আহমদ আবদুল্লাহ
হজরত মুসা (আ:) এর সময়কাল। এক ব্যক্তি অন্যজনের কাছে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা ঋণ চাইলেন। কিন্তু সে দিতে অস্বীকৃতি জানালেন। লোকটি নাছোড় বান্দা, বারবার তাগাদা দিচ্ছেন। উপায়ন্তর না পেয়ে ঋণদাতা বললেন, ‘দুজন লোক নিয়ে এসো, তাদের সাক্ষী রেখে তোমাকে স্বর্ণমুদ্রা দিবো। কিন্তু লোকটি বললেন, ‘আমার আর তোমার মাঝে মহান রাব্বুল আলামিন সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট। ঋণদাতা এতে রাজি হয়ে নির্ধারিত সময়ে পরিশোধের শর্তে একহাজার স্বর্ণমুদ্রা ধার দিলেন। কিছুদিন পর ঋণগ্রহীতা নিজ ব্যবসা উদ্দেশ্যে সমুদ্রপথে যাত্রা করলেন। ঠিকঠাক ব্যবসা চলছিলো তার। প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক সব কার্যাদি সুন্দরভাবে আঞ্জাম দিচ্ছিলেন তিনি। যথেষ্ট লাভবানও হলেন। এদিকে ধীরে ধীরে ঋণ পরিশোধের সময় ঘনিয়ে এলো। ঋণগ্রহীতা যানবাহন খুঁজতে ছিলেন, কিন্তু কোথাও কোনো সন্ধান পেলেন না। পেরেশানির মাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে। কি করবে বুঝতে পারছেন না । খানিকটা সময় চিন্তায় ডুবে গেলেন।
দূরে কোথাও একটি কাঠ দেখলেন। দ্রুত কাঠটি নিয়ে একপ্রকার ছিদ্র বানালেন এবং তাতে কর্যদাতার নাম আর একহাজার স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে ছিদ্রটি বন্ধ করলেন। ঋণগ্রহীতা কাঠটি নিয়ে সমুদ্রের তীরে এসে আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি তো জানো, আমি অমুক ব্যক্তি থেকে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা নিয়েছি। সে সাক্ষী চেয়েছিলো। আমি বলেছি, সাক্ষী হিসেবে আমার আল্লাহই যথেষ্ট। এতে সে রাজি হয়ে একহাজার স্বর্ণমুদ্রা আমাকে ধার দেয়। এখন আমি তার প্রাপ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি, কিন্তু কোথাও যানবাহন পাচ্ছি না। তাই আমি এই একহাজার স্বর্ণমুদ্রা তোমার কাছে আমানত রাখছি।’ এরপর কাঠটি সমুদ্রে ভাসিয়ে দিলেন। কিছুসময়ের ভেতর কাঠটি সমুদ্রে ঢেউয়ের তরঙ্গে হারিয়ে গেলো। লোকটি ধীর পায়ে নিজ গন্তব্যে পৌঁছে গেলেন। এদিকে কর্যদাতা নির্ধারিত সময়ে সমুদ্রতীরে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগলেন, ভাবতে ছিলেন, ‘কখন আসবে ঋণগ্রহীতা? কখন পাবো একহাজার স্বর্ণমুদ্রা?’ ঘটণাক্রমে হঠাৎ একটি কাঠের ওপর তার দৃষ্টি আটকে গেলো। কালবিলম্ব না করে দ্রুত কাঠটি বাড়িতে নিয়ে এলেন। কিন্তু যখন কাষ্ঠখ-টি চিরলেন, তখন তা হতে একহাজার স্বর্ণমুদ্রা সঙ্গে পত্রটিও বেরিয়ে এলো। কিছুদিন পর ঋণগ্রহীতা একহাজার স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে পাওনাদারের কাছে হাজির হয়ে বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! আমি তোমার পাওনা নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু এ জাহাজটির পূর্বে আর কোনো জাহাজ পাইনি, তাই নির্ধারিত সময়ে তোমার ঋণ পরিশোধ করতে পারিনি। এর জন্য আমি তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।’ (বোখারি: ২২৯১)