একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাসহ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১২ মামলা স্থগিত হলো আদালতে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হরতাল ও অবরোধের সময় গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তিন দফায় মোট ১২টি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছে আদালত। এতে করে ওই সময়ের মামলাগুলো একে একে স্থগিত হওয়ার কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন অন্যান্য যেসব মামলা রয়েছে ওই সব মামলার কার্যক্রমও স্থগিত করার জন্য আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন আইনজীবীদের। সেই সঙ্গে তিনি আগামীতে বিভিন্ন আদালতের প্রতি অনাস্থা এনে আদালত পরিবর্তন করার জন্যও বলেছেন। এরমধ্যে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা দুটি করা হয় ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি। দারুস সালাম থানায় মামলাটি হয় ২০১৫ সালের ৩ মার্চ।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাশকতার মামলার কার্যক্রম স্থগিত হওয়া ও রুল জারি করার পর বিএনপির নেতারা এটাকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন। সেই সঙ্গে দুর্নীতির মামলায় আদালত বদলীর বিষয়টিও ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন। বিএনপির মহাসচিব বলেন, হরতাল, অবরোধের সময়ে যেভাবে সরকারের আমাদের বিএনপির চেয়ারপারসন থেকে শুরু করে অনেক সিনিয়র নেতাদের নামে ও বিভিন্ন নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যে মামলা দিয়েছে। হয়রানি করেছে তা স্পষ্ট। ন্যায় বিচার হলে ওইসব মামলা কোনোটাই আদালতে টিকবে না। কারণ আমরা ও আমাদের নেতারা নাশকতার ঘটনা ঘটায়নি। গাড়ি পোড়ায়নি। ভাঙ্চুরও করেনি। আন্দোলন থামাতে ব্যর্থ হয়ে সরকার পুলিশকে দিয়ে একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি এবং গ্রেফতার করে।
মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী ও দারুস সালাম থানায় দায়ের করা তিনটি মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা ছাড়াও তিনটি মামলায় আদালত রুল জারি করেছেন। সেই সঙ্গে এসব মামলা কেন বাতিল করা হবে না রুলে জানতে চেয়েছেন। মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি এ এন এম বসির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, এনিয়ে ম্যাডামের বিরুদ্ধে একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাসহ মোট ১২টি মামলা আদালত স্থগিত করেছে। যাত্রাবাড়ী দুই মামলা এবং দারুস সালাম থানার একটি মামলার কার্যক্রম রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থ’গিত থাকবে।
এর আগে আদালত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হাইকোর্ট নাশকতার চারটি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে। এসব মামলায় অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়া আবেদন করেন। তা শুনে বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি এ এন এম বসির উল্লাহর বেঞ্চ এই আদেশ দেন। সেই সঙ্গে রুলও দেন। এর মধ্যে তিনটি মামলা দারুস সালাম থানার। আর একটি ছিল যাত্রাবাড়ীর থানার।
সেখানে এও বলা হয়েছে, রুলে জানতে চাওয়া হয় কেন এই চার মামলায় অভিযোগ আমলে নেওয়ার আদেশ বাতিল করা হবে না। ওই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়া জামিনে থাকবে বলেও আদালত আদেশ দেন। এই দুটি মামলা হয়েছিল, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের হরতাল চলাকালে মিরপুরের দারুস সালাম ও যাত্রাবাড়ী থানায় ২০১৫ সালের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে নাশকতার অভিযোগে মামলা করা হয়। সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসনকে ইন্ধনদাতা হিসেবে উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে পুলিশ ওই সব মামলার অভিযোগ দাখিল করে। এরপর ঢাকার মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেয়।
এর আগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানার নাশকতার দুটি মামলার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে হাইকোর্ট। মামলাতে অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা আবেদন করেন। ওই আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি এ এন এম বসির উল্লাহর বেঞ্চ রুলও দেয়। এ দুই মামলায় অভিযোগ আমলে নেওয়ার আদেশ কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় দারুস সালাম থানা এলাকায় একাত্তর পরিবহন ও নিউভিশনের দুটি পরিবহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১০ ও ২০ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এরপর পুলিশ ২০১৬ সালের ১২ ও ১৪ মে অভিযোগপত্র দেয়।
এদিকে ওই সব মামলার কার্যক্রম স্থগিত করার পাশাপাশি খালেদা জিয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দুদকের মামলায় হাইকোর্ট আদালত বদলে দিয়েছে। ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত থেকে মামলাটি ঢাকা বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আক্তারুজ্জামানের কাছে বদলি করে। গত মঙ্গলবার বিচারপতি শওকত হোসেন ও বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
বিএনপির সূত্র জানায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগ এনে করা মামলায় তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদারের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ২৬ এপ্রিল হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। সেখানে কার্যক্রম স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়। আদালত কার্যক্রম স্থগিত না করলেও আদালত বদলে দিয়েছে।
খালেদা জিয়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা বিচারের জন্য বিশেষ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়ের ২০১৪ সালে মার্চে প্রতি অনাস্থা জানান। এর আগে অনাস্থা জানিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। নয়মাস পর ডিসেম্বরে বাসুদেবকে পটুয়াখালী বদলি করে আবু আহমেদ জমাদ্দারকে বিচারক নিয়োগ করা হয়। এখন আদালত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ শুনানি ২৩ মে পরবর্তী তারিখ ধার্য করে। আদালত পরিবর্তনের আদেশ দেওয়ায় সোমবার পুরান ঢাকার বকশিবাজারস্থ অস্থায়ী আদালতের বিচারক মো. কামরুল হোসেন মোল্লা শুনানির তারিখ ধার্য করেন।