সিল্করোড নিয়ে নতুন ভূ-রাজনীতির শুরু
কামরুল আহসান : ‘এক অঞ্চল এক পথ’-এর বিশাল সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ১২৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার। এক অঞ্চল এক পথের মাধ্যমে চীন চাচ্ছে পুরো এশিয়া, মধ্যএশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশকে একসুতোয় বেঁধে ফেলতে। নিঃসন্দেহে ‘ঘুমন্ত ড্রাগন’ জেগে উঠার মতোই পরিকল্পনা। কিন্তু, পরিকল্পনা যতো সহজ তার বাস্তবায়ন কতোটা সহজ হবে তাই নিয়েই এখন বিশ্বের নেতৃবৃন্দ আলোচনায় মশগুল।
ভারত উক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেনি। ‘এক অঞ্চল এক পথ’ নিয়ে দুই দিনের সম্মেলনে চীনের বেইজিং গেছেন ২৯টি দেশের ঊর্ধ্বতন রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রপ্রধান। এশিয়া, আফ্রিকা মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ৬০ টি দেশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা এই সম্মেলনে অংশ নিলেও চীনের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কোনো প্রতিনিধি এতে অংশ নেয়নি।
ভারত এ সম্মেলনকে পরিত্যাগ করেছে কারণ চীন-পাকিস্তানের অর্থনৈতিক করিডর তাদের দাবিকৃত কাশ্মীর সীমান্তের মধ্যদিয়ে গেছে। ভারতের অভিযোগ এর মধ্যদিয়ে চীন তাদের ভূ-রাজনৈতিক অধিকারকে খর্ব করছে। যদিও শি জিনপিং জানিয়েছেন, কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব খর্ব করা এই মহাসোপানের উদ্দেশ্য নয়, বরং এর মধ্যদিয়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও একতাবন্ধনই উদ্দেশ্য। এর ফল পাবে প্রতিটি দেশ।
তবে চীনের এই মহান উদ্দেশ্যের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না অনেকেই। ভারত, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অর্থনীতি বিষয়ক বিশ্লেষকদের দাবি এর মধ্যদিয়ে প্রকৃত অর্থে আবির্ভূত হচ্ছে নয়া বিশ্বায়ন পদ্ধতি। যার ফল ভোগ করবে একমাত্র চীন। চীন আসলে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার অর্থ নিজের কব্জায় পুঞ্জিভূত করার এক নতুন কৌশল আবিষ্কার করছে।
চীন ইতোমধ্যে পাকিস্তানে বিনিয়োগ করেছে ৪ হাজার ডলার। বেলুচিস্তানে তারা গড়ে তুলেছে বিশাল সমুদ্রবন্দর। বলা হচ্ছে এই পথ তৈরির মধ্যদিয়ে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে পাকিস্তানই। কারণ পাকিস্তান চীনের প্রধান মৈত্রী। আর এরমধ্য দিয়ে চীন আসলে পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে আরো বেশি উত্তেজিত করতে চাইছে। পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে এ পথ চলে যাবে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে। যেখানে এ পথের সাথে অংশীদারী হবে ইরান, তুরস্ক, সিরিয়া।
একই পথ মধ্যপ্রাচ্য হয়ে এ পথ চলে যাবে আফ্রিকা। আফ্রিকাতেই চীন ১ হাজার ট্রিলিয়ন বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যেই ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করে তারা জিবুইতি থেকে আদ্দিস আবাবা পর্যন্ত রেল রোড তৈরি করেছে। সেখানে তারা পথঘাট তৈরি করে দিচ্ছে, বন্দর তৈরি করছে, তৈরি করছে সফটওয়্যার কোম্পানি। বিরোধীরা বলছেন এ পথ দিয়ে শুধু চীনের পণ্য আর প্রযুক্তি যাবে না, আসবে আফ্রিকার অর্থও।
এখন কথা হচ্ছে চীন একতরফাভাবে এর সব সুযোগ নেবে আর সারা বিশ্ব কি বসে বসে দেখবে? ভারত ছাড়া আর কোনো দেশ এখনো পর্যন্ত সরাসরি এই পথের বিরোধিতা করেনি। ব্রিটেনও সমর্থন জানিয়েছে। ব্রিটেন জানিয়েছে একেবারে প্রকৃতভাবেই এই পথের সঙ্গে আছে। এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনও আলোচনায় অংশ নিয়েছেন এবং শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনার অংশ নিয়েছেন। চীনের প্রধানতম প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত উপরে উপরে চীনের এই মহাপরিকল্পনায় সমর্থন জানিয়ে আসলেও তাদের ভেতরগত পরিকল্পনা এখনো জানা যায়নি। নতুন এই বিশ্বায়নের অংশীদার নিয়ে নিশ্চয়ই এখন শুরু হবে নতুন ভূ-রাজনীতি। সিএনএন, রয়টার্স, কার্টাজ