হাওরে ফসলহানি, ঝরে পড়েছে ২২ ভাগ শিক্ষার্থী
নুর উদ্দিন, ছাতক (সুনামগঞ্জ) : সুনামগঞ্জে চৈত্র মাসে হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে হাওরের ৯০ ভাগ বোরো ফসল কৃষকের চোখের সামনে পানির নিচে তলিয়ে যায়। ধান গাছ পচে পানি বিষাক্ত হয়ে মরে মাছ, হাস, গরু, মহিষসহ পাখ-পাখালি। স্বাস্থ্য হুমকিতে পড়ে হাওরের মানুষ। দু’মুঠো ভাতের জন্য হাওর জুড়ে হাহাকার দেখা দেয়। শিক্ষাক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। ফসলহানির প্রভাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২২ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। এ পরিসংখ্যান আরও বাড়তে পারে। বর্তমানে খাবারের সন্ধানে কলেজ-বিদ্যালয় পড়ুয়া অনেক ছেলেমেয়ে এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দিয়েছে। কেউ এলাকায়, কেউ এলাকার বাইরে কাজ করছে। কেউ কেউ লেখাপড়া বাদ দিয়ে এলাকা ছাড়ার চিন্তা করিতেছেন। দেখার হাওর পাড়ের বাহাদুরপুর গ্রামের কৃষক আতাউর রহমান উদাস নয়নে সোনালী বোরো ফসল নিয়ে ডুবে যাওয়া দেখার হাওরের দিকে তাকিয়ে আছেন। পচা ধানের গন্ধ বাতাসে এসে নাকে লাগছে। দেখার হাওরে তাঁর পাঁচ একর জমি তলিয়েছে। একমাত্র এই বোরো ফসলের আয়েই চলত তাঁর সংসার। এ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে, অনার্স পড়ুয়া মেয়ে, ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আরেক মেয়ের লেখাপড়া চলতো। ফসল ডুবে যাওয়ায় তার জীবনের সব ছন্দ হারিয়ে গেছে। এখন খাবার জোগানোর জন্য ভোরে উঠে ১৫ টাকা কেজির ওএমএস দোকানে ভিড় করতে হয় ১২ মাস ঘরের ভাত খাওয়া আতাউরের মতো হাজারো কৃষককে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার নতুনগাঁও গ্রামের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র ইমরান আলী গত ২৮ এপ্রিল রাতে এক ভাই ও দুই বোন নিয়ে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় গার্মেন্টে কাজ করতে চলে গেছে। তার বাবা দারদেনা করে দেখার হাওরে তিন একর জমিতে বর্গাচাষ করেছিলেন। সম্পূর্ণ ফসল তলিয়ে যাওয়ায় দেনাদারের টাকা পরিশোধ ও খাবারের সন্ধানে তিনি বাড়ি ও কলেজ ছেড়ে চলে যায় কাজের সন্ধানে। শুধু ইমরান আলীই নয়, শত শত শিক্ষার্থী এখন জীবন বাঁচাতে কাজের সন্ধানে পরিবারের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে।
সম্প্রতি এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ভর্তি ফি, বইয়ের খরচের কথা চিন্তা করে অন্ধকার দেখছে কৃষকরা। ইমরান আলী বলেন, ঘরে ভাত নেই, পড়ালেখা করব কিভাবে। পরিবারের মুখে দু’মুঠো অন্ন ও বাবার দেনা শোধে আমরা চার ভাইবোন গার্মেন্টে কাজ করতে যাচ্ছি। সম্পাদনা: মুরাদ হাসান