জঙ্গিদের আত্মঘাতী প্রবণতা কি বন্ধ হবে?
মে. জে. এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.)
দেশে ইদানিং আত্মঘাতী জঙ্গি প্রবণতা বেড়ে গেছে। এই প্রবণতা কমার কোনো কারণ নেই। তার কারণটা হলো, তারা যে মোটিভেশনে কাজ করে সেটাই আত্মঘাতী। মরার সঙ্গে সঙ্গে বেহেশতে চলে যাবে। বেহেশতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। অতএব, মরাটা তাদের জন্য বড় কোনো বিষয় নয়। একজন সাধারণ মানুষের কাছে জীবনটাই সবচেয়ে বড়, কিন্তু ওদের কাছে তা নয়। ওদের কাছে জীবনের কোনো মূল্য নেই। তারা মনে করে, মরলেই বেহেশত। পার্থিব জগতে যা পায়নি, বেহেশতে গিয়ে সব কিছু পেয়ে যাবে।
এমন নয় যে তারা হঠাৎ করে আত্মঘাতী হয়েছে। এই পথে যাওয়ার জন্য তাদের উৎসাহিত করা হয়। নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশকদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ থাকে, সেটা ল্যাপটপ অথবা মোবাইল ফোনে। সেখান থেকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে, এখন আত্মঘাতী হও। এখন তোমরা বোমা দিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দাও। বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার কারণ আত্মঘাতী হয়ে মারা গেলে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক, পিছনে কে বা কারা নির্দেশ দেয় এ বিষয়ে পুলিশ কিছুই জানতে পারবে না। পুলিশের কাছে ধরা পরে তাহলে নিরাপত্তা বাহিনী সবকিছু বের করে ফেলবে। আত্মঘাতী হামলার পেছনে কারা জড়িত আছে, তাদের নেটওয়ার্ক বা কোথায়? জঙ্গিরা যেন জীবিত অবস্থায় ধরা না পড়ে এর জন্য তাদের মোটিভেশনও সেভাবে করা হয়।
আত্মঘাতী, আত্মহত্যা তো কোনোভাবেই ইসলাম ধর্মের সঙ্গে যায় না। সমর্থনও করে না। যারা জঙ্গিদের মূল গুরু, তারা তো ভ-ামি করছে। কারণ তারাই বেঁচে থাকবে। সামনে যারা আছে তারা বেঁচে থাকবে না। এখন যে সমস্ত পরিবার থেকে জঙ্গি হচ্ছে, সে পরিবারগুলো যদি সচেতন হয় তাহলে বিপথ থেকে তাদের বের করে আনা সম্ভব হবে। পরিবার বা অভিভাবক যদি বোঝায় যে, তুমি বিপথে আছো, তোমার পথটি সঠিক নয়, তোমাদের তো মৃত্যুর মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। যারা তোমাদের এ ধরনের কাজের জন্য পাঠাচ্ছে তারা তো কেউ মরছে না।
জঙ্গি দমনে পুলিশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছেÑ জঙ্গিদের হাতে যেভাবে অর্থ আসছে সেটা বন্ধ করা। কিভাবে অর্থ আসা বন্ধ করা যায় সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থ আসা তো বন্ধ করা যাচ্ছে না। আর বিস্ফোরক দ্রব্য আসছে সেটাও বন্ধ করা যাচ্ছে না। অস্ত্র আসছে সেটাও বন্ধ করতে পারছে না। অর্থ, বিস্ফোরক দ্রব্য, অস্ত্রপ তাদের হাতে যে পথে আসছে সেটি বন্ধ করতে হবে। এটি যদি করা যায় তাহলে জঙ্গিরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। জঙ্গি তৎপরতা, আত্মঘাতী প্রবণতা কমে আসবে। নিয়ন্ত্রণল করা যাবে। নিরাপত্তা বাহিনীর সফলতাও অনেক। গোয়েন্দা তৎপরতা খুব কার্যকর হচ্ছে বলেই তারা খবরগুলো পাচ্ছে এবং সঠিকভাবে শনাক্ত হচ্ছে। সফল অপারেশন চালাতে সক্ষম হচ্ছে। তারা যেমন সফল অপারেশন চালাচ্ছে, গোয়েন্দা তথ্যও ভালো। কিন্তু দুর্বলতা জায়গাও রয়ে গেছে। জঙ্গিদের কাছে কাদের কাছ থেকে অর্থ, বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র আসছে তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এটি বন্ধ হলে জঙ্গিবাদ আরও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে মনে করি আমি।
পরিচিতি: নিরাপত্তা বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ/সম্পাদনা: আশিক রহমান