জনমত তৈরিতে পেশাজীবীদের নিয়ে বিষয়ভিত্তিক সম্মেলন করছে বিএনপি
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : বিএনপি বৃহৎ পরিসরে রাজনৈতিক সমাবেশ করতে পারছে না। দলীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের জন্য মাঝেমধ্যে ইনডোরে অনুমতি মিললেও আউটডোরে পুলিশ তাদেরকে কোনো জায়গায় সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। সরকার বলছে, বিএনপি দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে চায়। এছাড়া তাদের সভা-সমাবেশে নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে তাদের নেতাকর্মীরা মারামারি ও চেয়ার ছোড়াছুড়ি এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে। এছাড়া আরও বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। এই অবস্থায় তারা সভা-সমাবেশ করার সুযোগ পেলে তখন তারা নতুন করে আবারও দেশে অরাজকতা তৈরি করবে ও অস্থিরতা তৈরি করবে। এই সমস্ত কারণ দেখিয়ে সরকার ও পুলিশ তাদেরকে সমাবেশের অনুমতি দিচ্ছে না।
এই অবস্থায় বিএনপি নতুন কৌশল নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে তারা বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষদের নিয়ে বিষয়ভিত্তিক সম্মেলন করবে। সেখানে ওইসব সেক্টরের উন্নতির জন্য এবং বিভিন্ন সেক্টরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য সরকারের গৃহীত পদ্ধতির সমালোচনা করার পাশাপাশি তাদেরকে এই ব্যাপারে কি করণীয় সেই সম্পর্কেও জানানো হবে। যাতে করে আগামী দিনে বিএনপি যখন আন্দোলন শুরু করবে তখন তাদেরকে পাশে পাওয়া যায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা প্রণয়নের কাজ চলছে। ঈদের পরে তা ঘোষণা করবেন দলের চেয়ারপারসন। এর মধ্যে আমরা বিভিন্ন সেক্টরের পেশাজীবীদের নিয়ে সমাবেশ করবো। সম্প্রতি শিক্ষাবিষয়ক একটি সম্মেলন হয়েছে। এরপর হবে নির্দলীয় সরকার, নিরপেক্ষ নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, যোগাযোগ, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, তথ্যপ্রযুক্তি, জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ, গ্যাস, খাদ্য নিরাপত্তা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, বিনিয়োগ বাড়ানো, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক আরও জোরালো করার ব্যাপারেও বিভিন্ন সেমিনার করা হবে। এর পাশাপাশি সময় ও প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন বিষয় সম্পৃক্ত করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা বিষয়ভিত্তিক সেমিনার করলে সেখানে স্ব স্ব সেক্টরের নীতিনির্ধারক ও নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। তাতে করে তারা তাদের সেক্টরে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে এই ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করবে। আস্তে আস্তে এই সচেতনতা জনমতে তৈরি হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একটি সূত্র জানায়, আপাতত আমরা মাঠে সরাসরি আন্দোলনে যাচ্ছি না। আমরা বিভিন্ন দিক থেকে দলকে গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তৃণমূলের নেতারা আন্দোলনের জন্য তৈরি হচ্ছে। রাজধানীও রয়েছে প্রস্তুতির মধ্যে। এরপর যখন সময় হবে তখন আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। আশা করছি সরকার বাস্তবতা বুঝবে এবং বিএনপিকে আন্দোলনের দিকে ঠেলে দিবে না। সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমেই সমাধান করা প্রয়োজন। সেটাই করবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে এখন অরাজকতা চলছে, হত্যা, গুম, লুণ্ঠন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে চলেছে। দুর্নীতি হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তি করে সরকার দেশের স্বার্থ বিলিয়ে দিচ্ছে, এভাবে চলতে পারে না। তারা আরও একবার তাদের মনের মতো করে পরিকল্পিত ও পাতানো নির্বাচন করতে চাইছে। একই ঘটনার বার বার পুনরাবৃত্তি হবে না। হতে দেওয়া হবে না। এই কারণে আমরা চেষ্টা করছি দেশের মানুষকে সচেতন করার। জনগণ আমাদের মতো করে সচেতন হলে ও নিজের ভোটাধিকার অন্য কাউকে প্রয়োগ করতে না দিলে এবং নিজের ভোট নিজে দিবে সেই মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ হলে তা সরকারের উপর চাপ তৈরি করবে।