শিক্ষার উদ্দেশ্য ভূলুণ্ঠিত : খালেদা জিয়া
কিরণ সেখ ও শেখ রিয়াল : শিক্ষার সকল উদ্দেশ্য আজ ভূলুণ্ঠিত বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
গতকাল শনিবার রাজধানীর লেডিস ক্লাবে বিএনপি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা ও আমাদেশ ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী মতের লোকজনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, মোদ্দাকথায়, শিক্ষার সকল উদ্দেশ্য আজ ভূলুণ্ঠিত। সুশাসন, আইনের শাসন আজ নেই বললেই চলে। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে ক্ষমতাসীন সরকার সকল বিরোধী মতকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। এই অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা দেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনব, প্রতিষ্ঠা করব মানুষের অধিকার। আমরা জানি এ লড়াই কঠিন লড়াই। কিন্তু যে জাতি লড়াই করে স্বাধীন হয়েছে, তাদের কাছে এ লড়াই কোনো কঠিন লড়াই নয়।
তিনি বলেন, জনইচ্ছার প্রতিফলনে আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে ‘ভিশন ২০৩০’ তে আমরা যা বলেছি তা প্রথম পাঁচ বছরেই বাস্তবায়িত করা হবে। শিক্ষা খাতে জিডিপির শতকরা পাঁচ ভাগ ব্যয় করে দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ ও অন্যান্য শিক্ষা সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এমন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলব যাতে শিক্ষা শুধু ডিগ্রি অর্জনের হাতিয়ার হবে না, হবে জীবনে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার হাতিয়ার। সর্বপর্যায়ে শিক্ষা অর্জনের সুযোগ লাভের ক্ষেত্রে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, জেন্ডার ও অর্থনৈতিক বাধাসমূহ দূর করা হবে। শুধুমাত্র ডিগ্রি প্রাপ্তির মোহ থেকে দেশের তরুণদেরকে মুক্ত করতে হবে। সামর্থ্য, মেধা ও কর্মসংস্থানের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা ও শিক্ষকতায় পরিবর্তন আনতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে এদেশের ছাত্র সমাজ শিক্ষাকে সময়োপযোগী ও কল্যাণমুখী করার জন্য অনেক আন্দোলন করেছেন, অনেক রক্ত দিয়েছেন। কিন্তু এখনো শিক্ষা সমস্যার সমাধান হয়নি।
বেগম জিয়া বলেন, আমি নিজে শিক্ষাবিদ নই। কিন্তু বিভিন্ন মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে দেখেছি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন। এমন পরিবর্তন প্রয়োজন যা দেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষাকে প্রতিফলিত করবে। শিক্ষার সুফল সকল মানুষের জীবনে পৌঁছাবে। শিক্ষা হবে আন্তর্জাতিক পরিম-লে উন্নত জাতি হিসেবে আমাদের পরিচিতি ও মাধ্যম। শুধু সীমিত লোকের অর্থ বা বিত্ত দিয়ে আমরা এই পরিচিতি অর্জন করতে পারব না- বলেন তিনি।
তিনি অভিযোগ করেন, শিক্ষা মানুষকে গণতন্ত্রের প্রতি, ভিন্নমতের প্রতি, ভিন্ন মতপ্রকাশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শিক্ষা দেয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার শিক্ষার এই মৌলিক লক্ষ্যকে পদদলিত করছে। তারা শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার দাবি করলেও দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, ভিন্ন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আজ স্বীকার করতে হবে যে, আত্মতুষ্টির কারণে পাসের হার বাড়িয়ে আমাদের শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি ঘটেছে। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে না পারলে আগামী দিনে আমাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে। আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ব। বর্তমানে বাংলাদেশে একাধিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। প্রত্যেকটি ব্যবস্থার লক্ষ্য ভিন্ন ভিন্ন। এই ভিন্নতার সঙ্গে সমাজে বিরাজমান যে শ্রেণী ও অর্থনৈতিক বৈষম্য আছে তা সম্পর্কিত। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি, সমাজ যেখানে মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য নিজেই অর্থের সংস্থান করে, সমাজের সুবিধাভোগীরা সেখানে ভিন্ন ধরনের শিক্ষার জন্য অর্থ ব্যয় করে।