যে কারণে মাংস ব্যবসায়ীদের আন্দোলন
রবিউল আলম
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে যুক্ত ১৯৭২ সাল থেকে। মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ও দাবি আদায়ে সক্ষম হওয়ায় মাংস ব্যবসায়ীরা আমাকে নেতৃত্বের আসনে বসিয়েছেন। আমার নেতৃত্বকালীন সময়ে অনেক ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায় হয়েছে, মাংস ব্যবসায়ীরাও শৃঙ্খলিত হয়েছে।
সুদীর্ঘকাল আন্দোলনের পরে ১৯৯৪ সালে মেয়র হানিফ তিনদিন মাংসবিহীন দিবস কালো আইন বাতিল করে মাংস ব্যবসায়ীদের কাছে ইতিহাস হয়ে আছেন। সুস্থ জীবন, সুশৃঙ্খল পথ চলার জন্য গাবতলি গরুর হাটের গরু রাখার স্থান, ব্যবসায়ীদের জন্য বিশ্রামাগার, সমিতির জন্য অফিস নির্মাণ করেছেন। অনেক উদার মনের একজন রাজনৈতিক মানুষ ছিলেন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। তার সহযোগিতায় সমাজে অবহেলিত, অশিক্ষিত, উচ্ছৃঙ্খল মাংস ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক শৃঙ্খলায় এনে বোঝাতে সক্ষম হই জাতির জনককে হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতির মুক্তির আন্দোলন ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে, মাংস ব্যবসায়ী ও জনগণেরও অধিকার আছে।
বিএনপি-জামায়াতের প্রতিহিংসার শিকার মাংস ব্যবসায়ীরা একের পর এক মামলার আসামি হতে থাকে। আজ সেই মাংস ব্যবসায়ীরা জনগণের অধিকার একটু কম মূল্যে যাতে মাংস পেতে ও খেতে পারেন সেই আন্দোলন করার অপরাধে অফিসে তালা মারা হয়েছে, মেয়র হানিফ বিশ্রামাগারে গরুর ভূষি ও ক্যারামবোর্ড খেলা হয়। গরু বাঁধার স্থানে গরু পালনের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে, করপোরেশনের ইজারার শর্ত অমান্য করে শতশত কোটি টাকা লুট হচ্ছে। মাংসের মূল্য বেড়েই চলছে, জনগণ বেশি দামে মাংস ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পশু জবাই হচ্ছে, দেখার কেউই নেই।
মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের আশার বাণী শুনে তা স্থগিত করা হয়েছে। অনেকে মনে করেন, মাংস ব্যবসায়ীরা মাংসের মূল্যবৃদ্ধির জন্য ধর্মঘট করেন, মাংস ব্যবসায়ীরা দাম কমাতে চান এ কথা অনেক জনগণকে বোঝানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। জনগণের অধিকার লুট হচ্ছে, গাবতলি হাটের ইজারাদার, হুন্ডি ব্যবসায়ী, সীমান্ত ও চামড়াশিল্প বন্ধ থাকার মাশুল জনগণ দিচ্ছে। মাংস ব্যবসায়ীদের পকেট কেটে টাকা নিচ্ছে লুটেরারা, ব্যবসায়ীরা জনগণের গলা কেটে টাকা আদায় করছে, এই কথাগুলো সরকার ও জনগণকে বলার জন্য ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও ধর্মঘটের মতো অমানবিক কর্মসূচ দিতে হচ্ছে। জনগণ ও মিডিয়ার বন্ধুদের বলছি, মাংসের দাম বাড়লে ব্যবসায়ীদের লাভ কি? দাম বাড়ার কারণে ক্রেতা কমে যায়, ইতোমধ্যে হাজার হাজার দোকান বন্ধ হয়ে গেছে, দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ব্যবসায়ীদের। মাংস ব্যবসায়ীরা শুধু চেয়েছে কর্পোরেশনের ইজারার শর্তের যথাযথ বাস্তবায়ন। আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন চাওয়া কি অপরাধ?
অনেকে ইতোমধ্যেই পেশা পরিবর্তন করেছেন, অনেক মাংস ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বসে আছেন। ইজারাদারের ভয়ে গাবতলি গরু হাটে যেতে পারছেন না। এখন মাংস ব্যবসায়ীরা চেয়ে আছেন মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ও উত্তরের মেয়র আনিসুল হকের দিকে।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান