নিঃস্বার্থই ইমানের আলো ছড়ান যে আলেম
মুহাম্মদ কামাল হোসেন
দক্ষিণ কুমিল্লার বিশিষ্ট আলেম হযরত মাওলানা আবু তাহের রহমতপুরী দা :বা :। মৃত মাওলানা কোরবত আহমদ রহ. এর বড় সন্তান।
ইমাম ও খতিব। স্থানীয় এলাকার প্রিয় নাম মাওলানা আবু তাহের রহমতপুরী। তরুণ প্রজন্মের আদর্শ। এ অঞ্চলের সমকালীন আলেম সমাজের মধ্যে তিনিই তর্কাতীতভাবে সর্বজনবিদিত ও অগ্রগন্য। একটি যুগ সন্ধিক্ষণ ও কঠিন ক্রান্তিকালীন সময়েও তিনি এ সমাজের হাল ধরেছেন। তাঁর পিতা হযরত মাওলানা কোরবত আহমদ রহ. ইন্তেকালের পর, শোকে মুহ্যমান দিশেহারা পুরো সমাজের জন্য কান্ডারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। বিশাল এ সমাজের ইমান আকীদার জিম্মাদারি রক্ষায় তিনি ব্রত হয়েছেন।
পিতার অসমাপ্ত কাজকে স্বীয় হাতে তুলে নিয়েছেন। দেশে কিংবা বিদেশ বিভুঁইয়ে হাজারো লোভনীয় চাকুরীর অফারকে তিনি হাসিমুখে ফিরিয়ে দিয়েছেন। নিজের বা পরিবার-পরিজনের কথা ভাবেননি।স্বীয় স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পিতার অসমাপ্ত কাজে নিজেকে প্রতিনিয়ত পরিচালিত করে যাচ্ছেন। দারিদ্রতাকে বরাবর প্রাধান্য দিয়েছেন। পোশাক পরিচ্ছেদে অনাড়ম্বর জীবন যাপনের চিত্র ফুটে ওঠে।
কাউকে কখনো নিজের দুঃখ-কষ্টের কথা মুখ ফুটে বলেননি। চলাফেরায় সবসময় গুরুগম্ভীর ও গাম্ভীর্যতা বজায় রেখেছেন। দক্ষিণ কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী ভুশ্চি বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দীর্ঘদিন নিরলস খেদমতে আছেন। মাত্র ৫০০ টাকা সম্মানীতে দায়িত্বভার শুরু করেন এ আলেম। আজও অন্যান্য গ্রাম বা এলাকা ভিত্তিক লোকাল ইমাম থেকেও অনেকাংশে কম সম্মানিতে মসজিদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কখনও টু শব্দটি পর্যন্ত করেননি। সবকিছু হাসি মুখে মেনে নিয়েছেন। নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য কিংবা জাগতিক লোভ লালসার কাছে নিজেকে বিকিয়ে দেননি। সমাজের প্রতিটি মানুষের পরকালীন মুক্তির কথা ভেবেছেন। সকাল সন্ধ্যা নিয়মিত মাইক হাতে তুলে নিয়েছেন। নামাজ, রোজা, হজ্বসহ ইসলামের পাঁচটি রোকন সম্পর্কে গুরুত্বারোপ করেছেন। যখন যেখানে যে আমলটার সন্ধান পেয়েছেন, মানুষকে বলে বেড়াচ্ছেন। হাতে কলমে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। হারাম হালাল, সুদ ঘুষের নেতিবাচক ভয়ংকর দিক কুরআন-হাদিসের অকাট্য দলিল সমেত জনসম্মুখে তুলে ধরছেন। হাক্কুলাহ ও হাক্কুল ইবাদ নিয়ে মানুষকে বারংবার সতর্ক করে যাচ্ছেন। প্রতিটি জুমা’র খুৎবায় অত্যন্ত সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় বিষয় ভিত্তিক আলোচনা উপস্থাপনা করছেন।
বিভিন্ন মাসলা-মাসায়েল, দোয়া-দুরুদসহ ইসলামের জটিল ও কঠিন বিষয়গুলো সহজভাবে বলে যাচ্ছেন। আশে পাশে কিংবা দূর দূরান্ত থেকে হাজারো মানুষ জড়ো হচ্ছেন, তাঁর জু’মা পূর্ব খুৎবায় নাতিদীর্ঘ সারগর্ভ বয়ান শুনতে। নিজের সময় মেধাকে বিলীন করে যাচ্ছেন মানুষের জন্য। অসম্ভব বিনয়ী সদালাপী মানুষটি পিতার দেখানো পথেই নিরন্তর বিরামহীন হেঁটে চলেছেন। নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত, সেচ্ছাচারী জুলুম নির্যাতনে জর্জরিত, পাপ-পঙ্কিলতা, কদর্যে ও ধর্মীয় গোড়ামীতে ক্ষণে ক্ষণে নিমজ্জিত এ সমাজকে একটু একটু করে টেনে তুলেছিলেন মরহুম মাওলানা কোরবত আহমদ রহ.। এ বেয়াড়া সমাজ ব্যবস্থাকে কালের অতল গহ্বরে তলিয়ে যেতে না দিয়ে মাওলানা আবু তাহের সাহেব স্বীয় প্রচেষ্টায় শক্ত হাতে টেনে তুলেছেন। এ কঠিন কাজটি তিনি অহর্নিশ করে যাচ্ছেন। অন্যায়কে প্রশ্রয় না দিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। একটি আদর্শিক ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে কারও রক্তচক্ষুর কাছে মাথা নত করেননি। যে কোন সমাজে এখন অন্যায় অপরাধ অনেকাংশ বেড়ে গেছে বলে, ওইভাবে হয়ত বিষয়টি অনেকের চোখে পড়ছে না। কিন্তু দেখার মত চোখ থাকলে ঠিকই দেখা যায়। মাওলানা আবু তাহের দা: বা: আমাদের জন্য অমূল্য সম্পদ।
প্রায় সকলের কাছে মাওলানা আবু তাহের দা: বা: একটি গ্রহণযোগ্য নির্ভরতার নাম। শত্রু মিত্রের আলাপ আলোচনা কিংবা তীর্যক সমালোচনা ধৈর্যসহকারে বিনা বাক্যে মেনে সকলকে বুকে টেনে নিয়েছেন। মুচকি হেসে আজও সকলের সাথে কথা বলেন। অসম্ভব বিনয়ী ও ব্যক্তিত্বের অধিকারী মানুষটি ইসলামের বাণী নিত্য মানুষের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন। দ’হাতে মুঠো মুঠো করে মানুষের দ্বারে দ্বারে ফেরি করে বেড়াচ্ছেন দ্বীন-ইসলামের আলোক বহ্নিশিখা। দ্বীনের এই দীপ্তময় আলোক বহ্নি শিখায় উদ্ভাসিত হচ্ছে গোটা সমাজ ও জনপদ।