জাস্টিস ডিলেইড দ্য অনলি হোপ
যায়নুদ্দিন সানী
প্রথমে ভেবেছিলাম এই টপিকে আর লিখব না। রেপ, দেশের আইনি অবস্থা নিয়ে এতো লিখেছি যে এখন আর ইন্টারেস্ট পাই না। মনে হয় পুরনো লেখা কপি পেস্ট করছি। পরে সিদ্ধান্ত পাল্টালাম। বলতে পারেন লোভে পরে কাজটা করলাম। ভারতীয় পিংক সিনেমার বাংলাদেশি ভার্সন যেভাবে বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে, তাতে এই টপিকে না লেখা মানে দারুণ এক সুযোগ হেলায় হারানো। আই মিন পাঠকের মনোরঞ্জন করার সুযোগ মিস করা। এই টপিকের ওপর যে কোনো খবর এখন পাবলিক গোগ্রাসে গিলছে।
ধর্ষিতার সাক্ষাৎকার হিট, ধর্ষকের বাবার অডিও তো সুপার হিট। সেই সাক্ষাৎকার কমবেশি সবাই শুনে ফেলেছেন। আগের দিনের ‘যা ঘটেছে সম্মতিতেই ঘটেছে’ থেকে সরে আসাতে সবাই বেশ খুশি মনে হলো। খুশির কারণ, উনার কথায় কিছুটা পরাজয়ের সুর। ওদিকে ধর্ষক বাবাজি ভেগেছেন। সে কারণে কিছুটা হতাশা তৈরি হলেও পুলিশের নড়ন চড়ন দেখে মনে হচ্ছে, ফাইল নড়ছে, তবে ধীরে। এনিওয়ে, যেহেতু মি রেপিস্ট পগার পার, তাই উনার জবানি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সোস্যাল মিডিয়ায় যে তিনি উপস্থিত, তা পত্রিকায় চলে এসেছে। ফলে পুলিশি তৎপরতা নিয়ে কিছুটা ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। সম্ভবতঃ ফাইনাল ডিসিশান এখনো নেয়নি, উনাকে ধরব? না আরও খাব?
এছাড়া তেমন নতুন কিছু এখনো ঘটেনি। আপাততঃ তাই পুরনো ঘটনার এনালাইসিস চলছে। সোমবার পর্যন্ত বাসায় থাকলেও, পুলিশ কেন ধর্ষকের খোঁজ করেনি। উনি ঘাপটি মারবার পরেই কেন পুলিশ গেছেন তল্লাশি চালাতে। সন্দেহের সুঁই সবাই একই দিকে ঘোরাচ্ছে, ভেরি প্রেডিক্টেবল, ‘তারা খেয়েছেন’। এদিকে যে পুলিশ অফিসারটি মামলা নিতে গড়িমসি করছিলেন, তিনি পাঁচ দিনের ছুটিতে। অ্যানাদার এক্সপেক্টেড নিউজ, সম্ভবতঃ তিনিও…।
যাই হোক, এমন ঘটনার চিত্রনাট্যে যা যা থাকে, সে অনুযায়ীই কাহিনী এগোচ্ছে। পুলিশের কেস নিতে আপত্তি, অতঃপর কেস নেওয়া, মিডিয়ার প্রেসার, এরপর নড়েচড়ে বসা, লোক দেখানো কিছু অভিযান আন্দ…সেটাই এখনো পরিষ্কার না। পুলিশ শেষ পর্যন্ত কি করবে। একটা রটনা বাজারে এসেছে। পঁচিশ লাখে ব্যাপারটা মিউচুয়াল করার। আইডিয়াটা পুরনো, গরিবের জন্য ছিল এক হাজার আর এখন লাখের ঘরে। এখনো আত্মহত্যা হয়নি এই যা। আপাততঃ অপেক্ষা পরের কাহিনী নিয়ে। সেটা আসতে যা দেরি হচ্ছে তা হচ্ছে সম্ভবতঃ দর কষাকষি চলছে বলে।
ফ্রান্সের নির্বাচনে ম্যাক্রোর বিজয় ফেসবুকে অনেকটাই নীরবে পার হলো। ব্যাপারটা যদিও প্রত্যাশিত ছিল, তারপরও এতোটা নীরবতা আশা করা হয়নি। বাঙালি যেভাবে আমেরিকা আর ফ্রান্স নিয়ে আহ্লাদ শুরু করেছিল, তাতে খবরটা নিয়ে কিছু ঘ্যানঘ্যান আশা করেছিলাম। কেউ কেউ আবার দেখলাম, উনার বয়স্ক স্ত্রী নিয়ে কিছু বলে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলেন। খুব কাজে দিচ্ছে না। ঠাকুরগাঁও খুব একটা হালে পানি পাচ্ছে না। ওদিকে মূর্তি ইস্যু আপাততঃ বন্ধ আছে। নতুন কোনো খবরও নাই যে এখন প্রথম পাতার বনানীকে সরাবে। ইন আ নাট শেল, বনানী ইস রকিং।
ফেসবুক কিংবা পত্রিকা পাঠক যথারীতি দুভাগে ভাগ হওয়া শুরু করেছে, ‘কেন গেল এত রাতে’ বনাম ‘গিয়েছে তো কি হয়েছে’। দুই গ্রুপে কারা কারা আছেন কিংবা তারা কি মানসিকতা ধারণ করেন, বোঝাই যাচ্ছে। এক গ্রুপ নীতি নিয়ম এসবে সব সমাধান খুঁজছেন আর অন্য গ্রুপও বোঝাতে চাইছে মানসিকভাবে তারা বেশ আধুনিক। কিন্তু মনে মনে? একটা জায়গায় সম্ভবতঃ দুজনই এক। দুজনেই চাইছে ঘটনা এঞ্জয় করতে। আমি? ঐ একই। সারাক্ষণ ফেসবুক আর পত্রিকা ঘাঁটছি, নতুন কি খবর পাওয়া যায়।
ইতোমধ্যে নতুন যেসব অযাচিত খবর এসেছে তার একটি হচ্ছে সাকিব আল হাসান হচ্ছেন এক ধর্ষকের ব্যবসায়িক পার্টনার। এবার কি করা? আপন জুয়েলার্স বর্জনের দাওয়া পার্টি মৃদু ঝামেলায় পড়েছে। সাকিব সাহেবকে একই ব্র্যাকেটে আনা যাচ্ছে না আবার ফর্মুলায় পরিবর্তনও আনা সমস্যা। মধ্যপন্থা হচ্ছে, এই নিয়ে আলোচনা না করা। সেটাই চলছে।
কিছু আঁতেল দেখলাম সরকারকে উপদেশ দিয়েছেন, ধর্ষককে গ্রেফতার করে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। পাবলিক সেন্টিমেন্ট বেশ উত্তাল। এমন অবস্থায় যদি ধর্ষক সাহেব পার পেয়ে যান, ধরে নেওয়া হবে সরকার বেশ বড়সড় উৎকোচের বিনিময়ে কাজটা করেছে অ্যান্ড ইন দ্যাট কেস, ব্যাপারটা বেশ জঘন্য কিসিমের সুইসাইড হবে। যুক্তিটা মন্দ না। এই কেসে যদিও পুলিশ বাহিনীর আয়ের মহা সুযোগ আছে, তারপরও না করলেই মনে হয় ভাল হয়। করলেই বা কি? শিশু রাজন কেসে সেই পুলিশের কি কিছু হয়েছিল? তেমন কিছু তো দেখলাম না। যেভাবে ধর্ষককে পালাবার সুযোগ দেওয়া হলো, তাতে মনে হচ্ছে ইনিশিয়াল সিদ্ধান্ত ইনকাম করার। পরে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। সো, সরকারের কতটা ওপর মহল এই ব্যাপারে নাক গলাচ্ছে এবং সেখান থেকে কি সরকারি সিদ্ধান্ত আসছে, আগামী কয়েকদিনের ঘটনায় তা বোঝা যাবে। এই মুহূর্তে গ্রেফতার হলে একটা মজা হবে। কমবেশি সবাই ভুলে যাব, এই কেস নিতে গড়িমসি করেছিল পুলিশ আর ধর্ষক খুঁজতে কয়েকদিন পরে গিয়েছিল পুলিশ।
মূল কেসে তেমন কিছু হবে বলে মনে হয় না। কালক্ষেপণ আর টালবাহানা চলবে। ধর্ষকের প্রাক্তন স্ত্রী আর ধর্ষিতাদ্বয়ের যোগসাজশের এক ষড়যন্ত্র ফর্মুলা এনেছেন ধর্ষকের পিতা। মনে হয় না পাবলিক খাবে। আদালতের কথা জানি না। আপাততঃ স্রোত ধর্ষিতাদের ফেভারেই আছে। তবে কতক্ষণ থাকবে, সেটাই কথা। বাঙালি এক খাওয়া বেশিদিন খায় না। আর স্মৃতিও গোল্ডফিস কিসিমের। সো… খেলার মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, বাঙালি ঠিক কখন উৎসাহ হারাবে। দ্য অনলি হোপ ফর রেপিস্ট।