এরশাদের ৪২ মামলার দুটিতে খালাস
রফিক আহমেদ : সামরিক শাসক হিসেবে ক্ষমতা থেকে পতনের পর এযাবৎকাল তার বিরুদ্ধে ৪২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার উপহার দুর্নীতি মামলায় ও ইতোমধ্যে রাডার দুর্নীতি মামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ খালাস পেয়েছেন। এছাড়াও এতোমধ্যে বেশ কয়টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে বলে জানা গেছে এবং কিছু মামলা হয়েছে স্থগিত। আর কিছু এখনো গলার কাঁটা হিসেবে রয়ে গেছে।
বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বা টিকে আছেন, পৃথিবীতে এমন ইতিহাসে বিরল। ৯ বছরের ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়ে এই রাজনীতিক প্রায় অর্ধযুগের মতো কারাগারেও ছিলেন। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাবেন বলে নিজেও আশা করেন না। তবে রাজনীতির মাঠে বরাবর আলোচিত থাকেন বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এই প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
এরশাদের আইনজীবীর দেওয়া তথ্যমতে, টিঅ্যান্ডটি মামলা, বিটিভির ক্যাবল ক্রয় মামলা, স্বর্ণ মামলা, আয়কর ফাঁকি মামলা, জাপানি বোট ক্রয় মামলা, রাজউক প্লট বরাদ্দ মামলা, হোটেল হলিডে-ইন দুর্নীতি মামলা, নির্বাচনী হিসাবে ফাঁকিবিষয়ক মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা স্থগিত হয়ে আছে দীর্ঘদিন।
বর্তমানে তার বিরুদ্ধে যে কয়টি মামলা সচল রয়েছে, তার মধ্যে আলোচিত মঞ্জুর হত্যা মামলা। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সেনা-অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান খুন হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর ২৪তম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার স্টাফ (জিওসি) মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুরকে ২ জুন হেফাজতে নেওয়ার পর গুলি করে হত্যার বিষয়ে এরশাদের বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি হয়েছে। ঘটনার ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মঞ্জুরের ভাই আইনজীবী আবুল মনসুর আহমেদ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি করেন। ১৯৯৫ সালের ২৭ জুন এরশাদসহ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। ২০ বছর আগে করা এই মামলাটি দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল। বর্তমানে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মঞ্জুর হত্যা মামলার বিচার চলেছে। আদালতের সর্বশেষ আদেশ অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছিলেন। কিন্তু এর আগেই ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক এক আদেশে বিচারক হোসনে আরা আকতারকে পরিবর্তন করা হয়। তার জায়গায় আসেন দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হাসান মাহমুদ ফিরোজ। এরপর বিচারক মামলাটি পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন। এরশাদের আইনজীবীর দেওয়া তথ্যমতে, গত ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের শেষ সময় ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ এতে ব্যর্থ হয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এর জন্য আরেকটি তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল বলে জানান তিনি। ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে এ মামলার বিচারকাজ চলেছে।
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার উপহার গ্রহণের দুর্নীতির মামলায়ও খালাস পেলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি রুহুল কুদ্দুছ ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চ সকাল ১১টা থেকে রায় পড়া শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে এক কোটি ৯০ লাখ ৮১ হাজার ৫৬৫ টাকা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছিল।
মামলাটি নিয়ে খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, এ মামলায় ১৯৯২ সালে এরশাদের তিন বছরের সাজা হয়। এর আগে শুনানি নিয়ে রায়ের দিন আদালত পরিবর্তনের পর গত ১২ এপ্রিল মামলার শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য গতকাল ৯ মে দিন নির্ধারণ করা হয়। সম্পাদনা: তরিকুল ইসলাম সুমন