শহিদুল ইসলাম, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) : প্লাস্টিক সামগ্রির সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে না পারায় হারিয়ে যাচ্ছে। দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। নিজ পেশায় টিকে থাকতে না পেরে জীবিকার তাগিদে বাপ-দাদার পেশা ছেড়েছেন অধিকাংশ মৃৎশিল্পী।
জানা যায়, উপজেলার কাঁটাবাড়ি, বাসুদেবপুর পালপাড়া, কোয়াড়পুরসহ অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত পাল পরিবারগুলো ধারাবাহিকভাবে এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। তাদের নিপূণ হাতের তৈরি বিষ ও মাটির সামগ্রি বিশেষ করে থালা, হাঁড়ি, পাতিল, ঘটি-বাটি, গামলা, বদনা, কলস, চাড়িসহ পরিবারের বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি ও বাজারজাত করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। পরিবারের পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও ওইসব সামগ্রি তৈরি করে থাকেন।
কিন্তু মাটি, খড়িসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি প্লাস্টিক সামগ্রির দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় প্রায় প্রতিটি পরিবারই এখন মাটির সামগ্রির বদলে প্লাস্টিক সামগ্রির কেনার দিকে বেশি আগ্রহী হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। ইতোমধ্যেই এ পেশায় টিকে থাকতে না পেরে পেশা বদলিয়ে অনেকেই মুদির দোকান, হোটেল রেস্তোরাঁর কর্মচারী, রিকশা-ভ্যান চালকের পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন। বেকার হয়ে পড়েছেন নারী শিল্পীরা। আগে নারী শিল্পীরা বিভিন্ন মাটির সামগ্রী তৈরি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটালেও এখন তাদের অলস সময় কাটছে বাড়িতে বসে বসে। ফলে বিলুপ্তির পথে এসে দাঁড়িয়েছে এক সময়ের ফুলবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পটি। কাঁটাবাড়ি পালপাড়ার মৃৎশিল্পী গণেশ পাল ও অমিত পাল বলেন, মরা গাছে পানি ঢেলে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টার মতোই বর্তমান তাদের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের দিন চলছে। আগে নদী থেকে বিনামূল্যে মাটি পাওয়া গেলেও এখন কিনে আনতে হয় ১৫কিলোমিটার দুর থেকে। আগুনের জন্য খড়ি, রংসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় মাটির সামগ্রী তৈরি করে সেটি বাজারে বিক্রি করে তেমন লাভ হয় না। প্লাস্টিক সামগ্রির দাম কম হওয়াসহ ভেঙ্গে যাওয়ার ভয় না থাকায় ক্রেতারা প্লাস্টিক সামগ্রির কেনার দিকেই ঝুঁকে পড়ছেন। ফলে নিজে মাটির সামগ্রি অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে থাকছে। মালামাল বাড়িতে বিক্রি না হওয়ায় ঋণ-দেনায় জর্জিত হয়ে পড়ছেন প্রায় প্রত্যেক মৃৎশিল্পী। সম্পাদনা: মুরাদ হাসান