উত্তর কোরিয়ার শেষ মিসাইল পরীক্ষায় চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র আয়ত্বের মধ্যে?
জিনাত রায়হানা: উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ দশম ব্যালাস্টিক মিসাইল পরীক্ষা দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, জাপান ও চীনের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে ওয়াশিংটন। ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর ষষ্ঠবারের মত হুসং-১২ নামের এ ক্ষেপণাস্ত্রটি সর্বোচ্চ ২১১১.৫ কি.মি. উচ্চতায় উঠতে পারবে এবং ৭৮৭ কি.মি.এলাকা পর্যন্ত আঘাত হানতে পারবে এবং এটি উন্নত ব্যালাস্টিক রকেট যা ভারী ওজনের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম। ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়ার ধরন পরিবর্তন করলে তা কোরিয়া উপদ্বীপের পাশের দেশগুলো ছাড়াও তা যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়াতেও আঘাত হানতে পারবে। ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর উত্তর কোরিয়া ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে দিয়ে বলে,মার্কিন মূল-ভূখন্ড ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের আয়ত্বের মধ্যেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি উত্তর কোরিয়ার সফল পারমাণবিক পরীক্ষা এবং এটি পরমাণু বহনে সক্ষম ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালাস্টিক মিসাইল(আইসিবিএম) তৈরির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। মহাকাশ প্রকৌশলী জন সিলিং বলেছেন,উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ সফল মিসাইল পরীক্ষাটির সঙ্গে আগের পারমাণবিক পরীক্ষার মিল নেই। গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ার সক্ষমতার ঘোষণার জবাবে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সক্ষমতার ঘোষণা দেওয়া হলো ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাটি করে। মিসাইলটি সম্পর্কে বিজ্ঞানী ডেভিড রাইট বলেন, এটি যদি ২১১১.৫কি.মি. উচ্চতায় উঠতে পারে এবং ৭৮৭কি.মি. দুরত্ব অতিক্রম করে তবে মিসাইলটি প্রশান্ত সহাসাগরে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের গুয়াম দ্বীপে আঘাত হানতে পারবে।বিজ্ঞানী ডেভিড রাইটের মতামত অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, মিসাইলটি অধিক উচ্চতায় উঠতে পারে ও দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে পারে। সুতরাং এটি একটি বর্ধিত পরিসীমার মিসাইল।উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় বার্তা সংস্থা কেএনসি জানায়, মিসাইল পরীক্ষাটি উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হামলার সক্ষমতার জানান দিল।
কারনিগো সিনঘুয়া সেন্টার ফর গ্লোবাল পলিসির বিশ্লেষক টং জাও বলেন, মিসাইলটি গুয়ামে আঘাত হানলে এটি উত্তর কোরিয়াকে আঞ্চলিক পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা দেবে। এর মানে হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র আইসিবিএম অনুসরণ ছাড়াই মার্কিন সীমানায় আঘাত করতে পারবে। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রাশিয়ান রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থাকে জানায়, বেইজিং সম্মেলনে সাম্প্রতিক উদ্বেগ ও হুমকি নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর সঙ্গে আলোচনা করেছেন ভøাদিমির পুতিন। এছাড়া বর্তমান কোরিয়া ইস্যুতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবৃতিতে বলেন, কোরিয়া উপদ্বীপের পরিস্থিতি খুব জটিল ও সংবেদনশীল। ভবিষ্যতে যাতে এই অঞ্চলের উত্তেজনা না বাড়ে তাই সকল পক্ষকে তাদের কর্মকান্ড সংযত করতে হবে।
চীনের মধ্যেও বিরাজ করছে বাড়তি উত্তেজনা কারণ পিয়ংইয়ং ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাটি চালায় চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এলাকায়। উত্তর কোরিয়ায় অর্থনৈতিক মিত্র চীনের ভূ-খন্ডেও ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হানতে পারবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র জানায়, উত্তর কোরিয়া এমন সময় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাটি চালায় যখন বেইজিং প্রস্তুতি নিচ্ছিল “রোড ও বেল্ট ফোরামের”। এটি শি জিনপিং এর নিজস্ব একটি প্রকল্প। আর এই প্রকল্পের পরিকল্পনা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে চীনের সীমান্তের কাছে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা। এছাড়া উত্তর কোরিয়া বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে জাপান। সম্পাদনায় : ইয়াছির আরাফাত