরুরি বলেই মনে করি আমি।
পরিচিতি: সভাপতি, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি/সম্পাদনা: আশিক রহমান