বনানীতে দুই তরুণী ধর্ষণ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করল রেইনট্রি কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়নি
সুজন কৈরী : রাজধানীর বনানীতে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে ‘দ্য রেইনট্রি হোটেল’ কর্তৃপক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হোটেলের অর্থায়নকারী হুমায়রা গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক রাজা গোলাম মোস্তফা। সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাব দেন ঝালকাঠির সংসদ সদস্য বিএইচ হারুনের বড় ছেলে ও হোটেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আদনান হারুন। তবে তিনি সাংবাদিকদের করা অধিকাংশ প্রশ্নেরই কোনো উত্তর দেননি।
লিখিত বক্তব্যে গোলাম মোস্তফা বলেন, দেশজুড়ে আলোচিত এ ঘটনার বিচার চান তারা, প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসুক। এছাড়া হোটেলে রুম রিজার্ভেশনের সময় আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। তাদের বিশ্বাস, অপরাধীরা যে জঘন্য অপরাধ করেছেন, তার শাস্তি তাদের ভোগ করতেই হবে।
গত ২৮ মার্চ রেইনট্রি হোটেলে দুই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে ৬ মে বনানী থানায় মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগীদের একজন। মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ, রেগনাম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাদমান সাকিফ, ইমেকার্স ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মের স্বত্বাধিকারী নাঈম আশরাফ, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জন ধরা পড়লেও নাঈম পলাতক রয়েছেন। ধর্ষণের ঘটনায় নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতেই রেইনট্রি হোটেল কর্তৃপক্ষ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এ সময় সাংবাদিকদের আদনান হারুন বলেন, গত ১৩ মে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর হোটেলে তল্লাশি করে কিছুই পায়নি। কিন্তু পরদিন শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ অভিযান চালিয়ে ১০ বোতল মদ পেয়েছে বলে দাবি করেছে। তারা হোটেলে কিভাবে মদ পেল? এখন সেটা আমাদেরও প্রশ্ন, আপনাদের বিবেকের কাছে। এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চান, তাহলে শুল্ক গোয়েন্দা আপনাদের ফাঁসানোর জন্য সঙ্গে করে মদ নিয়ে এসেছিল কিনা? জবাবে আদনান হারুন বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। তিনি বলেন, হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার ফ্রাঙ্ক ফরগেট ঘটনার দিন রাতে সস্ত্রীক হোটেলেই অবস্থান করছিলেন। ওই রাতে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তিনি হোটেল কার্যক্রমে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখেননি বলে জানিয়েছেন। তবে হোটেলের রুমগুলো সাউন্ড প্রুফ হওয়ায় কক্ষের ভেতর কোনো অপরাধ হলে হোটেল কর্মচারীদের পক্ষে বাইরে থেকে সেটা বোঝার কোনো সুযোগ ছিল না। সুতরাং হোটেলের ৭০০ ও ৭০১ নম্বর কক্ষে ভিকটিমদের সঙ্গে এ ধরনের অপরাধ ঘটেছে কিনা সেটা আদালতে প্রমাণিত হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেটা তদন্ত করছে, যা প্রক্রিয়াধীন।
অপরদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হোটেলের পরিচালক মাহিন হারুন এবং ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাফাতের বন্ধুত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, আসামি সাফাত একদিনই এ হোটেলে এসেছিলেন এবং রাতযাপন করেছিলেন। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মাহিন হারুন কেক নিয়ে গেছে বলে যে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে তাতে মাহিন হারুনের ব্যক্তিগত কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। হোটেলের রীতি অনুযায়ী জন্মদিনে অতিথিকে কেক উপহার দেওয়া হয়। এখানে কোনো ব্যক্তি-সম্পর্কের বিষয় নেই। জন্মদিনের অনুষ্ঠান কতক্ষণ হয়েছিলÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে আদনান হারুন বলেন, এ নিয়ে তিনি কিছু বলবেন না। বিষয়টি তদন্তাধীন।
আপনারা কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে চাইছেন না কেনÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হোটেলের এমডি বলেন, আমরা আপনাদের একটি প্রেস রিলিজ দিয়েছি। সেখানে আমাদের বক্তব্য লেখা আছে। তিনি বলেন, অপরাধীদের সহযোগিতা করার জন্য ঘটনার দিনের সিসিটিভির ফুটেজ মুছে ফেলা হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরও সত্য নয়। এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। যা হোটেলের সুনাম ও ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে এবং হোটেলকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। হোটেলের সুনাম নষ্ট করার জন্য এমন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এমনিতেই এ ঘটনার প্রেক্ষিতে হোটেলের ব্যবসা ধ্বংসের মুখে পতিত হতে চলেছে। কারণ গত এক সপ্তাহ ধরে হোটেলে কোনো অতিথি আসেননি। এমনকি আগামী দুই সপ্তাহে যারা হোটেল বুকিং দিয়েছিলেন তারা সবাই তা বাতিল করেছেন। আর হোটেলে অবস্থানরত অতিথিরা হোটেল ত্যাগ করেছেন। রেইনট্রি হোটেল সাফাত-নাঈম চক্রের অপরাধের সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত।
এ সময় তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকা প্রসঙ্গে সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে হোটেল কর্তৃপক্ষ চুপ থাকে এবং একপর্যায়ে কর্মকর্তারা উঠে চলে যান। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ