প্রতিদিনের ২৭০ টাকায় ফ্ল্যাটের মালিক হবে বস্তিবাসী : গৃহায়নমন্ত্রী আবাসন শিল্পের উন্নয়নে প্রয়োজন ৫০ হাজার কোটির তহবিল
তরিকুল ইসলাম সুমন : ঢাকায় বসবাসকারী বস্তিবাসীদের জন্য ভাড়াভিত্তিক দশ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। গতকাল রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে সেন্টার ফর কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক (সিসিএন) আয়োজিত ‘জাতীয় অর্থনীতিতে আবাসন খাত’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, এখানে ২০ হাজার পরিবার ফ্ল্যাটে থাকার সুযোগ পাবে। প্রাথমিকভাবে ৫শ ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। প্রতিদিন খরচ করতে হবে মাত্র ২৭০ টাকা। বিভিন্ন দেশে আবাসন খাতে ঋণে ৩-৫ শতাংশের বেশি সুদ নেই। বাংলাদেশেও এ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা প্রয়োজন। আবাসন সেক্টরে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কোনো ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রিতে হয় না। এ বিষয়ে দেশের অর্থনীতিবীদদের ভাবতে হবে। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্যই ভ্যাট ঢালাওভাবে প্রচলন না করারও আহ্বান জানান। যা আবাসন খাতে বিরুপ প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, দেশের ৩০ উপজেলায়ও বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ঝিলমিল ও পূর্বাচল প্রকল্পে যাতে ধনী ও গরিব একত্রে বাস করতে পারে সেজন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ঝিলমিলে ১৩ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি পূর্বাচলে ৭২ থেকে এক লাখ ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান জানান, জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এই খাতটি যাতে এগিয়ে যেতে পারে এ জন্য প্রতিনিয়তই সরকারি ও প্রাইভেট সেক্টরের মধ্যে সংলাপ করা প্রয়োজন। যতবেশি সংলাপ হবে ততবেশি সমস্যার সমাধান হবে। সম্মিলিত উদ্যোগই এ খাতকে এগিয়ে নিতে পারে। ট্যাক্স আরোপ করলেই হবে না। ট্যাক্স সংগ্রহের জন্য প্রতিনিয়তই নতুন নতুন আইডিয়া জেনারেট করতে হবে। ট্যাক্স আদায়ের নামে বেশকিছু আইন-কানুন করে একটি জাল তৈরি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এসব জালের সুবিধা নিচ্ছে কিছু অসাধু কর্মকর্তা।
আলোচকদের মধ্যে আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, সিঙ্গাপুরকে আদর্শ সিটি বা মডেল হিসেবে আমাদের ডিটেইল এরিয়া প্লান (ড্যাপ) করা প্রয়োজন। জনসংখ্যার ভিত্তিতেই রাজউকসহ অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। এখানে শুধু গরিব লোক নয় ধনীদেরও আবাসন সমস্যা হচ্ছে। এদিকেও নজর দিতে হবে। দেশের আবাসন শিল্প জিডিপিতে ১৫ শতাংশ অবদান রাখছে। এ কারণে এ সেক্টেরে জন্য আলাদা একটি মন্ত্রণালয় হওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। এই সেক্টর কিভাবে সরকারকে সহায়তা করবে বা কিভাবে ট্যাক্স পরিশোধ করবে সেজন্যও এই সেক্টরের সঙ্গে এনবিআরের আলোচনা প্রয়োজন। এনবিআরকেও ক্ষুদ্র পরিসর থেকে বেরিয়ে কলেবর বাড়াতে হবে। এতে করে সরকারই বেশি লাভবান হবে। বড় লোকেরা যাতে ছোটলোকী করতে না পারে সেদিকেও নজর দেওয়ার আহ্বান জানান।
রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, সরকারের উচিত নতুন নতুন ট্যাক্স পেয়ার খোঁজা। ৮ লাখ মানুষ এনবিআরে নিবন্ধন করলেও মাত্র ৩৫ হাজার লোক কেন কর দেবে? এক্ষেত্রে ২৫-৩৫ বছরের বয়সের অনেকে আছেন যারা ট্যাক্স দিতে পারেন। তাদের চিহ্নিত করে আগামী ৫ বছরের জন্য ২০ হাজার টাকা কর বেঁধে দিতে পারে এনবিআর। এতে সরকারের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা আসবে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় অর্থনীতিতে এ সেক্টরের অবদান ১৫ শতাংশ। অথচ এখনো ঋণের সহজ লভ্যতা নেই। উচ্চ হারে ঋণ নিতে হচ্ছে। রিহ্যাবের ১১শ মেম্বার এখন নানা সমস্যার মধ্যে রয়েছে তার উপরে নতুন ভ্যাট আরোপ করা হলে নতুন করে সমস্যা তৈরি হবে। এখনই এ সেক্টেরের প্রতি সরকারের নজর দেওয়া প্রয়োজন। গত সাত বছর ধরেই এ সেক্টর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। শুধু এই সেক্টরের জন্যই সরকারে ৫০ হাজার কোটি টাকা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
সেমিনারে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, সকল ক্ষেত্রেই রাজস্ব আয় নিশ্চিত করার জন্য কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তা না হলে সমস্যা থেকেই যাবে। কোনো আইন বা নীতিমালা অন্যের কথায় না করে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে জনবান্ধব আইন করা প্রয়োজন।
বিজিএমইএর সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) বলেন, আবাসন শিল্পের এখন ক্রান্তিকাল চলছে। এ সেক্টরকে রক্ষার জন্য ন্যূনতম ৫০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা প্রয়োজন।
জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হুদা, মেজর জিল্লুর রহমান, নিলোফার চৌধুরী মনি, নূরজাহার বেগম মুক্তা রি রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু বকর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সম্পাদনা : শিমুল মাহমুদ