প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফর বহু পাক্ষিক প্রেক্ষাপটে দ্বিপক্ষীয় কূটনীতির সফলতা
আনোয়ারুল করিম : আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে সৌদি আরব গেলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সফর অন্যতম আন্তর্জাতিক গুরুত্ব পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথোপকথোন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থান বিশ্বনেতাদের কাছে আরো একবার দৃঢ়কণ্ঠে উত্থাপনকে কূটনৈতিকভাবে সফল বলেই মনে করা হচ্ছে।
এ সম্মেলনে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ দমনে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার দফা প্রস্তাব মুসলিম দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম বিদেশ সফরেই তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলাপ এবং বাংলাদেশ সফরে আসতে তার ইতিবাচক মনোভাব বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় কূটনীতির একটি অন্যতম অর্জন বলেও মনে করা হচ্ছে। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং সরকারের ঘনিষ্ঠরা সেভাবেই এই সফরকে মূল্যায়ন করতে শুরু করেছেন।
খুব অল্প সময়ের মধ্যে সৌদি আরবের এই সফরের সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি নেয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত ৯ মে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের বিশেষ আমন্ত্রণপত্র নিয়ে দেশটির তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী ড. আওয়াদ বিন সালেহ ঢাকা আসেন। যদিও এর কয়েকদিন আগে এই বিষয়টি ঢাকায় জানানো হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ‘আরব ইসলামিক-আমেরিকান’ (এআইএ) সম্মেলনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সম্মেলনে অংশ গ্রহণের এই সফরকে বহুপক্ষীয় এই আয়োজনে সীমাবদ্ধ না রেখে এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় উপাদান যুক্ত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ সম্মেলনে অংশ নেবেনÑ তা জানার পর এতে আরো গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের ব্যবস্থাও করা হয়। আর এখানেই অন্যরকম সফলতা পেল বাংলাদেশের কূটনীতি। ট্রাম্পকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় নতুন অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা এবং নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরদারের লক্ষ্যে আয়োজিত এই সম্মেলনে ইসলামী চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই জোরদারের আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার বক্তব্যে একই ধরনের অবস্থানের কথা জানান।
সৌদি আরবের নেতৃত্বে মুসলিম দেশগুলোর জোট নিয়ে অবস্থানের ব্যাপারে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, এই জোটের একটা মিলিটারি সাইড আছে, একটা পলিটিক্যাল সাইড আছে। আমরা প্রাইমারিলি পলিটিক্যাল সাইডে শতভাগ অংশ নিচ্ছি। সামরিক দিকে কোন পরিস্থিতিতে আমরা সৈন্য পাঠাব তা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগেই ব্যাখ্যা করেছেন। সেটা হল, দুই পবিত্র স্থান (মক্কা ও মদিনা) আক্রান্ত হলে তা রক্ষার জন্য আমরা সৈন্য পাঠাব।
সৌদি বাদশাহ ও দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে চার দিনের সরকারি সফরে গত শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী রিয়াদ পৌঁছান। শেখ হাসিনা গ্লোবাল সেন্টার ফর কমব্যাটিং এক্সট্রিমিস্ট থট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও যোগ দেন। সফরকালে শেখ হাসিনা মক্কায় হারাম শরিফে পবিত্র ওমরা পালন করেন এবং মদিনায় হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করেন। সফর শেষে গতকাল স্থানীয় সময় বিকেল সোয়া ৪টায় জেদ্দার কিং আব্দুল আজিজ বিমানবন্দর থেকে দেশের পথে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী