অভিমত সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেনের বিএনপি সরকারে যেতে না পারলেও চাপ তৈরি করতে পারবে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : বিএনপির ভিশন-২০৩০ সরকার ও আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এখন আওয়ামী লীগ ও সরকারকে নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে। কারণ যে কথা এর আগে কোনো দল বলেনি সেই কথা বিএনপি বলেছে। সরকার চায় তাদের মতো করে। কিন্তু সেটা মনে হয় হবে না। কারণ বিএনপির লক্ষ্য ক্ষমতাসীন হওয়া। সেই জন্য তারা ভিশন ২০৩০ দিয়েছে। তারা যে ভিশন দিয়েছে তা অত্যন্ত গোছালো। পরিকল্পিত। বাস্তবসম্মত ও গ্রহণযোগ্য। বাস্তবায়ন করা কঠিন হলেও অবাস্তব বলা যাবে না এই কথাগুলো বলেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ও বুদ্ধিজীবীরা যেমন বাংলাদেশের কথা বলে আসছে অনেকদিন ধরেই- সেই পথেই তারা যাচ্ছে। যেমন দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, ন্যায়পাল নিয়োগ, কমিশনগুলোর বিষয়েও পরিকল্পনা দিয়েছে। এছাড়াও তারা আরও প্রস্তাব দিয়েছে দেশের বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে। অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হওয়ার কারণে এটাতে অনেক কাজ করার সুযোগ আছে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো তারা কালো আইন বাতিল করার কথাও বলেছে। বেশ কয়েকটি আইন আছে ওই সব আইন বাতিল করা জরুরি। এছাড়াও বিএনপি আগামী দিনে ক্ষমতায় গেলে যে সরকার গঠন করবে, প্রশাসনকে যেভাবে ঢেলে সাজাতে চাইছে ও তাদের যে নীতি হবে সবগুলোই তারা জনকল্যাণমুখী করে করতে চাইছে এটা ভালদিক।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিএনপির ভিশনটি নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্থমন্ত্রী বলেছেন ভাল প্রস্তাব। আর একজন মন্ত্রী এটাকে ইতিবাচক বলেছেন। মনে হয় তারা পড়ে দেখেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতারা ও অন্যান্য মন্ত্রীরা যেসব কথা এই বিষয়ে বলছেন তাতে করে মনে হয় তারা ভিশন পরিকল্পনা ও প্রস্তাবটি পড়েনি। পড়লে এইভাবে বলতে পারতেন না। কারণ আওয়ামী লীগের কাছ থেকে এটা আসা করা যায় না। যেখানে বিএনপি থ্রি জি সরকার করে সমন্বয় করার কথা বলেছে, সেখানে আওয়ামী লীগের মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের কথা বলছে। এই সব বিষয় নিয়ে অনেক হাসাহাসিও হয়। আওয়ামী লীগের মতো দলের কাছ থেকে জনগণও এটা আশা করে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাদেরও বুঝতে হবে বিএনপি থ্রি জি সরকার বলতে কি বুঝিয়েছে। আসলে সেটাই হলো প্রকৃত শাসন। যদি বাস্তবায়ন করা যায়।
তিনি বলেন, বিএনপি এখন এই সব কথা বলছে। কিন্তু তারা যখন সরকারে ছিল তখন কিন্তু এই সব কথা আগে বলেনি। তাদের আগেই বলা উচিত ছিল। তারপরও বলবো দেরীতে হলেও উপলব্ধিটা ভাল।
তিনি বলেন, বিএনপি ভিশন দিয়েছে সরকার হতে পারলে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য নিয়ে। বেশ কয়েকটি প্রস্তাব বাস্তবায়ন করার জন্য ক্ষমতাসীন হতে হবে এবং দুই তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হতে হবে। তবে তারা যদি সরকারে আগামী মেয়াদে নাও যেতে পারে অন্তত বিরোধী দল হবে। বিরোধী দল হলেও তারা সংসদে কথা বলতে পারবে। এইসব কথা আগে সংসদে কেউ বলেনি। বিএনপি সংসদে এগুলো বললে তখন সরকার চাপে পড়বে। চাপে পড়লে অনেক উদ্যোগ নিবে।
তিনি বলেন, আসলে জনগণকেও বুঝতে হবে দেশে কেমন শাসন ব্যবস্থা চালু হওয়া উচিত। সেই শাসন ব্যবস্থার জন্য জনগণেরও দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্ব তারা ঠিকভাবে পালন করতে পারলে আগামী দিনে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে।
তিনি বলেন, বিএনপির উচিত হবে এখন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। তারা বলছে নিদর্লীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে চায়। কিন্তু সরকার নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা কেন চালু করবে? আওয়ামী লীগ ও সরকারের এটাতো দায় পড়েনি! তারা স্বেচ্ছায় সংবিধান সংশোধন করবে। বিএনপি যদি আগামী দিনে সরকারের উপর কঠোর চাপ তৈরি করতে পারে এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারে যে নির্বাচন নিদর্লীয় সরকারের অধীনেই হতে হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে। তখন হয়তো সরকার বিবেচনা করবে।
তিনি বলেন, নিদর্লীয় সরকার করার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত রাজি হবে না যতক্ষণ না বিএনপি ও জনগণের তরফ থেকে কঠিন চাপ তৈরি না হয়। বিএনপি কী করবে সেটা তাদের উপর নির্ভর করছে।
তিনি বলেন, বিএনপির ভিশন ২০৩০ জাতির সামনে একটি রূপরেখা দিয়েছে, সেই রূপরেখাকে আমলে নিয়েই সরকার ও আওয়ামী লীগকে চিন্তা করতে হবে। তাদেরকে এর চেয়েও আরও পরিকল্পিত ও বাস্তব চিন্তা করে এবং আরও বেশি গ্রহণযোগ্য ভিশন ঠিক করতে হবে। নির্বাচনি ইশতেহারেও দুই দলকে আগামী দিনে ভোটারদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য চেষ্টা থাকতে হবে- সেই সঙ্গে উন্নয়নের রূপরেখা থাকতে হবে।