আগে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন ভিশনের প্রয়োজন
আগে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন ভিশনের প্রয়োজন
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
অবশেষে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দলের রূপকল্প ২০৩০ বেশ আড়ম্বরপূর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। বিএনপির নেতৃবৃন্দ এ নিয়ে প্রতিদিনই সভা-সেমিনারে ভিশন ২০৩০ নিয়ে বেশ আস্থার সঙ্গে কথা বলেন, এটি বাস্তবায়িত হলে দেশ উন্নত-সমৃদ্ধ হয়ে যাবে বলে প্রচার করছেন। কিন্তু অন্য কোনো মহল থেকেই বিএনপির ভিশন ২০৩০ নিয়ে তেমন কোনো জোরালো সমর্থন জানানো হচ্ছে না।
বিএনপি নিজের ঢোল নিজেই এখনও পর্যন্ত একা বাজাচ্ছে, সাথী-সঙ্গী তেমন কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না, এমনকি নাগরিক সমাজ বলে কথিত এনজিও গোষ্ঠীও খুব বেশি এগিয়ে আসছে না। এর কারণ অবশ্য কেউ খোলাসা করে বলছে না। তবে যেসব প্রতিশ্রুতি রূপকল্পে দেওয়া হয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়ন বিএনপির নিজস্ব দলীয় বা জোট রাজনীতির সরকার কতটা করতে সক্ষম হবে বা চাইবে তা কারও কাছেই স্পষ্ট নয়। কেননা দেশকে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে গড়ে তোলার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন মুখের কথা কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা বিষয় নয়। বিএনপি রাজনৈতিকভাবে উদার গণতান্ত্রিক দর্শনে বিশ্বাসী দল নয়, বরং দেশের সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শের অন্যতম প্রধান দল। দলটি ১৬ বছর বিভিন্ন মেয়াদে ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শে গড়ে তোলা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা-সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অধিকন্তু ধর্ম ও ভারত বিরোধিতা, জাতিগত অবস্থান থেকে সংখ্যালঘু এবং নৃজাতি গোষ্ঠীর স্বার্থবিরোধী অবস্থান নেওয়া, ধর্মকে রাজনীতিও ভোটের সময় ব্যবহার করার যথেষ্ট নজির বিএনপির রাজনীতিতে অতীতে যেমন ছিল, এখনও রয়েছে, এই বিষয়গুলো মোটেও কোনো আধুনিক রাজনৈতিকে ধারণ করা দলের কাজ নয়।
তাছাড়া বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতিবিরোধী শক্তির মিত্র শক্তি হিসেবে গাঁটছড়া বেঁধে রাজনীতি করছে। ফলে এতো বছর দেশ পরিচালনায় থেকেও বিএনপি তেমন কোনো মোড় পরিবর্তনকারী উন্নয়নের মাইলফলক সৃষ্টির মতো নজির স্থাপন করতে পারেনি। বরং যতবারই বিএনপি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে ততবারই দেশের প্রগতির চাকাকে পেছনের দিকে ঠেলে নেওয়ার চেষ্টা করেছে, বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবাদর্শে পরিচালিত করার নজির স্থাপন করা হয়েছে।
সরকার ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, সংসদ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ও ব্যবস্থায় উল্লেখ করার মতো উদ্যোগ নেয়নি বিএনপি, অধিকন্তু মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করেছে, অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে রাষ্ট্র, রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতির সর্বত্র থেকে উচ্ছেদ করার ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের অভিযোগ রয়েছে বিএনপির বিরুদ্ধে জোট সরকারের সময়, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল। রাজনীতিতে ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা, সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ এবং ভারতবিরোধিতাকে সম্বল করে টিকে থাকার দর্শন দেশকে মোটেও কোনো ভিশনমিশনে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। সেটি বিএনপির সকল শাসনামল থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা থেকে ও পাওয়া যায়। সে কারণে বিএনপি এখন যেহেতু আওয়ামী লীগকে অনুসরণ করে একটি রূপকল্প উপস্থাপন করেছে তাই সেই রূপকল্প বাস্তবায়নে দলটি যদি সিরিয়াস হতে চায় তাহলে বিএনপির এতদিনকার রাজনৈতিক আদর্শ এবং অবস্থানে পরিবর্তন আনতেই হবে সবার আগে, কোনো প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে এমন রূপকল্প বাস্তবায়ন মোটেও সম্ভব নয়। সে কারণেই বিএনপিকে আগে নিজের মতাদর্শগত অবস্থানে মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে, তাহলেই ভিশন মিশন বাস্তবায়নের আশা করা যেতে পারে। কোনো পশ্চাদপদ মতাদর্শের ধারক-বাহক রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে অগ্রসর কোনো রূপকল্প বাস্তবায়নের আশা করার কোনো ভিত্তি নেই। নিজেকে আগের চরিত্রে ধরে রেখে বিএনপি বিশন ২০৩০ বাস্তবায়ন করবে না, এটি নিশ্চিত।
লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়