আজ নড়াইলের লোহাগড়ার ইতনা গণহত্যা দিবস
মো. ইমরান হোসেন, নড়াইল : আজ (২৩ মে) নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামের ৭১’র একটি ভয়াল দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক-হানাদার বাহিনী লোহাগড়া উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ইতনা গ্রামে একের পর এক ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শিশুসহ হত্যা করে হিরু মাষ্টার, সফি উদ্দিন মোল্যা, তবি শেখ, হাদি সিকদার, নালু খাঁসহ ৩৯ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে। আর এ সব নিহতদের লাশ ঘর-বাড়ির জলন্ত আগুনে ফেলে দিয়ে উল্লাস করে পিশাচেরা।
এমন বীভৎস ঘটনা ঘটলেও শহীদদের স্মরণে স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও গন কবর গুলো সংরক্ষন করা হয়নি। সেখানে সরকারি উদ্যোগে কোন স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে ওঠেনি।
মহান মুক্তিযুদ্ধে লোহাগড়া উপজেলার মধুমতি নদী তীরবর্তী পাশাপাশি দুই গ্রাম ইতনা ও চরভাট পাড়া। এই দুই গ্রামে বসেই মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর উপর আক্রমনের নানা পরিকল্পনা করতো। ভৌগলিক ও কৌশল গত কারণে আশ-পাশের বিভিন্ন এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা এই দুই গ্রামে অবস্থান করে পাক-বাহিনীর উপর আক্রমন চালাতেন।
পাক বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান আঁচ করতে পেরে ১৯৭১ সালের ২২শে মে দুপুরে চরভাট পাড়া গ্রামে প্রবেশ করে নিরীহ মানুষজনের ওপর হামলা-নির্যাতন শুরু করে।
এ সময়ে মুক্তিবাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং হানাদার বাহিনীর সঙ্গে শুরু হয় যুদ্ধ। প্রায় দু’ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধে ৪ জন পাক সেনা ও ১৪ মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়। এক পর্যায়ে পাক-সেনার পিছু হটার সময় চরভাট পাড়া গ্রামের অনিল কাপালি নামে একজন সাহসী ব্যক্তি এক পাক-সেনার কাছ থেকে রাইফেল কেড়ে নিয়ে পাশের মধুমতি নদীতে ফেলে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর ভাটিয়াপাড়া ক্যাম্পের পাক হানাদার বাহিনী হিংস্র রুপ ধারণ করে। তারা চরভাট পাড়া গ্রামের অনিল কাপালিকে খুঁজতে থাকে। তখন প্রানের ভয়ে চরভাট পাড়ার মানুষজন জানিয়ে দেয়, অনিল কাপালির বাড়ি মধুমতি নদীর পূর্ব পাড়ের ইতনা গ্রামে।
অনিল কাপালিকে ধরার জন্য পাক বাহিনী গানবোট করে ৭১ সালের ২৩ মে ভোরে ফজরের আজানের সময় ইতনা গ্রামে ইতিহাসের এক জঘন্যতম গণহত্যা চালায়। গণহত্যায় শিশু সহ ৩৯ জন নারী-পুরুষ হত্যার শিকার হয়। ২৩ মে ইতনা গ্রাম শূন্যে পরিণত হয়। নিহতদের কবর দেওয়ার মত কোন লোক ইতনা গ্রামে ছিল না। পরবর্তীতে নিহতদের নিকট আত্মীয়-স্বজনরা ৩৯ জনকে গ্রামেই গণকবর দিয়ে প্রাণভয়ে অন্যত্র পালিয়ে যান। অথচ গণকবর গুলির আজ কোনো অস্তিত্ব নেই।
বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানে না ৭১’র সালের ২৩ মে ইতনার গণহত্যার ইতিহাস। ১৯৯৪ সালের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ২৩ মে‘র বীর শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে ইতনা গণ গ্রস্থাগারের তৎকালীন সাধারন সম্পাদক আতাউর রহমান ফিরোজের উদ্যোগে ইতনা গ্রামের দুটি গুরুত্ব পূর্ণ সড়কের পাশে গণহত্যায় নিহতদের নামের তালিকা টানিয়ে দেওয়া হয়। সেই থেকে প্রতি বছর ২৩ মে ইতনা গণ গ্রš’াগারের উদ্যোগে ইতনা গণহত্যা দিবস পালিত হয়ে আসছে। গণহত্যায় নিহতদের স্বরণে আজ পর্যন্ত সরকারী বা বেসরকারী ভাবে কোন ‘স্মৃতি সৌধ’ নির্মিত হয়নি। ইতনা গণহত্যা এলাকাকে বধ্যভূমি ঘোষণা করে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করতে জোর দাবি করেছেন এলাকাবাসী। সম্পাদনা: মুরাদ হাসান