ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লিচু ফলনে বিপর্যয়
তৌহিদুর রহমান নিটল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : মধুমাসের অন্যতম ফল হলো লিচু। আর এই রসালো টক টকে লাল লিচু দেখলে কার মন না চাইবে খেতে। দেশের বিভিন্ন জায়গার মত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার বিজয়নগর ও আখাউড়ায় বেশ কয়েক বছর যাবত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লিচু চাষ হচ্ছে। এসব এলাকার উৎপাদিত লিচু দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেশ পরিচিত লাভ করেছে।আর এখানকার লিচু বিক্রি করে চাষীরা অত্যন্ত লাভ জনক হচ্ছে। কিন্তু এবার চাষিদের মাথায় যেন হঠাৎ বাজ পড়েছে তারা অনেকটাই দিশেহারা। বৈরী আবহাওয়ায় আর জলবায়ুর পরিবর্তন জনিত সমস্যায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে লিচু উৎপাদনে। এমনিতে জেলার বিজয়নগরে প্রতিবছর প্রায় ১০/১২ কোটি টাকার লিচু বেচা কেনা হয়। আশা করা হয়েছিল এবারও আরো বেশি বিক্রি করা হবে।কিšধারণার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। নানা প্রাকৃতিক সমস্যায় চাষিদের মধ্যে চলছে হাহাকার। লিচু বিক্রি করে বাগানের খরচ মিলবে না বলে জানিয়েছে অনেক লিচু চাষী। বছরের এসময়ে উপজেলার আওলিয়া বাজারে প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে ২০/২৫ লক্ষ টাকার লিচু পাইকারী বিক্রি হত। কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্হান থেকে পাইকাররা লিচু কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাজারজাত করত এখানকার লিচু। কিন্তু এ বছর বৈরী আবহাওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সেখানে বাজারের বেচাকেনা একেবারেই কমে গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পরিসংখানে চলতি মওসুমে জেলায় ১২ শ ৫০ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য ধরা হয়েছিল অন্তত ৩০ কোটি টাকা। আবাদ হয়েছে ৪৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদিত লিচুর মধ্যে বোম্বে, পাটনাই ও চায়না থ্রি উল্লেখযোগ্য। আখাউড়ায় উপজেলার উওর ইউনিয়নের রামধননগর, চানপুর, দূর্গাপুর, আমোদাবাদ ও রাজাপুর এলাকায় লিচুর চাষের আবাদ হচ্ছে। বিগত বেশ কয়েক বছর যাবত এখানকার লিচু চাষীরা তাদের বাগানে উৎপাদিত লিচু বিক্রি করে আর্থিক ভাবে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছে। কিন্তু
ভারি বৃষ্টিপাতে লিচু গাছের ফুল ঝরে যাওয়ায় এবার লিচু চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা । ফলন ভালো না হওয়ায় চলতি বছর লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না তারা জানিয়েছে। এতে করে শত শত লিচু চাষি মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতির কবলে পড়েছে।
বিজয়নগরের লিচুচাষি কবির হোসেন ও মাহতাব মিয়া বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টিতে লিচুর ফুল ঝড়ে গেছে, অনেক গাছে লিচুই আসেনি আবার আসলেও তা ঝরে গেছে। এবার কৃষকের কোটি কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। বোম্বাই-পাটনা জাতের লিচু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশি জাতের গাছে কিছু লিচু এসেছে।
আখাউড়ার লিচু চাষী আবুল হোসেন বলেন, বিগত এক সপ্তাহ আগে থেকে লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে। ৮০/৯০ টি গাছে এ পর্যন্ত বিশ হাজার টাকার লিচু করেছি। যে ফলন এবার হয়েছে তা মনে হচ্ছে বাগানের খরচ উঠবেনা লাভতো দূরের কথা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন প্রশিক্ষণ অফিসার সূএে জানা যায়, এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন সহনশীল জাত উদ্ভাবন করার জন্য কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে পরামর্শ দিয়েছি।