৫৩টি জেলা কবে শেষ হবে জানে না দফতর বেঁধে দেওয়া সময়ে সাংগঠনিক কর্মসূচি শেষ করতে ব্যর্থ বিএনপি
শাহানুজ্জামান টিটু : বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সারাদেশে সাংগঠনিক কর্মকা- শেষ করতে পারেনি বিএনপি। গত ২২ মে থেকে দেশব্যাপী শুরু হওয়া এই কর্মসূচি শেষ হওয়ার কথা ছিল গতকাল ৭ মে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্ধেকেরও কম জেলায় কর্মিসভা করতে পারেনি। ইতোমধ্যে সময় আরও বাড়ানো হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পর নতুন করে চারটি জেলা ঢাকা উত্তর, সিলেট মহানগর, কক্সবাজার, নেত্রকোনায় সভা করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে ৫৩টি জেলায় কবে কর্মিসভা হবে, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য দফতর থেকে পাওয়া যায়নি।
দলটির কেন্দ্রীয় দফতর সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, দলটির ৭৭টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে গতকাল রোববার পর্যন্ত ১৯টি জেলায় কর্মিসভা করতে পেরেছে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। যেসব জেলায় কর্মিসভা করেছে তার মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা, চট্টগ্রাম মহানগর, কিশোরগঞ্জ, পাবনা, ঝিনাইদহ, যশোর, বরিশাল, শেরপুর, খুলনা, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, বরিশাল মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, সিলেট জেলা, ফরিদপুর ও নারায়ণগঞ্জ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, ঝিনাইদহ ও বরিশালে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এছাড়া অনুমতি না পাওয়ায় নাটোর, নড়াইল ও কুষ্টিয়ায় কর্মসূচি করতে পারেনি দলটি।
দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ বিষয়টিকে এড়িয়ে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৫১ জন নেতা সারা বাংলাদেশে নেতাকর্মীদের সাথে সভা করতে ও কথা বলতে যাচ্ছে কিন্তু আমরা দেখেছি, চট্টগ্রাম, ঝিনাইদহ, মাদারিপুরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের গু-ারা আমাদের সমাবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। আজকে কুষ্টিয়া ও নড়াইলে কর্মিসভা করতে দেয়নি। এতে প্রমাণ হয়, বর্তমান সরকার বিএনপিকে ভয় পায়। এ কারণে বিএনপির ছোট ছোট কর্মিসভা ঘরের মধ্যেও করতে দেয় না।
তবে মহাসচিব বলেন, একটি বড় রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে প্রতিযোগিতা থাকে । ছোটখাট কিছু ঘটনা এটা তেমন কোনো সমস্যা মনে করি না। এ কারণে কর্মসূচি হোঁচট খেয়েছে বা বিএনপির উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে, তা নয়। নেতৃত্বে সেশনজট হওয়ায় কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়। আওয়ামী লীগেও এটি আছে।
দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সাংগঠনিকভাবে সংগঠিত করে ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েই দলের এই কর্মসূচি নেয় দলটির হাইকমান্ড। উদ্দেশ্য ছিল দলের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা। কিন্তু এই কর্মসূচিতে তেমন সাড়া মেলেনি তৃণমূলের। দলের ঐক্যের পরিবর্তে সেখানে দেখা দিয়েছে আরও কোন্দল। বিবাদমান পক্ষগুলো আরও বেশি বেপরোয়া অবস্থা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। সাংগঠনিক সফরের আগে বেশ কয়েকটি জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া অধিকাংশ কমিটিই কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। ঘোষিত এসব কমিটি নিয়ে তৃণমূলে অসন্তোষ রয়েছে। ত্যাগী ও যোগ্যদের মূল্যায়ন না করে কেন্দ্রীয় নেতাদের মদদপুষ্টদের দিয়ে কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করার অভিযোগও রয়েছে। এসব কারণে জেলার রাজনীতিতে বিবাদমান পক্ষগুলো কেন্দ্রের কাছে এবং জেলার নেতাকর্মীদের কাছে শক্তি দেখাতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে।
গত ২২ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে ৭৭টি সাংগঠনিক জেলায় কর্মিসভা করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে ৫১টি দল গঠন করে বিএনপি। ২৫ এপ্রিল এই কমিটিগুলো গঠনের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আন্দোলন, নির্বাচন সব বিষয়ে আলোচনা হবে এবং আমরা আশা করছি, এই সফরের ফলে আমাদের দলের ঐক্য আরও বৃদ্ধি পাবে। আমাদের নেতাকর্মীরা আরও উজ্জীবিত হবেন। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি