আমদানির সুযোগ থাকলেও চোরাপথে স্বর্ণ আসছে বাংলাদেশে
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : স্বর্ণ আমদানিতে কোনো স্বচ্ছতা নেই। আমদানির সুযোগ থাকলেও অবৈধভাবে অর্থাৎ কালোবাজারের মাধ্যমে সোনা আসছে বাংলাদেশে। সামান্য পরিমাণ স্বর্ণ বৈধ অনুমতি পত্রের মাধ্যমে আসে। এছাড়া মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ব্যবসায়ী দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে স্বর্ণ কিনে থাকেন। বাকিরা কালোবাজার ও ভারত থেকে স্বর্ণ সংগ্রহ করে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, স্বর্ণের বাজারটা অস্বচ্ছ। আমদানিতে স্বচ্ছতা আনা জরুরি। যতদূর জানি চোরাচালান থেকে ব্যবসায়ীরা স্বর্ণ সংগ্রহ করে, আবার ১০০ গ্রাম করে স্বর্ণ আনার যে সুযোগ আছে, সেখান থেকেও তারা সংগ্রহ করে। লাগেজের মাধ্যমে যারা স্বর্ণ নিয়ে আসছে সেগুলো এসব ব্যবসায়ীরা কিনে নেয়। তিনি বলেন, এই কালোবাজারি বন্ধ করতে হলে অবশ্যই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের উদ্যোগ প্রয়োজন।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলে থাকেন, আমদানি সহজ করা হচ্ছে না বলে স্বর্ণ আমদানিতে অস্বচ্ছতা রয়েছে। এ খাতের ব্যবসায়ীদের নিজেদেরও দায়িত্ব রয়েছে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে ব্যবসা করা। এই সামান্য আমদানিতে তো দেশের বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। কাজেই আমদানির কোটা দেখলেই বুঝতে সহজ যে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে আসে। আবার এর একটা বড় অংশ চলে যায় পাশের দেশ ভারতে। জুয়েলার্স ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে স্বর্ণ আমদানির বিষয়টি সহজ করার সময় এসেছে।
জানা গেছে, প্রতিদিনই দেশের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর কিংবা বিভিন্ন চোরাই পথে আসা স্বর্ণের চালান ধরা পড়ছে। আটককৃত স্বর্ণের হিসাব নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। কোনো কোনো চালানে বেশি স্বর্ণ ধরা পড়লেও বলা হয় কম। মণকে কেজিতে পরিণত করার ঘটনাও ঘটছে। এসব স্বর্ণ মূলত জুয়েলারি দোকানগুলোতে চলে যায়। দেশে বর্তমানে ২০ হাজারেরও বেশি স্বর্ণের দোকান রয়েছে। এসব দোকানে নিয়মিতভাবে গয়না তৈরি হচ্ছে, ভাঙাও হচ্ছে। এ শিল্পের সঙ্গে কাজ করেন দেড় লাখের বেশি শ্রমিক।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির তথ্যমতে, পুরনো স্বর্ণ পরিশোধন করে গয়না তৈরি হয়। ঢাকায় জুয়েলার্স সমিতির ৬শ সদস্য ছাড়াও আরও ১০ হাজার সোনার দোকান রয়েছে। দেশে প্রতিবছর স্বর্ণের চাহিদা এবং জোগান কত সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। দেশে বছরে ২৫ লাখ ভরি সোনার চাহিদা রয়েছে।
জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি গঙ্গা চরণ মালাকার বলেন, স্বর্ণ আমদানির সুযোগ চেয়ে আমরা সরকারের কাছে বারবার গিয়েছি। ২০ বছর ধরে আমরা ‘স্বর্ণ নীতিমালা’ চাচ্ছি। আমরাও চাই একটি নীতিমালা হোক। এখন হঠাৎ করে তো যদি দোকানগুলোতে অভিযান চালানো শুরু হয় তাহলে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।