দুই ঘণ্টার অভিযান, মেলেনি কিছুই খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে পুলিশের তল্লাশি
কিরণ সেখ ও শেখ রিয়াল : রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কিছু আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দুই ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। তবে অভিযানে পুলিশ কিছু পায়নি। পুলিশের এ অভিযান প্রাপ্তি শূন্য বলে দাবি করেছে বিএনপি।
গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ অভিযান শুরু করে পুলিশ। অভিযানের জিডির কপি দেখান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী- খান সোহেল। জিডিতে সময় হিসাবে গতকাল ১৯ মে সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিট লেখা ছিল। তবে গুলশান ঠিকানা উল্লেখ করা হলেও কোথায় বিএনপির কার্যালয় লেখা ছিল না। জিডিতে লেখা রয়েছে, গুলশান-২ নম্বরের ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়ি ও এর আশপাশের এলাকায় রাষ্ট্রবিরোধী ও আইনশৃঙ্খলাপরিপন্থী, রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বিনষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের স্টিকার ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডে সামগ্রী মজুতের খবর গোপন সূত্রে জানা গেছে। তল্লাশির আগে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ও এর আশপাশের সড়কগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ। অভিযান শেষে সকাল পৌনে ১০টার দিকে সড়কে বসানো ব্যারিকেড তুলে নেয় পুলিশ। প্রায় দুই ঘণ্টা ওই এলাকায় সাধারণ কোনো যানবাহন ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন ডিএমপির গুলশান জোনের উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ, র্যাব ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের ছিলেন। সকাল আটটার দিকে একদল পুলিশ সদস্য খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের মূল ভবনে ঢোকেন। এ সময় অন্তত ২০ জন পুলিশ সদস্য কার্যালয়ের মূল ফটকে অবস্থান নেন।
তল্লাশির পর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। পুলিশের গুলশান থানার পরিদর্শক (এসআই) আজিজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সেই তালিকায় তল্লাশিতে প্রাপ্ত মালামালের পরিমাণ শুন্য বলে উল্লেখ করা হয়। তবে সেখানে তল্লাশির স্থান হিসেবে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের ঠিকানা লেখা ছিল না।
পুলিশের তল্লাশি শেষে কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকেন সাংবাদিকরা। এসময় মূল কলাপসিবল গেটটি খোলা ছিল। কার্যালয়ের কর্মচারীরা জানান, এক তলা ও দোতলার বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি চালানো হয়। এক তলার নয় নম্বর কক্ষটির দরজার লক খুলে তল্লাশি তৎপরতা বেশি ছিল। তবে লক ভাঙা পাওয়া গেলেও কাগজপত্র এলোমেলো ছিল না। কয়েকজন কর্মচারী বলেন, পুলিশ সঙ্গে মিস্ত্রি ছিল। এই মিস্ত্রিদের দিয়েই তালা ভাঙা হয়। আর ফাইলসহ বিভিন্ন কাগজপত্রে ভিডিও ও স্থিরচিত্র ধারণ করেন পুলিশ সদস্যরা।
কার্যালয়ে ঢুকে দেখা যায়, নিচের তলা ও দোতলায় দুটি সিসি ক্যামেরার মুখ ঘুরিয়ে রাখা হয়েছে। দোতলা ও তিন তলায় কাগজপত্র এবং ফাইলপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই কার্যালয়ের দোতলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের কক্ষ। তবে খালেদা জিয়ার কক্ষে ঢোকেনি পুলিশ।
কার্যালয়ে থাকা কর্মচারী নিমাই বলেন, সকাল সাতটায় প্রধান ফটকের তালা ভেঙে পুলিশ কার্যালয়ে প্রবেশ করে। ঢুকেই তারা কার্যালয়ের চারজন কর্মীর মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। যাওয়ার সময় পুলিশ ভাঙা তালাটি নিয়ে যায়।
অভিযানের সময় বিএনপির কোনো নেতা সেখানে ছিলেন না। খবর পেয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী-খান সোহেল আসেন। পরে আসেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, জয়নাল আবেদিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ।
অভিযানের আগে গুলশান থানার ওসি আবু বকর সাংবাদিকদের বলেন, ওয়ারেন্ট অনুযায়ী তল্লাশি শুরু করেছি। কারণ আমাদের কাছে আদালতের নির্দেশনা আছে, এই কার্যালয়ের ভেতরে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কিছু আছে কি না তা খতিয়ে দেখার। অন্যদিকে বিএনপি অভিযোগ করেছে, অজ্ঞাতনামা একটি জিডির ভিত্তিতে বিএনপি চেয়ারপারসনকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করতেই পুলিশ এ অভিযান চালিয়েছে।
অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, দুই দিন আগে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে এক ট্রাক বই আনার খবর পুলিশ পেয়েছে। সেই বইকে ঘিরে তাদের সন্দেহ। এদিকে অভিযান শেষে সকাল সাড়ে ৯টার পর ওসি আবু বকর বলেন, যে তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়, সে রকম কিছু পাওয়া যায়নি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, পুলিশ যাওয়ার সময় বলে গেছে, তল্লাশি অভিযানে প্রাপ্তি শূন্য। পুলিশের এই অভিযানকে পুলিশি হানা আখ্যায়িত করে তার নিন্দা জানান তিনি। রিজভী বলেন, এই হানা সরকারের অগণতান্ত্রিক মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির জিডির পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযান চালানো হয়েছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করতে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, পুলিশ অন্যায়ভাবে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। আমরা পুলিশের অভিযানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবো।
সম্পাদনা : হুমায়ুন কবির খোকন