বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কম, কর্মের সন্ধানে হাওরের শিক্ষার্থীরা
আশরাফ চৌধুরী রাজু, সিলেট : অকাল বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের স্কুলগুলোতে কমে গেছে শিক্ষার্থী উপস্থিতি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে গড়ে ত্রিশ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকছে । শিক্ষকরা বলছেন, পরিবারের বিকল্প আয়ের জন্য মাছ শিকারে যাওয়া, ত্রাণের লাইনে দাঁড়ানো এবং ধান কাটায় ব্যস্ত থাকার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে। এছাড়া কাজের জন্য অনেক পরিবার হাওর এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার কারণে বিদ্যালয়ে আসতে পারছে না শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ।
এ বিষয়ে ধর্মপাশা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতা আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, আগামীতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আরো কমতে পারে। এ এলাকায় কাজেরও তেমন সুযোগ নেই। ফলে দলে দলে লোকজন পরিবার নিয়ে কাজের সন্ধানে চলে যাবে। এতে করে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমবে। এদের অনেকে ঝরে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা তার।
জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ফসলহানিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতেই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপ¯ি’তি সবচেয়ে কম। দিরাই, শাল্লা, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশার মতো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বিদ্যালয়গুলোয় গড়ে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী গত মার্চ থেকে অনুপ¯ি’ত রয়েছে। আবার এসব এলাকার উপজেলা সদর থেকে গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার কম। তবে জেলা সদরসহ কম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর বিদ্যালয়ে তেমন প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় তিন লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসে শেষ হওয়া প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় ১২ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশ নেয়নি। সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বায়েজিদ খান জানান, পাহাড়ি ঢল ও অকালবন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরপ্রধান এলাকাগুলোয় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কমেছে। সম্প্রতি শেষ হওয়া প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় ১২ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশ নেয়নি। তবে ধীরে ধীরে পরি¯ি’তি ঠিক হয়ে আসছে। তিনি বলেন, হাওরের একমাত্র ফসল নষ্ট হওয়ার পর আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে হাওড়ের প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালুর অনুরোধ জানিয়েছি। পাশাপাশি ঝরে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আনতে প্রচারণা চালাচ্ছি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রমতে, সুনামগঞ্জের মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার ৩৮১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। হাওরের একমাত্র ফসল ডুবে যাওয়ার পর এ পর্যন্ত মাধ্যমিক পর্যায়ে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, কাজের জন্য অনেকে সপরিবারে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কমেছে। হাওরের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির আওতায় আনার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। সম্পাদনা: মুরাদ হাসান