ফরেনসিক আলামত ছাড়াও ধর্ষণ প্রমাণ সম্ভব
বিপ্লব বিশ্বাস : ধর্ষণের ঘটনায় সাধারণত অতিদ্রুত ফরেনসিক পরীক্ষার দরকার হলেও এ ধরনের আলামত ছাড়াও তা প্রমাণ সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩ অনুযায়ী ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণে এমন ঘটনার শিকার নারীর জবানবন্দিই যথেষ্ট। আইনজ্ঞরা বলছেন, ‘সুষ্ঠু তদন্ত এবং পারিপার্শ্বিক ঘটনা দিয়ে যে কোনো অপরাধই প্রমাণ করা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনাও ব্যতিক্রম নয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় যত দ্রুত পরীক্ষার জন্য আসবে ততই আলামত পাওয়া আমাদের জন্য সুবিধাজনক হয়। আর যদি বড় ধরনের কোনো ইনজুরি থাকে তাহলে হয়তো সেটা ৫-৬ দিনের মতো থাকে। তবে কয়েকদিনের মধ্যেও ওই ইনজুরি ঠিক হয়ে যেতে পারে। তাই বলা যায়, সময়ের গড়ানোর সঙ্গে আলামত নষ্ট হতে থাকে।’
অন্যদিকে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ‘শারীরিক আলামত পাওয়া না গেলেও পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণ করা অসম্ভব কিছু নয়। তবে এজন্য দরকার সুষ্ঠু তদন্ত এবং তদন্ত প্রতিবেদন।’
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ এনে গত ৬ মে বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ মার্চ পূর্বপরিচিত সাফাত আহমেদ ও নাইম আশরাফ ওই শিক্ষার্থীদের জন্মদিনের দাওয়াত দেয়। ওইদিনই তারা ওই ছাত্রীদের বনানীর কে-ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বরে দ্য রেইন ট্রি হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে জন্মদিনের অনুষ্ঠান চলাকালীন দুই তরুণীকে হোটেলের একটি কক্ষে আটকে রেখে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে মামলার দুই আসামি। পরদিন বিষয়টি জানাজানি হলে হত্যার পর লাশ গুম করার ভয় দেখিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ভীতসন্ত্রন্ত হয়ে দুই তরুণী নিকেতনে স্ব স্ব বাসায় ফিরে আসে। প্রথমে ভয়ে বিষয়টি কাউকে না জানালেও পরে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তারা মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আসামিরা প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান হওয়ায় বনানী থানা পুলিশ প্রথমে তাদের মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
গত রোববার ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে। সেখানে তাদের ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ড. সোহেল মাহমুদকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। অন্য সদস্যরা হলেন মমতাজ আরা, নীলুফার ইয়াসমিন, কবিতা সাহা ও কবির সোহেল। তরুণীদের ফরেনসিক পরীক্ষার বিষয়ে ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘ভিকটিমদের মাক্রোবায়োলজি, রেডিওলজিক্যাল এবং ডিএনএ প্রোফাইলিং পরীক্ষার জন্য আনা হয়েছে। পরীক্ষা শেষে প্রতিবেদন পেতে ১৫-২০ দিন সময় লাগবে। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাবে।’ তবে ফরেনসিক আলামত ছাড়াও ধর্ষণের ঘটনায় অনেক দৃষ্টান্তমূূলক রায়ের উদাহরণ দক্ষিণ এশিয়ায় রয়েছে জানিয়ে অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ‘এখানে ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীর কথাই মুখ্য। একই সঙ্গে পারিপার্শ্বিক তথ্য-উপাত্তও কাজে আসে। ফরেনসিক প্রতিবেদনের জন্য পর্যাপ্ত আলামতের অভাবে আসামিদের পার পাওয়ার সুযোগ নেই।’ সম্পাদনা : আনোয়ার