লাগেজ থেকে মালামাল চুরির নতুন পন্থা
রহমান শেলী
অনেকদিন থেকেই এই চক্রের পেছনে লেগে ছিলাম আমরা। অনেকদিন ধরেই এই চক্রটি চালিয়ে যাচ্ছিল তাদের কাজ। অনেকের অনেক অভিযোগ। অনেক মানুষের অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা। অনেক মানুষের প্রশ্নের জবাব দিতে না পারাÑ এইসব ব্যর্থতা নিয়ে আমরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলাম। আগে প্রায়ই আমরা বিমানবন্দরে আগমনী যাত্রীদের লাগেজ কেটে মালামাল হারানোর খবর পেতাম। এই চুরি বন্ধ করার জন্য আমরা বিশেষ পদক্ষেপ নিই। ফলাফল চোর চক্রের কৌশল বদল। আমরা যখন চুরি বন্ধ হওয়ার কারণে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিলাম তখন আমরা এক নতুন ধরনের অভিযোগ পেতে শুরু করি। যে সমস্ত যাত্রী দেশ থেকে বিদেশ যান তাদের থেকে অভিযোগ আসা শুরু হয় মালামাল খোয়া যাওয়ার। বিশেষ করে যে সমস্ত ব্যাগে টাকা বা মূল্যবান সামগ্রী থাকে, সেই সমস্ত ব্যাগকে টার্গেট করা হয়। চুরি করা হয় অভিনব কৌশলে। যে সমস্ত ছোট বিমানে হাতে করে বিমানের পেটে (কার্গো হোল্ড) মালামাল তোলা হয় এই বিমানগুলোকে তারা টার্গেট করে। কারণ, বিমানের পেটের ভেতরে যখন হাতে হাতে মালামাল সাজিয়ে রাখা হয়, সেখানে নজরদারি করা সম্ভব হয় না। সেখানে থাকে না কোনো সিসি ক্যামেরা। এই জায়গায় তারা স্বাধীন।
স্বাধীন হলেও আমাদের চৌকস দল চোখ রাখে সেদিকে। রাত্রি ২ ঘটিকায় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট (গঐ-১৯৬) থেকে বিমানের দুজন লোডার-শামীম হাওলাদার আর লাভলু মিয়াকে আটক করা হয়। তাদের আচার-আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং দেহ তল্লাশি করা হয়। কিন্তু তারা সবকিছু অস্বীকার করে। পরে দেহ তল্লাশি করে প্রথম জনের জুতার সোলের ভেতরে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় ৯০০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত এবং ৪০০০ টাকা এবং দ্বিতীয় জনের কাছে থেকে ৫৪০৮ টাকা পাওয়া যায়। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানায় যাত্রীর ব্যাগ থেকে তারা এই টাকা চুরি করেছে। পরবর্তীতে তাদের স্বীকারোক্তিমতে আরও ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা স্বীকার করে একে অপরের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে এই অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। তাদেরকে আটকের পর বিমানবন্দর থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়।
যাত্রীদের জন্য সতর্কতা: দয়া করে চেক-ইন ব্যাগে টাকা, অলঙ্কার বা মূল্যবান সামগ্রী দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনাদের পথচলা সুন্দর হোক।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও এডিশনাল এসপি
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ, ঢাকা। ডিউটি এএসপি : ০১৭৬৯৬৯০৭৪৫.